শনিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
হুজির ‘জঙ্গিদের’ বিরুদ্ধে তিন মামলা

পরিবারের দাবি তারা জঙ্গি নন, অপহূত হয়েছিলেন

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে হরকাতুল জিহাদ (হুজি)’র জঙ্গি আস্তানা আবিষ্কারের ঘটনায় পৃথক তিন মামলা দায়ের করেছে র‍্যাব। বৃহস্পতিবার রাতে র‍্যাব-৭ উপ-সহকারী পরিচালক গোলাম রাব্বানি বাদী হয়ে মামলা তিনটি দায়ের করেন। তিন মামলায় গ্রেফতার হওয়া পাঁচ হুজি নেতা তাজুল ইসলাম, নাজিম উদ্দিন, হাফেজ মো. আবু জর গিফারী, নুরে আলম ও শেখ ইফতিশাম আহমেদ শামীকে আসামি করা হয়। র‍্যাব-৭ অধিনায়ক লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, গ্রেফতার হওয়া পাঁচ হুজি সদস্য বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। তাদের দেয়া ওইসব তথ্য নিয়ে কাজ করছে র‍্যাব। আকবর শাহ থানার ওসি সদীপ কুমার দাশ বলেন, র‍্যাব কর্মকর্তা বাদী হয়ে সন্ত্রাস দমন আইন, অস্ত্র এবং বিস্ফোরক আইনে মামলা তিনটি দায়ের করেছে। প্রত্যেক মামলায় গ্রেফতার হওয়া পাঁচ জনকে আসামি করা হয়। ওসি জানান, গ্রেফতার হওয়া প্রত্যেক জঙ্গিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিন করে রিমান্ড চাওয়া হবে। কাল (আজ) তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে আবেদন করা হবে। প্রসঙ্গত গত বৃহস্পতিবার নগরীর আকবরশাহ থানা এলাকায় জঙ্গি আস্তানা আবিষ্কার করে র‍্যাব। ওই আস্তানা থেকে দুটি পিস্তল ও বিপুল পরিমাণ বিভিন্ন বিস্ফোরক, গ্রেনেড, সাতটি ম্যাগজিন, গুলি, জিহাদি বই ও সিডি জব্দ করা হয়। অভিযানে হুজির পাঁচ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়।

আট মাস আগে অপহূত নুরের বাড়ি নীলফামারী : নীলফামারী প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রামে গ্রেফতার ৫ জনের মধ্যে একজন নীলফামারীর নিখোঁজ হওয়া নুরে আলম (২৩)। তিনি গত প্রায় আট মাস আগে নিজ বাড়ি হতে অপহরণ হয়েছিল বলে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের ওই অভিযানের খবর  টেলিভিশনে ছবিসহ দেখতে পেয়ে নুরে আলমের পরিবার তাকে শনাক্ত করেন। পরিবারের লোকজন সাংবাদিকদের বলেন, নুরে আলমকে চলতি বছরের ১১ এপ্রিল রাতে প্রশাসনের লোক পরিচয়ে নীলফামারী শহরের উকিলের মোড় মহল্লার নিজ বাড়ি হতে অপহরণ করা হয়েছিল। এ ব্যাপারে নুরে আলমের মা নুর নাহার বেগম ১২ এপ্রিল নীলফামারী থানায় একটি জিডি (নম্বর-৫৯৫) এবং ১৪ এপ্রিল নীলফামারী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অজ্ঞাত আসামি করে একটি অপহরণের পিটিশন মামলা (নম্বর-৩০/১৬) দায়ের করেছিলেন। পরবর্তীতে আদালতের ওই পিটিশনটি নীলফামারী থানায় অগ্রগতি করলে সেটি ১৯ এপ্রিল নীলফামারী থানায় অপহরণ মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয় (নম্বর-১১)। পরিবারের পক্ষ হতে আরও জানানো হয়, নুরে আলম নীলফামারী সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। পাশাপাশি তিনি বাসভবনের সামনে মোবাইলের ফ্ল্যাক্সিলোড, বিকাশ এজেন্ট ও  ইলেক্ট্রনিক্সের ব্যবসা পরিচালনা করতেন।

রংপুরের শামী অপহরণ হয়েছিল জুলাইয়ে : নিজস্ব প্রতিবেদক রংপুর জানান, গ্রেফতার শেখ ইফতিশাম আহমেদ শামী (২৩) কে আট মাস আগে রাজশাহী নগরীর মোন্নাফের মোড় এলাকার নিলাভা ছাত্রাবাস থেকে ধরে নেওয়া হয়েছিল বলে দাবি করেছে তার পরিবার। তিনি রংপুর নগরীর ধাপ ইঞ্জিনিয়ারপাড়া এলাকার পেট্রোলপাম্প ব্যবসায়ী শেখ ইফতেখার আহমেদ এনামের ছেলে ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি তৃতীয়বর্ষের ছাত্র। শেখ ইফতেখার আহমেদ এনাম সাংবাদিকদের বলেন, চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল ভোরে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে ইফতিশামকে নিলাভা ছাত্রাবাস থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরদিন রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় এ ব্যাপারে সাধারণ ডায়েরি (নম্বর-১৬১৬ তাং ৩০-০৪-১৬ইং) করি।

যশোরের নকশা নাজিম অপহূত হন ঢাকা থেকে : নিজস্ব প্রতিবেদক যশোর জানান, চট্টগ্রামে গ্রেফতার নাজিম উদ্দিন (৪২) কে গত ২৫ মে ঢাকা থেকে সাদা পোশাকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে দাবি করেন তার স্ত্রী নাজমা আক্তার। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে ঢাকার পল্লবী ও ভাটারা থানায় মামলা করতেও যান তিনি। কিন্তু মামলা না নিয়ে পুলিশ একটি নিখোঁজ ডায়েরি গ্রহণ করে। এরপর যশোর ও ঢাকায় দুই দফা সংবাদ সম্মেলন করেন। পুলিশের কাছে কয়েক দফা গিয়েও কোনো লাভ হয়নি। তিনি জানান, নাজিম উদ্দিনের যশোর মনিরামপুর শহরে নকশা কমপিউটার নামে একটি দোকান ছিল। সেখান থেকেই তার নাম হয় নকশা নাজিম। ২০১২ সালের দিকে তিনি সেই দোকান বিক্রি করে মালয়েশিয়া যান। সেখানে দুই বছর থাকার পর গত ২৭ রমজান দেশে ফেরেন। এরপর ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের সৈয়দ গাউসুল আজমের সঙ্গে আদম ব্যবসা শুরু করেন। তারা দুজন সৌদি আরবে নারীকর্মী পাঠাতেন। নাজিমউদ্দিনের তুবা (১৮) ও তৈয়বা (১৩) নামে দুই মেয়ে রয়েছে। তুবা বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে থাকেন। আর ছোট মেয়ে তৈয়বা স্থানীয় পৌরসভা বালিকা বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। ছাত্রজীবনে নাজিমউদ্দিন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়লেও পরে রাজনীতি ছেড়ে দেন। তিনি কোনো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত নন।

 

সর্বশেষ খবর