সোমবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

চিকিৎসা পান মাত্র এক তৃতীয়াংশ রোগী

স্তন ক্যান্সার

জিন্নাতুন নূর

বাংলাদেশে প্রতি বছর নতুন করে প্রায় ১৫ হাজার নারীর স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর এদের মধ্যে ৭ হাজার নারী এ রোগের কারণে মৃত্যুবরণ করছেন। ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার-এর প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে এ তথ্য। কিন্তু আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, এ রোগে আক্রান্তদের মধ্যে মাত্র ৫ হাজার নারী চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। বাকি ১০ হাজার নারীর মধ্যে অনেকেরই এ রোগ শনাক্ত হয়নি, কেউ সামাজিকতার কারণে বিষয়টি চেপে যাচ্ছেন, শহরকেন্দ্রিক চিকিৎসাব্যবস্থার কারণে এবং আর্থিকভাবে ব্যয়বহুল হওয়ায়ও অনেকে চিকিৎসায় অনাগ্রহী। তারা যখন একেবারে রোগের শেষ পর্যায়ে চিকিৎসা করান, তখন আর বেঁচে ফেরার সম্ভাবনা থাকে না। স্তন ক্যান্সার  বিষয়ে কাজ করেন এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এমনটা জানা গেছে। ১০ অক্টোবর বিশ্ব ব্রেস্ট ক্যান্সার সচেতনতা দিবস উদ্যাপিত হয়। আর এ উপলক্ষে অক্টোবর মাসজুড়ে পালিত হয় ব্রেস্ট ক্যান্সার সচেতনতামূলক নানা কর্মসূচি। সংশ্লিষ্টরা বলেন, স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তদের মধ্যে সামর্থ্যবানরা দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছেন। কিন্তু ঝুঁকিতে আছেন বাকি ১০ হাজার রোগী। এদের অনেকের ক্যান্সার শনাক্তকরণ হচ্ছে না, আবার কেউ সামাজিকতা ও আর্থিক কারণে চিকিৎসা করাচ্ছেন না। তারা আরও বলেন, নগরকেন্দ্রিক চিকিৎসাব্যবস্থার কারণে ঢাকার বাইরের রোগীদের পক্ষে আত্মীয় নিয়ে শহরে এসে চিকিৎসা করানো বেশ ব্যয়বহুল। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে এ নিয়ে পর্যাপ্ত চিকিৎসা-সুবিধা না থাকায় রোগীদের ঢাকায় এসে চিকিৎসা করাতে হয়। কিন্তু সেটিও রোগের শেষ পর্যায়ে, অর্থাৎ যখন ঘা দেখা দেয় তখন তারা চিকিৎসা করাতে আসেন। এর আগে নয়। আর এ অবস্থায় তাদের বাঁচানো সম্ভব হয় না। সাধারণত রোগীদের ক্যান্সার শনাক্তকরণের পর ৭৫ শতাংশেরই মৃত্যু হয়। এদের মধ্যে অনেকেই চিকিৎসার জন্য অর্থনৈতিক বিপর্যয়েও পড়েন। তবে জনসংখ্যা অনুপাতে চিকিৎসা দিতে হলে কমিউনিটি হাসপাতাল এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ে এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। সংশ্লিষ্টরা বলেন, সরকার শুধু এর চিকিৎসার জন্য কয়েকটি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানকে বিরাট অঙ্কের অনুদান দিয়ে যাচ্ছে। আর সেই প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যয়বহুল যন্ত্রপাতি ক্রয় ও চিকিৎসকদের বেতন দেওয়ার জন্য ওই অর্থ ব্যয় করছে। কিন্তু সরকারের বরাদ্দকৃত অর্থের অন্তত ১০ শতাংশ যদি এ প্রতিষ্ঠানগুলো ক্যান্সার রোগী শনাক্তকরণে ব্যয় করত, তবে পরিস্থিতির বেশ উন্নতি হতো। বিশেষজ্ঞরা জানান, মূলত বিশ্বায়ন ও নগরায়ণের কারণে মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এসেছে। এখন কর্মজীবী মায়েরা বাচ্চাকে বুকের দুধ কম খাওয়ান, দেরিতে সন্তান নেন, ফাস্টফুড খান, অনেকে ধূমপান ও মদ্যপান করেন। আর এগুলো ব্রেস্ট ক্যান্সারের জন্য দায়ী। দেশে ক্যান্সার নিয়ে কাজ করে এমন ১৯টি সংগঠনের জোট ‘ব্রেস্ট ক্যান্সার অ্যাওয়ারনেস ফোরাম’-এর প্রধান সমন্বয়ক ও জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তদের চিকিৎসা ঢাকা ও শহরকেন্দ্রিক হওয়ায় এর চিকিৎসা করানোর বিষয়টি অনেকের কাছে অর্থনৈতিকভাবে কষ্টসাধ্য। ঢাকার বাইরের অনেক রোগী এজন্য চিকিৎসায় অনাগ্রহী। তারা রোগের শেষ পর্যায়ে এসে চিকিৎসা করান। এই চিকিৎসকের মতে, স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত মোট রোগীর ৫০ শতাংশ এই ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতন নন। একেবারে শেষ পর্যায়ে তাদের ক্যান্সার শনাক্ত হয়।

সর্বশেষ খবর