বৃহস্পতিবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

রংপুরের রাজনীতি এখন

দল গোছাতে ব্যস্ত আওয়ামী লীগ জাপা, নিষ্ক্রিয় বিএনপি-জামায়াত

শাহজাদা মিয়া আজাদ, রংপুর

রংপুরের রাজনীতি এখন

টার্গেট আগামী নির্বাচন এবং দলীয় ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা। সে লক্ষ্যেই নতুন করে দল গোছানোর দিকে মনোযোগ দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এরশাদের জাতীয় পার্টিও বসে নেই। তারাও ভবিষ্যৎ চিন্তায় দল গোছানোর দিকে মনোযোগ দিয়েছে। এর বিপরীতে মামলা, গ্রেফতার আতঙ্ক এবং পুলিশি বাধায় নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে বিএনপি ও তাদের মিত্র জামায়াত। পাশাপাশি হতাশায় ধুঁকে চলেছে বাম দলগুলো। রংপুরের রাজনীতিতে এখন এমন বাস্তবতাই বিরাজ করছে।

দল গোছাচ্ছে আওয়ামী লীগ : গা-ছাড়া ভাব কাটিয়ে দল গোছানোর দিকে মনোযোগ দিয়েছে আওয়ামী লীগ। গত মাসে কেন্দ্রীয় সম্মেলনে নেতা-কর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পর রংপুর আওয়ামী লীগ মাঠে নেমে পড়েছে। সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি আগামী সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া এবং আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত জোটের যে কোনো ধরনের অরাজকতা কঠোরভাবে প্রতিহত করতে এ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বলে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন। দলের একটি অংশ যারা জেলা ও মহানগর কমিটির নেতৃত্বে আছেন, তারা মনে করেছিলেন, রংপুর নিয়ে তাদের বিশেষ কিছু ভাবার বা করার নেই। কারণ এটি দলের নেত্রী খোদ প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা। উপরন্তু তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় আছেন। এলাকার উন্নয়নের বিষয়টি তারাই ভাববেন। অবশ্য দলটির অন্য একটি অংশের অভিযোগ ছিল, এমন গা-ছাড়া ভাবে চললে তা ভবিষ্যতের জন্য মঙ্গলজনক হবে না। তার প্রমাণও মিলেছে গত সিটি করপোরেশন ও উপজেলা নির্বাচনে। সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়তে পারেননি। আর ৮টি উপজেলার মধ্যে পাঁচটিতেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী হেরেছেন। এর মধ্যে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংসদীয় আসন (পরে উপনির্বাচনে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি হন) পীরগঞ্জে এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক টিপু মুনশী এমপির নির্বাচনী আসনের দুই উপজেলা পীরগাছা এবং কাউনিয়ায় বিএনপির প্রার্থী এবং কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ আশিকুর রহমান এমপির নির্বাচনী আসন মিঠাপুকুর উপজেলায় জামায়াতের প্রার্থী জিতেছেন।

ঘুরে দাঁড়াচ্ছে জাতীয় পার্টি : এক সময় রংপুর মানেই ছিল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, জাতীয় পার্টি এবং লাঙ্গল। ১৯৯০ সালে কারাগারে যাওয়ার পর এরশাদের প্রতি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন রংপুরের মানুষ। রংপুরে এরশাদের আগমন মানেই ছিল হুলুস্থূল ব্যাপার। সাধারণ ভোটারদের কাছে ‘এরশাদ আবেগ’ এতটাই মজবুত হয় যে, প্রার্থীর যোগ্যতা বা অযোগ্যতা বিবেচ্য বিষয় ছিল না। প্রার্থীর প্রতীক ‘লাঙ্গল’ হলেই হলো। জয় তার সুনিশ্চিত। এ অবস্থায় ‘জাপার দুর্গে’ পরিণত হয় রংপুর। সব স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয়ী হন। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে যোগ দেওয়ার পর থেকে এই দুর্গে ধস নামতে শুরু করে। সম্প্রতি শেষ হওয়া পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ঘটে দলটির ভরাডুবি। জেলার ৭৬টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান প্রার্থী জিতেছেন মাত্র ৭টিতে। পৌরসভা নির্বাচনে তিনটি পৌরসভার মধ্যে হারাগাছ ও পীরগঞ্জ পৌরসভায় মেয়র পদে প্রার্থীই দিতে পারেনি দলটি। বদরগঞ্জ পৌরসভায় জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মাত্র ১৭১ ভোট পেয়েছেন। উপজেলা নির্বাচনে ৮ উপজেলার একটিতেও দলটির প্রার্থীরা জয় পাননি। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন মাত্র একটিতে। এমনকি সদর উপজেলায় স্বয়ং এরশাদ প্রচারে নেমেও কোনো সুবিধা করতে পারেননি। এ ছাড়া ষষ্ঠ থেকে অষ্টম সংসদ নির্বাচনে রংপুরের ছয়টি আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা নির্বাচিত হলেও নবম সংসদ নির্বাচনে তিনটি আসন চলে যায় আওয়ামী লীগের ঘরে।

নিষ্ক্রিয় বিএনপি-জামায়াত : পুলিশের দায়ের করা একাধিক মামলায় নিস্তেজ হয়ে পড়েছে বিএনপি ও জামায়াত। দল গোছানো তো দূরের কথা গ্রেফতার আতঙ্কে প্রকাশ্যেই আসতে পারছেন না নেতারা। মাঠে দেখা মিলছে না কর্মীদেরও। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত জোটের অবরোধ চলার সময় বিএনপিকে মাঠে নামতে দেয়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। উল্টো নাশকতার একাধিক মামলা দিয়ে জেলা ও মহানগর বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বাড়িছাড়া করেছে পুলিশ। গ্রেফতার এড়াতে এখনো প্রকাশ্যে আসতে পারছেন না এসব নেতা। নেতা-কর্মীরা কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করলে পুলিশি বাধায় তা পণ্ড হয়ে যাচ্ছে।  কর্মসূচি পালনের আগেই দলীয় কার্যালয় ঘিরে রাখছে পুলিশ। ফলে দলীয় কার্যালয়ে নেতা-কর্মীদের পা পড়ে না। এ অবস্থায় মাঝে-মধ্যে মহানগর বিএনপির সভাপতি মোজাফফর হোসেনকে দলীয় কার্যালয় খুলে একা বসে থাকতে দেখা যায়। মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক শহীদুল ইসলাম মিজু বলেন, ‘তিনটি মামলায় জামিনে থাকার পরও পুলিশ বাড়িতে রেড দেয়। গ্রেফতারের ভয়ে নিজের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানেও বসতে পারছি না।’

অস্তিত্ব সংকটে বাম দল : অস্তিত্ব সংকটের মধ্যে রয়েছে রংপুরের বাম দলগুলো। যদিও বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে রাজনীতির মাঠে দেখা দিচ্ছে কেবল বাসদের দুই গ্রুপ। সরকারের অংশীদার জাসদও মাঝে-মধ্যে কর্মসূচি পালন করে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। এ ছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টি, গণতন্ত্রী পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টিসহ অন্য কোনো বাম দলের দৃশ্যমান কর্মসূচি নেই। রাজনীতির মাঠে নেতাদের দেখাও মেলে না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর