শিরোনাম
শনিবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ঐশীর ফাঁসি নিয়ে হাইকোর্টে আপিল শুনানির অপেক্ষায়

আহমেদ আল আমীন

ঐশীর ফাঁসি নিয়ে হাইকোর্টে আপিল শুনানির অপেক্ষায়

বাবা-মা হত্যাকাণ্ডের আসামি পুলিশ কর্মকর্তার একমাত্র কন্যা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ঐশী রহমানের আপিল এবং এই মামলার ডেথ রেফারেন্স এখন হাইকোর্টে শুনানির অপেক্ষায়। এ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানির জন্য সাড়ে সাতশ’ পৃষ্ঠার পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতির অনুমোদন পেলে মামলাটি শুনানির জন্য বেঞ্চে পাঠানো হবে।

হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখার সুপারিনটেনডেন্ট অশোক কুমার পাল বলেন, ‘মামলাটি অনুমোদনের জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে গেছে। প্রধান বিচারপতির অনুমোদন পেলে কোর্ট নির্ধারণের পর মামলাটি শুনানির জন্য বেঞ্চে যাবে।’ ঐশীর আইনজীবী মাহবুব হাসান রানা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আপিলে মূলত ঐশীর বয়সের বিষয়টাকেই গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা হবে। আমরা বিচারিক আদালতে ঐশীর জন্মনিবন্ধন সনদকে ডকুমেন্ট হিসেবে তুলে ধরেছি। সেখানে তার জন্মতারিখ ১৭ আগস্ট ১৯৯৬ সাল। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ তার জন্মতারিখ উল্লেখ করেছে ১৯৯৪ সালের ১৭ আগস্ট। আসলে এটি ঐশীর বাবা-মায়ের বিয়ের তারিখ। অর্থাৎ জন্মনিবন্ধন পত্রের ডকুমেন্ট গ্রহণ করলে ঐশী অপ্রাপ্তবয়স্ক।’ তিনি বলেন, ‘ঐশীর ডিএনএ টেস্ট সঠিক হয়নি। যেভাবে ডিএনএ টেস্ট করা হয়েছে সেভাবে ডকুমেন্টসও নেই। যারা ডিএনএ টেস্ট করেছেন, মামলায় তাদের সাক্ষী করা হয়নি। আমরা বলেছি, ঐশী শিশু। রাষ্ট্রপক্ষ বলেছে প্রাপ্তবয়স্ক। আদালত বলেছে সে কিশোরী। কিন্তু কিশোরী বলতে আইনে বয়সের কোনো সংজ্ঞা নেই। এসব বিষয়ই আমরা আপিলে যুক্তি হিসেবে তুলে ধরেছি। এসব বিষয় আদালত আমলে নিলে ঐশী ন্যায়বিচার পাবেন বলে আমরা আশা করছি।’ পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানকে হত্যার দায়ে এই দম্পতির একমাত্র কন্যা ঐশী রহমানকে গত বছরের ১২ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ড দেয় ঢাকার তিন নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। এ ছাড়া ঐশীকে আশ্রয় দেওয়ায় তার বন্ধু মিজানুর রহমানকে দুই বছরের কারাদণ্ড ও অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলার অন্য আসামি আসাদুজ্জামান জনিকে খালাস দেয় আদালত। রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ঐশী পরিকল্পিতভাবে একাই ওই হত্যাকাণ্ড ঘটান এবং মামলার আলামত নষ্ট করার চেষ্টা করেন। খুনের সময় তিনি সুস্থ, স্বাভাবিক ছিলেন। আসামিপক্ষ তাকে অপ্রাপ্তবয়স্ক বললেও তা প্রমাণ করতে পারেনি। রায়ের বিরুদ্ধে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্টে ঐশী আপিল করেন। এ ছাড়া মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হিসেবেও মামলাটি হাইকোর্টে আসে। বিচারিক আদালতে কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড হলে দণ্ড কার্যকরে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে, যা ‘ডেথ রেফারেন্স’ মামলা হিসেবে পরিচিত। এসব মামলার পেপারবুকে এজাহার, অভিযোগপত্র, জব্দ তালিকা, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন, সাক্ষীদের জবানবন্দি, জেরার বিবরণ এবং নিম্ন আদালতের রায় পর্যায়ক্রমে সাজানো থাকে। পেপারবুক প্রস্তুতের পর নির্ধারিত দিনে মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন ও আসামিদের আপিল (যদি করে) শুনানি শুরু হয়। সাধারণত ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি একসঙ্গে হয়। রাজধানীর মালিবাগের চামেলীবাগে একটি বাসায় সপরিবারে থাকতেন পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (পলিটিক্যাল শাখা) ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান। ২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট ওই বাসা থেকে স্ত্রী স্বপ্না রহমানসহ তার ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর পরদিন ঐশী গৃহকর্মী সুমীকে নিয়ে রমনা থানায় আত্মসমর্পণ করেন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত মাহফুজুর রহমানের ভাই মশিউর রহমান ওই দিনই পল্টন থানায় হত্যা মামলা করেন। ২৪ আগস্ট ঐশী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তবে পরে তিনি ওই জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করেন। গত বছর ৯ মার্চ ঐশী ও তার দুই বন্ধুর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগপত্র এবং নিহতদের বাসার শিশু গৃহকর্মী সুমীর বিরুদ্ধে শিশু আইনে পৃথক অভিযোগপত্র দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। ওই বছরের ৬ মে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত প্রথমে ঐশীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে। পরে মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। ট্রাইব্যুনাল ৩০ নভেম্বর আবারও অভিযোগ গঠন করে। যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে রায়ের দিন ধার্য করে আদালত। ঐশী আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন আদালতে।

সর্বশেষ খবর