বৃহস্পতিবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

চাল নিয়ে চালবাজি খাদ্য কর্মকর্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

খুলনায় সরকারিভাবে চাল-গম সংগ্রহ ও সংরক্ষণ, ওএমএস এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বরাদ্দের চাল নিয়ে খোদ খাদ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারাই চালবাজিতে জড়িত। কয়েকটি সংস্থার তদন্তে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে খুলনার কেন্দ্রীয় খাদ্য গুদাম (সিএসডি) ব্যবস্থাপক আবদুল মান্নান তালুকদার, গুদাম ইনচার্জ ও খাদ্য পরিদর্শক ইলিয়াস হোসেন এবং গুদাম ইনচার্জ নুরুন্নবীর অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য ফাঁস হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে চাল পাচারের অভিযোগে থানায় মামলাও হয়েছে।

জানা গেছে, খুলনায় খাদ্য অধিদফতরের অসাধু কর্মকর্তা, মিলার, ডিলার ও গুদাম হ্যান্ডলিং শ্রমিকনেতাদের একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন এ অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। সম্প্রতি সরকারি গুদাম থেকে পাচারের সময় খোলাবাজারে বিক্রির (ওএমএস) এক ট্রাক চাল আটক হওয়ার পর তদন্ত শুরু করেছে খাদ্য অধিদফতর। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুলনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ দফতরে গেল তিন বছর বোরো চাল সংগ্রহে কয়েক কোটি টাকার উেকাচ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। প্রতি কেজি বাবদ ২ থেকে আড়াই টাকা উেকাচের বিনিময়ে মিলারদের কাছ থেকে নিম্নমানের চাল সংগ্রহ করা হয়। ২০১৪ সালে মিলারদের কাছ থেকে আদায় করা উেকাচের অর্থ ভাগ-বাটোয়ারার তালিকায় এসি ফুড, ডিসি ফুড, ছাত্রনেতা ও দফতরের কর্মকর্তাদের নাম দেখতে পাওয়া যায়। ওই ঘটনায় দফতরের উচ্চমান সহকারী হাছিবুর রহমানকে শাস্তিমূলক বদলি করা হলেও তিনি পুনরায় স্বস্থানে ফিরেছেন। জানা গেছে, সরকারি চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য প্রতি মাসে ১৫ কেজি চাল ও ৫ কেজি আটা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও গোপনে তা বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, ডিও লেটার নিতে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দফতরের একাধিক বিভাগে ডিলারদের অর্থ দিতে হয়। এর মধ্যে ইউনিয়ন, লেবার বকশিশ, মসজিদ ফান্ড, ব্রিজ স্কেল ও ট্রাক ইউনিয়নের চাঁদা বাবদ ১ হাজার এবং চাহিদাপত্র দেওয়া, ডেলিভারি অর্ডার ও নগর খাদ্য পরিদর্শক বাবদ ৫০০ টাকা করে দিতে হয়। এসব দফতরে টাকা দিতে না পারলে ডিলারদের চাল দিতে গড়িমসি করা হয়। জেলা দুর্নীতি দমন অফিসে দেওয়া অভিযোগে জানা গেছে, ময়দা মিল মালিকদের কাছ থেকে গম বরাদ্দের সময় টনপ্রতি উেকাচ আদায় এক প্রকার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। গমের চাহিদা ঢাকায় পাঠানোর জন্য টনপ্রতি ২২০ ও খুলনার জন্য ১২০ টাকা রেট করে দেওয়া হয়েছে। প্রতি মাসে প্রায় ৩ হাজার ৭০০ টন গম আসে খুলনায়। সে হিসাবে প্রতি মাসে গম বাবদ উেকাচ আদায় হয় ৮ লাখ টাকা। জানা গেছে, ১ ও ২ নভেম্বর র‌্যাবের অভিযানে খুলনার কেন্দ্রীয় খাদ্য গুদাম (সিএসডি) থেকে পাচারের সময় ১৩ হাজার ৬৯০ কেজি চালসহ একটি ট্রাক আটক হয়। র‌্যাব-৬-এর স্পেশাল কোম্পানির পরিদর্শক (শহর ও যান) খোন্দকার হোসেন আহম্মদ বাদী হয়ে খাদ্য গুদামের ব্যবস্থাপক, গুদামরক্ষক, হ্যান্ডলিং শ্রমিকনেতাসহ আটজনের বিরুদ্ধে খালিশপুর থানায় চাল পাচারের অভিযোগে মামলা করেন। এর আগে ২৫ অক্টোবর আবু নাসের হাসপাতালের সামনে থেকে পাচারের সময় আরও ১৬ বস্তা চাল আটক করা হয়েছিল। এ চালও ছিল ওএমএস কর্মসূচির।

 জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মাহবুবুর রহমান খান বলেন, নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত করতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আতিকুল ইসলাম ও মহাপরিচালকের দফতরের উপপরিচালক মামুন আল মোর্শেদের নেতৃত্বে একটি টিম খুলনায় এসেছে। তারা অভিযুক্ত খাদ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলবেন। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের নেতৃত্বে চার সদস্যের আরেকটি টিমও একই সঙ্গে তদন্ত করছে বলে জানা গেছে। র‌্যাব-৬-এর স্পেশাল কোম্পানি কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. এনায়েত হোসেন মান্নান জানান, সিএসডি গুদাম থেকে চাল পাচারে জড়িত অসাধু কর্মকর্তা ও হ্যান্ডলিং শ্রমিকনেতাদের সিন্ডিকেটের ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন খুলনা জেলা প্রশাসকের দফতরে জমা দেওয়া হয়েছে। অভিযানকালে আটকদের স্বীকারোক্তি ও পাচারের সঙ্গে জড়িতদের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। তিনি বলেন, সিন্ডিকেটটি গুদামে খাওয়ার অনুপযোগী, নিম্নমান এবং পচা চাল রেখে ভালো চাল বেশি দামে বিক্রির উদ্দেশ্যে পাচার করে থাকে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর