শিরোনাম
রবিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

অনিয়ম-দুর্নীতি ঠেকাতে বিশেষ থোক বাতিল

নিজামুল হক বিপুল

বিশেষ থোক বরাদ্দের অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং অর্থের অপচয় ঠেকাতে বরাদ্দই বাতিল করে দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের অধীন স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে এই বিশেষ থোক বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছিল অনগ্রসর জনপদ ও চলমান প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য। ছিল মন্ত্রীর বিশেষ কোটা থেকেও বরাদ্দ। বছরের পর বছর ধরে এই থোক বরাদ্দ দেওয়া হলেও বাস্তবে এর ব্যবহার চোখে পড়ত না খুব একটা। বরং সরকারি অর্থের অপচয়ই হতো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। এ অবস্থায় চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে উপজেলা, জেলা, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনে কোনো নতুন প্রকল্প চালু করা হয়নি। বিশেষ বরাদ্দের ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়ম দূর করতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিভাগটির অধীন উপজেলা, জেলা, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনগুলোয় এত দিন চলমান প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য এবং অনগ্রসর জনপদের জন্য বিশেষ থোক বরাদ্দ চালু ছিল। কিন্তু এ দুই প্রকল্পে দেওয়া বরাদ্দের একটা বড় অংশই সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না বলে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ আছে। বিশেষ করে চলমান প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে দেওয়া বরাদ্দের প্রায় পুরোটাই প্রকল্প বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্টদের পকেটে চলে যাওয়ার অভিযোগ পুরনো। একইভাবে উপজেলা পর্যায়ে অনগ্রসর উপজেলার জন্য দেওয়া বিশেষ থোক বরাদ্দের অর্থের বড় অংশ কোনো কাজ ছাড়াই সংশ্লিষ্টদের পকেটে চলে যেত। উপজেলা পরিষদ উন্নয়ন তহবিল ব্যবহার নির্দেশিকা থেকে জানা গেছে, দেশের যেসব উপজেলা দারিদ্র্যপীড়িত ও অনগ্রসর এবং যেসব উপজেলা পরিষদের রাজস্ব আয় কম সেসব উপজেলা পরিষদের অনুকূলে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রীর অভিপ্রায় অনুযায়ী বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির উন্নয়ন সহায়তা থোক বরাদ্দ থেকে ২৫ শতাংশ অর্থ বণ্টন করা যাবে। একইভাবে চলমান প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও মন্ত্রীর অভিপ্রায় অনুযায়ী বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির উন্নয়ন সহায়তা থোক বরাদ্দ থেকে ৫ শতাংশ অর্থ চলমান প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া যাবে বলে নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়েছে। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে এই নির্দেশিকা অনুযায়ী বিশেষ থোক বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছিল। এবারই প্রথম এই বরাদ্দ বাতিল করল স্থানীয় সরকার বিভাগ।

 সূত্র জানায়, এ দুই খাতে দেওয়া বরাদ্দের অর্থ লুটপাটের বিষয়টি মন্ত্রণালয় দীর্ঘদিন ধরে অবগত। কিন্তু কখনই এ বরাদ্দ বাতিলের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ বিষয়টি পর্যালোচনা করে এ দুই খাতে বিশেষ থোক বরাদ্দ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। তবে চলতি অর্থবছর থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগ চলমান প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য এবং অনগ্রসর জনপদের জন্য বিশেষ থোক বরাদ্দ বাতিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও এ বরাদ্দ অন্য দুটি খাতে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বলে জানা গেছে। উপজেলা পর্যায়ে যে দুটি নতুন খাতে বরাদ্দ দেওয়া হবে সেগুলো হচ্ছে— কমপ্লেক্স ভবনাদি নির্মাণ/পুনর্নির্মাণ, বিদ্যমান ভবন সম্প্রসারণ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং উপজেলা পরিষদের আওতায় ৫০০ আসনবিশিষ্ট অডিটরিয়াম কাম মাল্টিপারপাস হল নির্মাণ প্রকল্প। একইভাবে পার্বত্য তিন জেলা বাদে দেশের বাকি ৬১টি জেলা পরিষদের অনুকূলে যে বিশেষ থোক বরাদ্দ দেওয়া হতো, সেটিও বাতিল করে নতুন তিনটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে, প্রতি জেলায় জেলাপর্যায়ে এক হাজার আসনবিশিষ্ট অডিটরিয়াম কাম মাল্টিপারপাস হল নির্মাণ, জাতীয় মহাসড়কের পাশে জেলা পরিষদের মাধ্যমে বাস, ট্রাকস্ট্যান্ড ও বিশ্রামাগার নির্মাণ এবং অপ্রত্যাশিত খাত। অপ্রত্যাশিত খাতের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা। জেলা পরিষদ থেকে বাদ দেওয়া খাতগুলো হচ্ছে— মন্ত্রীর ইচ্ছায় দেওয়া বিশেষ বরাদ্দ, চলমান প্রকল্পের জন্য বিশেষ থোক বরাদ্দ এবং অনগ্রসর খাত। এ ছাড়া উপজেলা ও জেলা পরিষদের মতো সব কটি সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা থেকেও বিশেষ থোক বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে। তবে স্থানীয় সরকারের এ দুই স্তরে নতুন কোনো প্রকল্প সংযুক্ত করা হয়নি।

সর্বশেষ খবর