আজ মহাসপ্তমী। শারদীয় দুর্গোৎসবের দ্বিতীয় দিন। ষষ্ঠী তিথিতে বেলতলায় দেবীর ঘুম ভাঙানোর বন্দনায় গতকাল শুরু হয়েছে বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। আনন্দময়ী দেবী দুর্গার আগমনী গানে এখন চারদিক মুখরিত। গতকাল দেবী দুর্গা মহিষাসুর বধে খড়গ-কৃপাণ, চক্র-গদা, তীর-ধনুক আর ত্রিশুল হাতে হাজারো মণ্ডপে অধিষ্ঠিত হলেন। সকালে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, রামকৃষ্ণ মিশন, সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির, ঢাকেশ্বরী মন্দির, শাঁখারী বাজার, লক্ষ্মীবাজারে দেখা গেছে উৎসবের আমেজ। মহাষ্টমীর দিনে কেবল রাজধানীর গোপীবাগে রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ পূজামণ্ডপে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বিশাল আয়োজনে এবারও উদযাপন হচ্ছে দুর্গাপূজা। বসুন্ধরা সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে বৃহৎ ও মনোমুগ্ধকর আয়োজন সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। গতকাল বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার পূজামণ্ডপে গিয়ে দেখা যায়, প্রবেশের মুখেই কপার রঙে তৈরি বিশাল এক মঞ্চে দেবী দুর্গার মুখের আদল। বর্ণিল সাজসজ্জায় দুর্গা অসুরকে বধ করছেন। তার পাশেই আছে অন্য দেব-দেবী। মঞ্চের আশপাশে আগত দর্শনার্থীদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পূজা শুরুর দিনেই শত শত ভক্ত, দর্শনার্থীদের ভিড়। এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি অন্য ধর্মের মানুষেরাও এসেছেন। দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এমন আয়োজন খুবই আনন্দময়। বসুন্ধরা ডি-ব্লকের শেষ প্রান্তে তৈরি করা সোনারঙা বিশাল গেট দর্শনার্থীদের স্বাগত জানাবে। এ ফটক পেরিয়ে পূজামণ্ডপে যেতেই পথের দুই পাশে বসানো হয়েছে ফুলেল নকশার স্থাপনা। পূজামণ্ডপের ভিতরে প্রবেশ করতেই অপূর্ব মঞ্চ আর আশপাশে বসানো হয়েছে কৃত্রিম লেক। সন্ধ্যার পরে আলোকসজ্জায় পুরো মণ্ডপ আলোকিত হয়ে যায়। মহাসপ্তমীতে আজ ত্রিনয়নী দেবীকে চক্ষুদান ও মণ্ডপে অধিষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আড়ম্বরপূর্ণভাবে চলবে পূজা। পূজা উদযাপনের পুরোহিত সঞ্জয় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, মানুষের দুঃখ, কষ্ট মোচন করতে দেবীর আশীর্বাদ কামনা করে আজ (গতকাল) পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। বসুন্ধরার মধ্যে এই আয়োজন খুবই সুন্দর। এখানে সব শ্রেণি, ধর্মের মানুষের যেন এক মেলবন্ধন। বসুন্ধরা সার্বজনীন পূজা কমিটির সহ-সভাপতি পবিত্র সরকার বলেন, কয়েক বছর ধরে এই এলাকায় পূজা উদযাপিত হচ্ছে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বসবাসকারী ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন এলাকার দর্শনার্থী-ভক্তরা এখানে আসেন। এ বছরও হাজার হাজার লোক আসবে। মণ্ডপের নিরাপত্তার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বসুন্ধরার নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মীরা সার্বক্ষণিকভাবে সহায়তা করছেন। এ বছর ঢাকা মহানগরীতে ২২৯টিসহ সারা দেশে ২৯ হাজার ৩৯৫টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গামণ্ডপে চলবে ভক্তিমূলক সংগীতানুষ্ঠান, মহাপ্রসাদ বিতরণ, সন্ধ্যায় আরতি প্রতিযোগিতা। রাজধানীতে বিজয়া দশমীর দিন ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গন থেকে বিজয়ার শোভাযাত্রা বের হবে। বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে সার্বজনীন দুর্গোৎসব। বিজয়া দশমী উপলক্ষে ১১ অক্টোবর সরকারি ছুটি। গতকাল সকালে সারা দেশে মণ্ডপে মণ্ডপে হয়েছে বোধন বা দেবীর ঘুম ভাঙানোর বন্দনা পূজা। ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পুরোহিত রঞ্জিত চক্রবর্তী বলেন, শাস্ত্র বলছে, সপ্তমী, অর্থাৎ দেবীর আগমনের দিন শনি এবং ফেরার দিন মঙ্গলবার হওয়ায় এবার তার আসা-যাওয়া দুটোই হবে ঘোড়ায় চেপে। এর ফলে সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংসারিক ক্ষেত্রে ঘটবে অস্থিরতা। রাজনৈতিক উত্থান-পতন, সামাজিক স্তরে বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা, গৃহযুদ্ধ, দুর্ঘটনা, অপমৃত্যু বাড়বে। তিনি বলেন, এবার আমরা আশঙ্কা করছি ভূমিকম্পের। তবে আমরা প্রার্থনা করছি, মা দুর্গা যেন সব প্রকোপ থেকে আমাদের বসুন্ধরাকে রক্ষা করেন।
রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশনে আজ সপ্তমীর দিন সকালে নয় ধরনের উদ্ভিদ দিয়ে দেবীর প্রতিকৃতি করে স্নান করানো হবে। যাকে নবদুর্গা বা কলাবউ স্নানও বলে। পৃথিবীর মঙ্গল ও পবিত্রতা কামনায় তা করা হয়ে থাকে।
গতকাল দুপুরে ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গনে দুস্থদের মাঝে বস্ত্র বিতরণ করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি ডি এন চ্যাটার্জি, নির্মল কুমার চ্যাটার্জি, সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার রায়সহ বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও সার্বজনীন পূজা কমিটির অন্যান্যরা। বিকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদসহ পুলিশ ও র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শারদীয় শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।