সোমবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

মামলার অগ্রগতি নেই হয়নি চার্জশিট

নিজস্ব প্রতিবেদক

মামলার অগ্রগতি নেই হয়নি চার্জশিট

জাগৃতির প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা ও শুদ্ধস্বরের প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুল হত্যাচেষ্টা মামলার এক বছর আজ। পুলিশ চাঞ্চল্যকর ওই দুটি ঘটনার তদন্তে অনেক অগ্রগতির কথা বললেও এক বছরেও চার্জশিট দিতে পারেনি। ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটে তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকে দীপনকে নৃশংসভাবে খুন করে দুর্বৃত্তরা। ওই দিন সকালে মোহাম্মদপুরে শুদ্ধস্বরের প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুলকে হত্যার চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। পুলিশ দাবি করছে, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম—এবিটির সদস্যরাই খুন করেছিলেন দীপনকে। চাঞ্চল্যকর ওই ঘটনায় গ্রেফতার পাঁচজনের মধ্যে সিয়াম ও শামীম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

নিহত দীপনের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, দীপনের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা না হলে, এ ধরনের হত্যার ঘটনা ঘটতেই থাকবে। দেশের মুক্তচিন্তার মানুষদের নিরাপত্তার স্বার্থেই দীপনের হত্যাকারীদের বিচার হওয়া উচিত। তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ড. অভিজিৎ রায়ের একাধিক বই প্রকাশিত হয়েছিল দীপনের মালিকানাধীন জাগৃতি প্রকাশনী থেকে। সে কারণে অভিজিতের খুনি চক্র তাকেও হত্যা করে। টুটুল ও তার দুই বন্ধুকে হত্যাচেষ্টাকারীরাও একই চক্রের সদস্য। গত ২৩ আগস্ট টঙ্গী থেকে মইনুল ইসলাম শামীম ওরফে সিফাত ওরফে ইমরান ও মো. আবদুস সবুর ওরফে আবদুস সামাদ ওরফে সুজন ওরফে রাজু ওরফে সাদ নামের এবিটির দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেন গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা। পরে তারা দুজনই আদালতে দীপন হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তি ও পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সিফাত জানান, দীপন হত্যা ও টুটুল হত্যাচেষ্টার ঘটনায় তিনি ‘মাসুল’ (হত্যাকাণ্ডের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অভিজিৎ হত্যাসহ আরও কয়েকটি হত্যাকাণ্ড সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন সিফাত। সাদ তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে টুটুলকে হত্যাচেষ্টা ও দীপন হত্যার পরিকল্পনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। পরিকল্পনার তথ্য জানালেও তিনি নিজে দুটি ঘটনায় উপস্থিত ছিলেন না বলে দাবি করেন। সিফাত ও সাদ ছাড়াও এ দুটি ঘটনায় এবিটির মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত ওরফে সামির ওরফে ইমরান ও মো. রশিদ উন নবী ভুঁইয়া টিপুকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। গত ১৯ জুন বন্দুকযুদ্ধে মারা যান শরিফুল ওরফে সাকিব ওরফে শরিফ ওরফে সালেহ ওরফে আরিফ ওরফে হাদী-১ ওরফে মুকুল রানা। পুলিশের দাবি, মুকুল এসব ঘটনার মূল হোতা। আদালতে দাখিল করা সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদনে মামলার রহস্য উদ্ঘাটিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, ‘তদন্তে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। দুটি মামলায় দুজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া অন্যদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে। শিগগিরই দুটি মামলার তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।’ প্রসঙ্গত, গত মে মাসে ব্লগার, লেখক ও প্রকাশক হত্যাকারীদের ধরিয়ে দিতে প্রত্যেকের জন্য ২ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত পুরস্কার ঘোষণা করে ঢাকা মহানগর পুলিশ। দীপন হত্যা ও টুটুল হত্যাচেষ্টায় গ্রেফতার ও বন্দুকযুদ্ধে নিহত দুজনের বিরুদ্ধেও পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। বন্দুকযুদ্ধে নিহত শরিফকে ধরিয়ে দিতে ৫ লাখ ও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়া সাদকে ধরিয়ে দিতে ২ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল।

সর্বশেষ খবর