সোমবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

পার্বত্যাঞ্চলে জুমের বাম্পার ফলন

রাঙামাটি প্রতিনিধি

পার্বত্যাঞ্চলে জুমের বাম্পার ফলন

পার্বত্যাঞ্চলে এ বছর জুমের বাম্পার ফলন হয়েছে। আর ফলানো ফসল ঘরে তুলতে পেরে জুমিয়া নারী-পুরুষের মুখে ফুটেছে হাসি। তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের জুম খেতে সবেমাত্র শুরু হয়েছে পাকা ধান কাটা উৎসব। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী উত্ফুল্ল মনে ব্যস্ত জুমের পাকা ধান কাটতে। জুমিয়াদের ঘরে উঠছে জুমের সেই সোনালি ফসল। একই সঙ্গে ধুম পড়েছে মারফা, বেগুন, ধানি মরিচ, ঢেঁড়শ, কাঁকরোল, কুমড়াসহ বিভিন্ন ফসল তোলার কাজ।

পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী চাষ হচ্ছে জুম চাষ অর্থাৎ পাহাড়ের ঢালে বিশেষ ধরনের চাষাবাদ। জুমিয়ারা পাহাড়ের ঢালে বিশেষ পদ্ধতির এই আদি জুম চাষ করে থাকে। পার্বত্যাঞ্চলের পাহাড়ি মানুষগুলোর জীবিকার আদিম ও প্রধান উৎস জুম চাষ। বাংলাদেশের শুধু তিন পার্বত্য জেলায় এ জুম চাষ করা হয়। প্রতি বছর কত একর জমিতে জুম চাষ হয়, তার সঠিক তথ্য জানাতে পারেনি কৃষি বিভাগ। রাঙামাটি কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জুমিয়ারা পৌষ-মাঘ মাসে পাহাড়ের ঢালে জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করে রোদে শুকানোর পর ফাল্গুন-চৈত্র মাসে আগুনে পুড়িয়ে জুম চাষের উপযোগী করে তোলে। এরপর বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে পোড়া জুমের মাটিতে সুঁচালো দা দিয়ে গর্ত খুঁড়ে একসঙ্গে ধান, মারফা, মিষ্টি কুমড়া, তুলা, তিল, ভুট্টাসহ বিভিন্ন রকম বীজ বপন করে থাকে। আর এসব জুমের ধান আষাঢ়-শ্রাবণ মাসেই পেকে থাকে। তারপর শুরু হয় জুমের ফসল  তোলার কাজ। সে সময় মারফা, কাঁচামরিচ, চীনা, ভুট্টা পাওয়া যায়। ধান পাকে ভাদ্র-আশ্বিন মাসে। সব শেষে কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে তোলা হবে তুলা, তিল ও যব। রাঙামাটির সাপছড়ি কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী শান্তিময় চাকমা জানান, পাহাড়ে জুম চাষিরা সাধারণত তারা গেলং, বাধিয়া, কবরক, ছুরি বিভিন্ন জাতের ধান চাষ করে থাকে। তা ছাড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জুম চাষ পদ্ধতিতে কিছু আধুনিক ধানের চাষ প্রচলন করেছে। বিশেষ করে আধুনিক বৃধান-২৪, ২৬, ২৭ এবং বৃধান-৫৫ জুম চাষের পর জমিতে ফলন ভালো হয়েছে। স্থানীয় জাতের ধানের চেয়ে আধুনিক ধানের চাষের ওপর আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। জুম চাষিরা জানান, জুমে বীজ বপনের ৫ মাস পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের পর ফসল পাওয়া যায়। গত কয়েক বছর ধরে পাহাড়ে বন্যা এবং ইঁদুরের উপদ্রবে জুমের পাকা ফসল ঘরে তুলতে পারেনি জুমিয়ারা। ফলে অভাব-অনটনে কেটেছিল সাম্প্রতিক বছরগুলো। এ মৌসুমে উপযুক্ত জলবায়ু ও বৃষ্টিপাতের কারণে এবং ইঁদুরের উৎপাত কমে যাওয়ায় বাম্পার ফলন হয়েছে। জুমের সোনালি ফসল ঘরে তুলতে পারায় জুম চাষিরা ফিরে পেয়েছে মুখের হাসি। চোখেমুখে ফুটে উঠেছে আশার আলো। তাই কেউ কেউ ঘরে নবান্ন উৎসবের আয়োজনও করে থাকে। রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক রমণী কান্তি চাকমা জানান, এ বছর রাঙামাটি জেলায় ৬ হাজার ৬০ হেক্টর জমিতে জুম চাষ করা হয়েছে। সুষম সার প্রয়োগের পাশাপাশি ফসলের পরিচর্যার কারণে ফলন ভালো হয়। তবে জুমের ফসল তোলার সময় বৃষ্টির কারণে কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছে।

সর্বশেষ খবর