বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সদ্য প্রয়াত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আ স ম হান্নান শাহর (অব.) গতকাল রাজধানীতে চার দফা নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ১০টায় মহাখালী নিউ ডিওএইচএস জামে মসজিদে প্রথম, সাড়ে ১১টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায়, বাদ জোহর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এবং সর্বশেষ জানাজা হয় মহাখালীর গাউসুল আজম জামে মসজিদে। এরপর তার লাশ সিএমএইচের হিমঘরে রাখা হয়। হান্নান শাহর প্রেস সেক্রেটারি জাকির হোসেন মিজান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘আজ (শুক্রবার) বাদ জুমা গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঘাগুটিয়ায় হান্নান শাহকে তার বাবা-মায়ের কবরের পাশে সমাহিত করা হবে। দাফনের আগে আরও তিন-চারটি জানাজা হওয়ার কথা রয়েছে।’ গতকাল দুপুর সোয়া ১২টায় প্রয়াত নেতার কফিন নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এসে পৌঁছায়। কার্যালয়ের সামনের সড়কে অস্থায়ীভাবে কালো কাপড় দিয়ে তৈরি মঞ্চে তার লাশ রাখা হয়। এরপর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ নেতারা কফিন দলীয় পতাকায় ঢেকে দিয়ে তার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানান। সকাল থেকে নয়াপল্টনের কার্যালয়ে তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে কোরআনখানি অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষে সিনিয়র নেতারা প্রথম পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। আজ সকালে সড়কপথে হান্নান শাহর লাশ নিজ জেলায় নিয়ে যাওয়া হবে। সকাল ৯টায় জয়দেবপুর রাজবাড়ি মাঠে, সাড়ে ১০টায় কাপাসিয়া পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এবং বাদ জুমা নিজ এলাকা চালাবাজার উচ্চবিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে বাবা-মার কবরের পাশেই তাকে সমাহিত করা হবে। হান্নান শাহর ছোট ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নান জানান, শনিবার বাদ মাগরিব মহাখালী ডিওএইচএস জামে মসজিদে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। বাদ জোহর অনুষ্ঠিত জানাজায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, তরিকুল ইসলাম, এম কে আনোয়ার, মির্জা আব্বাস, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ড. আবদুল মঈন খান, আবদুল্লাহ আল নোমান, মোহাম্মদ শাহজাহান, গিয়াস কাদের চৌধুরী, আহমেদ আজম খান, শওকত মাহমুদ, খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, আবদুস সালাম, গোলাম আকবর খোন্দকার, হাবিবুর রহমান হাবিব, আবদুল হালিম, কবির মুরাদ, ফজলুর রহমান, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলনসহ বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মী-সমর্থক ও সাধারণ মানুষ অংশ নেন। এ ছাড়াও স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরীও এ সময় দাঁড়িয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। প্রিয় নেতাকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানাতে ঢাকার বাইরে থেকেও নেতা-কর্মীরা জানাজায় অংশ নেন। জানাজার আগে মরহুমের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি শুধু একজন সৈনিক নন, গণতন্ত্রেরও একজন সৈনিক ছিলেন। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তার ভূমিকা চিরকাল স্মরণীয় থাকবে। আগামীকাল শনিবার বাদ আসর নয়াপল্টনের কার্যালয়ে হান্নান শাহর স্মরণে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল হবে বলে জানান তিনি। হান্নান শাহর মৃত্যুতে মঙ্গলবার থেকে চার দিনের শোক পালন করছে বিএনপি। ডিওএইচএসের জানাজায় বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, এলডিপির সভাপতি কর্নেল অলি আহমদ (অব.), মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন (অব.), সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, এয়ার ভাইস মার্শাল আলতাফ হোসেন চৌধুরী (অব.), ড. ওসমান ফারুকসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা অংশ নেন। এরপর মরহুমের কফিন নেওয়া হয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায়। সেখানে জাতীয় সংসদের পক্ষে চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের পক্ষে নুরুল ইসলাম ও বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে দলের ভাইস চেয়ারম্যান মেজর হাফিজউদ্দিন আহমদ (অব.), আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, এলডিপির পক্ষে আবদুল করিম আব্বাসী ও শাহাদাত হোসেন সেলিম আলাদাভাবে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় মরহুমের নামাজে জানাজায় বিএনপির লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমান (অব.), চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, জয়নুল আবদিন ফারুক, জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, সাবেক হুইপ শহীদুল হক জামাল, সাবেক এমপি আশরাফউদ্দিন নিজান, জয়নাল আবেদীন (ভিপি জয়নাল), নাজিম উদ্দিন আলম, আবদুল মোমিন তালুকদার খোকা, সেলিম রেজা হাবিবসহ বিভিন্ন দলের বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্য এবং সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।