বুধবার, ১১ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

নানামুখী চাপে ইসলামী দলগুলো

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

নানামুখী চাপে ইসলামী দলগুলো

নানামুখী চাপে অনেকটাই গৃহবন্দী হয়ে পড়েছে দেশের ইসলামী দল ও সংগঠনগুলো। ইসলামী দলগুলো ধর্মীয় ইস্যু ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে মাঠে সরব থাকত। বর্তমানে বিবৃতি-প্রেস বিজ্ঞপ্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে তাদের কার্যক্রম। গৃহবন্দীর কারণ হিসেবে দলগুলো বলছে, কোনো কিছু করতে গেলেই অনুমতি নিতে হয়। অনুমতি নিতে গেলেই বিপত্তির মুখে পড়তে হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুমতি দেওয়াই হয় না। পাশাপাশি নানা দিক থেকে হুমকি-ধমকি হয়রানিও শুরু হয়। চাপ-আতঙ্কের কারণেই ঘরোয়া কর্মসূচিতে বন্দী হয়ে পড়ছে তারা। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-মতবিরোধও ইসলামী দলগুলোর নিষ্ক্রিয়তা-গৃহবন্দিত্বের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ১১টি ইসলামী ধর্মীয় দল। এর বাইরে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। রাজনৈতিক দলের বাইরে হেফাজতে ইসলামসহ শত শত সংগঠন রয়েছে। তাদেরও তেমন কোনো কর্মসূচি নেই। ইসলামী দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় দল জামায়াতে ইসলামী। এই দলটিকে গৃহবন্দী বলারও কোনো সুযোগ নেই। একে গৃহহীন বলা যায়। কারণ, দলের মগবাজারের কেন্দ্রীয়, পল্টনের ঢাকা মহানগরীসহ সারা দেশের কার্যালয়গুলো বন্ধ রয়েছে। সভা-সমাবেশ দূরে থাক প্রকাশ্যে চলাফেরাও করতে পারে না নেতা-কর্মীরা। তবে অজ্ঞাত স্থান থেকে গণমাধ্যমে নিয়মিত বিবৃতি ও সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠাচ্ছে। দলটিকে রাজনৈতিকভাবে নিষিদ্ধ করার জন্য নানা মহলের চাপ রয়েছে। দলের আমির মকবুল আহমাদ সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকার অঘোষিতভাবে জামায়াতের প্রকাশ্য কাজ-কর্ম নিষিদ্ধ করে রেখেছে। কেন্দ্রীয় অফিস থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত সব অফিস তালাবদ্ধ করে রেখেছে।

নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দলগুলোর মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংগঠন মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীম চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। রোহিঙ্গা মুসলিম গণহত্যার প্রতিবাদে তাদের ১৮ ডিসেম্বর মিয়ানমার অভিমুখে লংমার্চ  পুলিশের বাধায় পণ্ড হয়ে যায়। পুরানা পল্টনে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং আশপাশে প্রায়ই কর্মসূচি পালন করে দলটি। ইসলামী আন্দোলনের ঢাকা মহানগরীর সহসভাপতি আলহাজ আবদুর রহমান বলেন, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলেই প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে কর্মসূচি পালন করি। ৬ জানুয়ারি পুলিশি বাধায় ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের সন্ত্রাসবিরোধী সম্মেলন বাতিল হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয় সংগঠনের পক্ষ থেকে। ঢাকা জিলা ক্রীড়া সংস্থা মিলনায়তনে ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের উদ্যোগে ‘সন্ত্রাস প্রতিরোধে রসুল (সা.)-এর দাওয়াত’ শীর্ষক ঢাকা বিভাগীয় সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। আওয়ামী লীগ নেতত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটে থাকা একমাত্র ইসলামী দল বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন। ১৪ দলে থাকার কারণে সংগঠনটি সভা-সমাবেশের জন্য প্রশাসনের অনুমতি পেতে তেমন কোনো বেগ পেতে হয় না। আর এ সুযোগে সারা দেশে সংগঠনকে চাঙ্গা করা হচ্ছে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটে থাকার কারণে ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম সভা-সমাবেশের অনুমতি পান না বলে জানান নেতা-কর্মীরা। তারা বলেন, যেখানে বিএনপির মতো দল সভা-সমাবেশের অনুমতি পায় না, সেখানে আমরা কীভাবে পাই। বিএনপির মতো দল প্রশাসনের অনুমতি না পেলে সভা-সমাবেশ করার মতো সামর্থ্য নেই, সেখানে আমরা কীভাবে করি। জানা যায়, দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন মাঠের কর্মসূচিতে সক্রিয় না থাকায় দলগুলোর মধ্যে বিরোধ ও দ্বন্দ্ব বেড়েছে। হেফাজতে ইসলামের মধ্যেও কয়েকটি ধারা সৃষ্টি হয়েছে। কেন্দ্র ও মহানগর কমিটির মধ্যে সমন্বয়ের অভাবও রয়েছে। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে আল্লামা শাহ আহমদ শফী ও তার ছেলে মাওলানা আনাসের মতামত প্রাধান্য পায়। অন্য নেতাদের মধ্যে ভিন্ন চিন্তা ও মতামত থাকলেও সেটা প্রকাশ করার মতো পরিবেশ না থাকায় অনেকের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামসহ অন্য দলগুলোতে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, মতবিরোধে একাধিক ধারা তৈরি হয়েছে। এসব কারণও দলগুলোর গৃহবন্দিত্বের জন্য দায়ী।

সর্বশেষ খবর