বুধবার, ২ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

ছাত্রলীগ নেতার থাপ্পড়ে কান ফাটল পুলিশের

শরীয়তপুর প্রতিনিধি

শরীয়তপুরে ছাত্রলীগের এক নেতার থাপ্পড়ে সেলিম মাতব্বর নামে এক পুলিশ সদস্যের কানের পর্দা ফেটে গেছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। গতকাল বেলা ১২টার দিকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। ওই ছাত্রলীগ নেতার নাম আক্তার হোসেন। তিনি শরীয়তপুর সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি।

শরীয়তপুর সদর থানা সূত্র জানায়, শরীয়তপুর সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আক্তার হোসেন গতকাল শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা দেবাশীষ সাহার কক্ষে যান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন শরীয়তপুর সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন। তারা চিকিৎসা কর্মকর্তার কাছে হোসেন খন্দকার নামে এক রোগীর আঘাতের চিকিৎসাজনিত সনদপত্র দাবি করেন। রোগী ছাড়া সনদপত্র দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন চিকিৎসা কর্মকর্তা। তখন আক্তার ওই চিকিৎসা কর্মকর্তাকে গালাগাল দিয়ে অপদস্ত করতে থাকেন। সেখানে তখন চিকিৎসা নিতে উপস্থিত ছিলেন পুলিশের নায়েক সেলিম মাতব্বর। চিকিৎসককে কেন এভাবে অপদস্ত করা হচ্ছে তা জানতে চান। তখন আক্তার উত্তেজিত হয়ে ওই পুলিশ সদস্যকে মারধর করতে থাকেন। তার থাপ্পড়ে পুলিশ সদস্যের ডান কানের পর্দা ফেটে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যায়। পুলিশ সদস্য সেলিম মাতব্বরকে চিকিৎসা দেন নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ ইমরান খান। তিনি বলেন, আঘাতের কারণে ওই ব্যক্তির কানের পর্দা ফেটে গেছে। তার কান দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তার আঘাতটি গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। খবর পেয়ে ওই পুলিশ সদস্যকে দেখতে হাসপাতালে আসেন জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হোসাইন খান, পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন, সহকারী পুলিশ সুপার তানভীর হাসান। তারা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মশিউর রহমান ও কর্মরত চিকিৎসকদের সঙ্গে সভা করেন। ছাত্রলীগ নেতা আক্তার হোসেনকে আটকের জন্য পুলিশ তার মামা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন হাওলাদারের বাসভবন ও ক্লিনিকে অভিযান চালায়। এ সময় আক্তারের কক্ষ থেকে একটি চাপাতি উদ্ধার করে পুলিশ। দুপুরে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন হাওলাদারের মালিকানাধীন হাওলাদার ক্লিনিকে অভিযান চালায়  জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

 নীতিমালা ও আইন লঙ্ঘন করে ক্লিনিক চালানোর অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত মালামাল বাজেয়াপ্ত করে ক্লিনিকটি সিলগালা করে দেয়। এ সময় ক্লিনিকে ভর্তি থাকা রোগীদের সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। শরীয়তপুরের  সিভিল সার্জন মশিউর রহমান বলেন, আক্তার হোসেন প্রায়ই হাসপাতালে চিকিৎসকদের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে চিকিৎসা সনদ নিতে চান।

কেউ দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার ওপর চড়াও হন। এ কারণে তিনি চিকিৎসক দেবাশীষ সাহাকে অপদস্ত করেন। এর প্রতিবাদ করলে একজন পুলিশ সদস্যকে থাপ্পড় দিয়ে কানের পর্দা ফাটিয়ে দেন। এ ঘটনায় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। শরীয়তপুর সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন হাওলাদার বলেন, ঘটনার সময় আমি ডাক্তারের কক্ষে অবস্থান করছিলাম। হৈচৈ শুনে এসে দেখি আক্তার আর এক ব্যক্তি হাতাহাতি করছে। আমি তাদের নিবৃত্ত করি। ওই ব্যক্তি নিজেকে পুলিশ পরিচয় দেওয়ার পর আমি আক্তারকে মারধর করে তাড়িয়ে দিই এবং পুলিশ সদস্যের কাছে ক্ষমা চাই। এরপরও পুলিশ আমার বাড়ি তল্লাশি করেছে। ক্লিনিক বন্ধ করে দিয়েছে।

ঘটনার পর থেকে আক্তার পলাতক। তার মুঠোফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। শরীয়তপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খলিলুর রহমান বলেন, চিকিৎসককে অপদস্ত ও পুলিশ সদস্যকে মারধরের ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

সর্বশেষ খবর