শুক্রবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
মার্কিন নির্বাচন

১২৫ বছরের রীতি ভেঙে হিলারিকে সমর্থন রিপাবলিকান পত্রিকার

প্রতিদিন ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকানপন্থি পত্রিকা ‘আরিজোনা রিপাবলিক’। পত্রিকাটি সৃষ্টি ১৮৯০ সালে। এই সোয়াশ বছরে পত্রিকাটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সমর্থন দিয়ে এসেছে রিপাবলিকান দলের প্রার্থীকে। নির্বাচনের সময় পত্রিকাটি মূলত রিপাবলিকান দলের ‘অপিনিয়ন লিডার’ হিসেবে কাজ করত। কিন্তু এবার প্রথমবার সেই রীতি থেকে বের হয়ে আসছে। পত্রিকাটির সম্পাদকীয় বোর্ড লিখেছে, ‘১৮৯০ সালে পত্রিকাটি সৃষ্টির পর থেকে রিপাবলিকান দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে আসছে। তবে এবারের ২০১৬ সালের রিপাবলিকান প্রার্থী ডেনাল্ড ট্রাম্প রক্ষণশীল নন এবং তিনি একজন অযোগ্য।’। তাই তারা প্রথমবারের মতো ডেমোক্রেট দলের প্রার্থীকে (হিলারি ক্লিনটন) সমর্থন দিচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, হিলারিকে সমর্থন দিয়েছেন মার্কিন সিনেটের ৫ দফা ক্ষমতায় থাকা রিপাবলিকান সাবেক সিনেটর জন ওয়ার্নার। এবারের নির্বাচনে বেশির ভাগ মার্কিন গণমাধ্যম হিলারিকে সমর্থন দিচ্ছে। এর মধ্যে গত সোমবার দুই প্রার্থীর মধ্যে প্রথম বিতর্কের পর ট্রাম্প গণমাধ্যমগুলোর বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে সমালোচনা করেছেন। লন্ডনের দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট অনলাইন জানিয়েছে, আরিজোনা রিপাবলিকই শুধু দীর্ঘদিনের প্রথা ভেঙেছে তা নয়। একই কাজ করেছে দ্য সিনসিনাতি এনকুইরার, ডালাস মর্নিং নিউজসহ আরও বিভিন্ন মিডিয়া। এসব পত্রপত্রিকা সব সময় রিপাবলিকানদের সমর্থন দিয়েছে। কিন্তু ডালাস মর্নিং নিউজ তার ভোটারদের প্রতি আরিজোনা রিপাবলিকের মতোই আহ্বান জানিয়েছে। তারা আহ্বান জানিয়েছে, ডেমোক্র্যাট প্রার্থীকে ভোট দিন। দ্য সিনসিনাতি ইনকুইরারও তার ১০০ বছরের মধ্যে এ প্রথা ভেঙেছে। একই কাজ করেছে দ্য নিউ হ্যাম্পশায়ার ইউনিয়ন লিডার। এ ছাড়া দ্য নিউইয়র্ক টাইমস আগ থেকেই হিলারিকে সমর্থন দিয়ে আসছে। পাঁচবারের রিপাবলিকান সিনেটের এক সময় বড় মাপের দলীয় নেতা ছিলেন। হলিউডের কিংবদন্তি অভিনেত্রী এলিজাবেথ টেলরের সাবেক স্বামীও তিনি। তিনিও দলের ঐক্যের বাইরে চলে এসেছেন। বুধবার তিনি সারা জীবনের রাজনৈতিক আদর্শ ভেঙে ট্রাম্পকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। সমর্থন দিয়েছেন হিলারি ক্লিনটনকে। বুধবার তিনি ভার্জিনিয়ার উত্তরাঞ্চলে ডেমোক্রেট দল থেকে ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী টিম কেইনের এক র‌্যালিতে অংশ নিয়েছিলেন। সেখানেই তিনি হিলারির প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেন। গত ২৬ সেপ্টেম্বরের আগে দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু প্রথম বিতর্কে হিলারির কাছে যুক্তিতর্ক ও প্রজ্ঞায় হেরে গেছেন ট্রাম্প। এরপর থেকেই হিলারির জনপ্রিয়তার পারদ তরতর করে বেড়ে চলছে। আরিজোনা রিপাবলিক তার সম্পাদকীয়তে লিখেছে, দেশের ভোটাররা কী চায় তা ট্রাম্পের চেয়ে ভালো বোঝেন হিলারি। যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে তাতে ক্ষমতায় ধীরস্থির ব্যক্তি, ঠাণ্ডা মাথার মানুষ ও কর্ম সম্পাদনের আগে তা নিয়ে সতর্কতার সঙ্গে চিন্তা করার সক্ষমতা আছে এমন ব্যক্তির প্রয়োজন। এসবই বোঝেন হিলারি ক্লিনটন। ট্রাম্প এসবের ধারেকাছেও নেই। ট্রাম্প তো মার্কিন জনগণকে তার আয়কর রিটার্নই দেখতেই দেননি। ওদিকে মার্কিন নৌ বাহিনীর সাবেক সেক্রেটারি ছিলেন জন ওয়ার্নার (৮৯)। তিনি বলেছেন, মার্কিন সেনাবাহিনীর প্রতি অশ্রদ্ধা দেখিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি কমান্ডার ইন চিফ হওয়ার মোটেও যোগ্য নন। তিনি মনে করেন, সেনাবাহিনীর প্রতি তার চেয়ে বেশি শ্রদ্ধাশীল হিলারি। এমন সমর্থন পেয়ে হিলারি ক্লিনটন নিজেকে গর্বিত মনে করছেন। তিনি একটি বিবৃতিও দিয়েছেন। তাতে বলেছেন, আমি জন ওয়ার্নারের সমর্থন পেয়ে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। কয়েক দশকের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এমন একজন আমার ওপর আস্থা রেখেছেন, যেন আমি দায়িত্বশীল একজন কমান্ডার ইন চিফ হই। ওদিকে দ্য ডালাস মর্নিং নিউজ তার সম্পাদকীয়তে হিলারিকে সমর্থন দিয়ে বলেছে, গত ৭৫ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে কোনো ডেমোক্রেট প্রার্থীকে সমর্থন দেয়নি এই পত্রিকাটি। এর মধ্যে প্রায় ২০টি নির্বাচন হয়ে গেছে। তবে এবার এই বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসছে পত্রিকাটি।

সর্বশেষ খবর