বুধবার, ২ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বদলে যাবে বিমানবন্দর

কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতের কাজ চলছে খানজাহান আলীর পরামর্শক নিয়োগের প্রস্তুতি

নিজামুল হক বিপুল

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য জাপানি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দিয়েছে সরকার। একইভাবে বাগেরহাটে খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্পের জন্য পরামর্শক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। অন্যদিকে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপ দিতে রানওয়ে নির্মাণের কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। এই বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর জন্য টার্মিনাল ভবন নির্মাণে প্রস্তুতকৃত চূড়ান্ত ড্রইং ও ডিজাইন এবং ব্যয় প্রাক্কলন প্রস্তুত করা হয়েছে। বর্তমানে ফিজিবিলিটি স্টাডি কাজ ও ডিপিপির প্রস্তুতি কার্যক্রম চলছে।

এর পাশাপাশি সৈয়দপুর ও বরিশাল বিমানবন্দরের উন্নয়নে পরামর্শক নিয়োগ করারও প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

দেশের অব্যবহৃত অপর বিমানবন্দরগুলো চালুর বিষয়ে বিভিন্ন সময় উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত এগুলোর বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই।

মন্ত্রণালয় ও বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের লক্ষ্যে এ প্রকল্পের বিস্তারিত সমীক্ষা সম্পাদনের জন্য জাপানি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিপ্পন কোই কোম্পানি লিমিটেডকে নিয়োগ দিয়ে কার্যাদেশ প্রদান করেছে বেবিচক। গত ৩১ আগস্ট নিপ্পনের এই কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। এরপর গত ২৯ সেপ্টেম্বর নিপ্পনের সঙ্গে বেবিচকের চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। ১ অক্টোবর থেকে প্রতিষ্ঠানটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের লক্ষ্যে সমীক্ষার কাজ শুরু করেছে। এই সমীক্ষার জন্য ১৩৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন সম্প্রতি জাপান সফরকালে নিপ্পনের সঙ্গে চুক্তির বিষয়টি সেই দেশের মন্ত্রীকে জানিয়েছেন। বিমান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পর্যটনের বিকাশের বিষয়টি মাথায় রেখে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে দেশের চতুর্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার জন্য কাজ চলছে। দীর্ঘদিন নানা জটিলতায় আটকে থাকা এই বিমানবন্দরে রানওয়ে নির্মাণের কাজ চলছে এখন দ্রুতগতিতে। নতুন রানওয়ে হবে প্রায় ৯ হাজার ফুট দীর্ঘ। এর বাইরে এই বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর জন্য টার্মিনাল ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে এই প্রকল্পের ড্রইং-ডিজাইন এবং ব্যয় প্রাক্কলন প্রস্তুত করা হয়েছে। বর্তমানে এর ফিজিবিলিটি স্টাডি এবং ডিপিপি প্রস্তুতের কাজও চলছে।  

কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যে যে পুনর্বাসন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছিল সেগুলোর বাস্তবায়ন কাজও চলছে বলে জানা গেছে। এরই অংশ হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য বাঁকখালী নদীর ওপর এলজিইডির মাধ্যমে সেতু নির্মাণ এবং ভূমি উন্নয়ন ও বাঁধ নির্মাণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে কাজ চলছে। বাগেরহাটের খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের জন্য আহ্বান করা দরপত্রে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠান থেকে সাতটি প্রতিষ্ঠানকে সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত করেছে বেবিচক। সম্প্রতি এসব প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল (আরএফপি) বা দরপত্র আহ্বান করেছে বেবিচক। মন্ত্রণালয় ও বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৫ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) সভায় খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্পের জন্য ৫৪৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০১৮ সালের জুন মাসের মধ্যেই এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত পরামর্শক নিয়োগ ও বিমানবন্দরের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজই শেষ করা যায়নি। বর্তমানে এই প্রকল্পের জন্য ৫৩৬ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। এদিকে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্পে এখন ফাস্ট ট্র্যাক বা অগ্রাধিকার প্রকল্পে অন্তর্ভুক্তের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে। প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত একনেকের সভায় বাগেরহাটের ফয়লায় মংলা-খুলনা মহাসড়কের পাশে হযরত খানজাহান আলী বিমানবন্দর প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এর পর এ প্রকল্পের জন্য ৯৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে গত বছরের ৫ মে একনেক সভায় খানজাহান আলী বিমানবন্দরের সংশোধিত প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। যাতে জমির পরিমাণ ৫৩৬ একর বাড়ানো হয়। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সংশোধিত প্রকল্প অনুযায়ী জমি অধিগ্রহণের জন্য বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের কাছে এরই মধ্যে ৪৩ কোটি টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। নতুন করে অধিগ্রহণ করা জমির উন্নয়ন ও মাটি ভরাটে ব্যয় হবে ৩০ কোটি ৩২ লাখ টাকা। জেলা প্রশাসনও এরই মধ্যে দাগ নম্বর চিহ্নিত করে অধিগ্রহণযোগ্য জমি সমীক্ষার কাজ শেষ করেছে। সৈয়দপুর ও বরিশাল অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর উন্নয়নেও প্রকল্প নিয়েছে বেবিচক। ইতিমধ্যে এই দুই বিমানবন্দরের উন্নয়নের জন্য বিস্তারিত সমীক্ষা, ড্রইং-ডিজাইন, মাস্টারপ্ল্যান ও ব্যয় প্রক্কলন নির্ধারণের জন্য পরামর্শক নিয়োগের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। শিগগিরই এই দুই বিমানবন্দরে উন্নয়নে বিস্তারিত সমীক্ষা, ড্রইং-ডিজাইনের জন্য পরামর্শক নিয়োগ চূড়ান্ত হবে বলে জানা গেছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর