মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ফ্ল্যাটে ফ্ল্যাটে জঙ্গি আস্তানা

মেস ছেড়ে বাসাবাড়িতে শিবির ক্যাডাররা, পছন্দের তালিকায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বাড়ি

সাঈদুর রহমান রিমন

ফ্ল্যাটে ফ্ল্যাটে জঙ্গি আস্তানা

রাজধানীর প্রবেশমুখ এবং শহরতলির ঘনবসতিপূর্ণ অনেক এলাকায় নিরাপদ আস্তানা গড়ে তুলেছে জঙ্গিরা। এসব এলাকায় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বাসাবাড়ি ভাড়া নেওয়া তাদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে। কোথাও কোথাও নির্মাণাধীন বাড়ির ফ্ল্যাট সপরিবারে বসবাসের কথা বলে তারা ভাড়া নিচ্ছেন। সম্প্রতি একটি গোয়েন্দা সংস্থার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে ঢাকার প্রবেশমুখ ও এর আশাপাশে জঙ্গি এবং শিবির ক্যাডারদের অবস্থানের কথা বলা হয়। রাজধানীতে ছাত্রাবাসের আদলে গড়ে তোলা মেসগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর অব্যাহত অভিযানের মুখে জঙ্গি এবং ছাত্রশিবিরের ক্যাডাররা এখন আবাসিক ফ্ল্যাট আশ্রয়স্থল বানিয়েছে। এরকম সন্দেহভাজন এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে—নন্দীপাড়া, ত্রিমোহনী, ডেমরার হাজীনগর, রসুলনগর, বাড্ডার সাঁতারকুল, আদর্শনগর, ভাটারার নূরেরচালা, নামা খিলবাড়ীরটেক, খিলক্ষেতের পূর্বাচল সংলগ্ন মহল্লাসমূহ, দক্ষিণখানের আশকোনা, কাঁচকুড়া, উত্তরখানের ফায়দাবাদ উল্লেখযোগ্য। ঢাকা মহানগরের বাইরে টঙ্গী, আশুলিয়া, সাভারের আমিনবাজার, কাউন্দিয়া, বিরুলিয়া, ভাকুর্তা, বড়দেশী, কামরাঙ্গীরচর সংলগ্ন বুড়িগঙ্গার এপার-ওপার, ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ-সাইনবোর্ড, কাঁচপুর ও সোনারগাঁও এলাকার কয়েকটি স্থানে জঙ্গিরা আস্তানা গেড়েছে বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে। জঙ্গিরা নানারকম সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার কৌশল নিয়েছে। এ ছাড়া একশ্রেণির সরকারি কর্মকর্তাও জঙ্গি কার্যক্রমে নানা কায়দায় যোগাযোগ রাখছেন বলে অভিযোগ আছে। সম্প্রতি কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার এ ধরনের একটি গোপন বৈঠক করার কথা শোনা যাচ্ছে। কিছুদিন আগে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা বনশ্রী এলাকায় অভিযান চালিয়ে জামায়াতের কয়েকজন নেতাকে আটক করেন। তারা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালানোর পরিকল্পনা করছিলেন বলে গোয়েন্দাদের কাছে স্বীকার করেন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের চারপাশ ঘিরেও জঙ্গি এবং শিবির ক্যাডারদের অবস্থানের খবর পাওয়া গেছে। কর্মজীবী পরিচয়ে বিমানবন্দর সংলগ্ন মহল্লাসমূহে তারা ভাড়াটে হিসাবে আশ্রয় নিয়েছে। তাছাড়া কর্মী পরিচয়ে কিছু লোক বিমানবন্দরের স্পর্শকাতর এলাকায় অবাধ যাতায়াত করছেন। জঙ্গি তৎপরতা-বিরোধী সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদর দফতরের একজন বিশেষ পুলিশ সুপার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, রাজধানীর কয়েকটি স্থানে জঙ্গি গ্রুপের আনাগোনা ও আবার উধাও হয়ে যাওয়ার তথ্য তাদের কাছে রয়েছে। এ কারণে এলাকাগুলোতে পুলিশের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সার্বক্ষণিক নজরদারির ব্যবস্থা নিয়েছে। গত তিন মাসে নানা অভিযানে শতাধিক জঙ্গি সদস্য ও তাদের কথিত সহযোগীদের গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এক প্রশ্নের জবাবে ওই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, জঙ্গি সংক্রান্ত মামলায় গ্রেফতারের পর যারা জামিন পাচ্ছেন, তারাও নজরদারিতে আছেন। তবে জামিনপ্রাপ্তরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন বলে দাবি করেন তিনি। পুলিশ সূত্র বলছে, মেসগুলোতে পুলিশের নজরদারি থাকায় শিবিরের চিহ্নিত নেতা ও ক্যাডাররা আবাসিক ফ্ল্যাটে বাস করছে। তারা জঙ্গিদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করেন। রাজধানীতে এরকম ১৭০টির মতো ফ্ল্যাট বা বাসা আছে বলে গোয়েন্দা সূত্রের দাবি।  এগুলোর মধ্যে তুরাগ থানা এলাকায় ৫টি, উত্তরায় ২৫টি, দক্ষিণখানে ৩টি, উত্তরখানে ২টি, বাড্ডায় ৫টি, খিলগাঁওয়ে ১০টি, সবুজবাগের মাণ্ডা-মুগদায় ১৫টি, যাত্রাবাড়ীর মানিকনগর, মীরহাজীরবাগে ২৫টি, শ্যামপুরে ৩টি, কদমতলীতে ৪টি, ডেমরায় ২টি, গেণ্ডারিয়ায় ৩টি, সূত্রাপুরে ১১টি, কোতোয়ালিতে ৪টি, মতিঝিলে ৯টি, লালবাগে ৫টি, কামরাঙ্গীরচরে ৮টি, রমনায় ৩টি, রামপুরায় ১০টি, শাহবাগে ৬টি, নিউমার্কেট এলাকায় ৪টি, ধানমন্ডিতে ১০টি, পল্লবীতে ১৫টি, মোহাম্মদপুরে ১০টি, আদাবরে ৬টি, তেজগাঁও এবং তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে পাঁচটি আস্তানা থাকার প্রাথমিক তথ্য গোয়েন্দারা পেয়েছেন।

সর্বশেষ খবর