সোমবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

সিঙ্গেল ডিজিটে ঋণ দেওয়া হবে

এমডি, হাউজ বিল্ডিং ফিন্যান্স

আলী রিয়াজ

সিঙ্গেল ডিজিটে  ঋণ দেওয়া হবে

বাড়ি নির্মাণে অর্থায়ন করতে হাউজ বিল্ডিং ফিন্যান্স করপোরেশন কার্যক্রমে আমূল পরিবর্তন আনা হবে। মানুষের চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে এ প্রতিষ্ঠানটিকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে শাখা খুলে সিঙ্গেল ডিজিটে ঋণ দেওয়া হবে। বাড়ি তৈরির প্ল্যান, ডিজাইন করার বিশেষ প্রকল্প নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। সব নাগরিককে বাড়ি তৈরি করতে সহায়তা করবে করপোরেশন। বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফিন্যান্স করপোরেশনে (বিএইচএফসি) সদ্য যোগদান করা ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেবাশিষ চক্রবর্তী বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। চলতি বছরের শুরুতে রাষ্ট্রায়ত্ত এই প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেই এর আমূল পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ ব্যাংকিং ক্যারিয়ারে রূপালী ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি হিসেবে সর্বশেষ দায়িত্ব পালন করেন। কর্মদক্ষতার অংশ হিসেবে সরকার বিএইচএফসিতে এমডি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। এখানে নিয়োগ পেয়ে প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ডে গতি আনতে নিয়েছেন নানা উদ্যোগ। দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করেছেন। প্রতিষ্ঠানের সমস্যা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঋণ প্রদান করা একটি বড় সমস্যা ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিবেঞ্চার ঋণের মেয়াদ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখানে এসেই একশ দিনের বিশেষ প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। এই সময়সীমার মধ্যে গ্রাহকসেবার জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করছি বলে উল্লেখ করেন। মানুষ যেন মনে করতে পারে তাদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান বিএইচএফসি। তিনি বলেন, এখানে যোগ দিয়ে জানতে পেরেছি শাখার সংখ্যা কম। মানুষের এই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ধারণা কম। অনেকেই আসতে চাচ্ছে না। তাই ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে গ্রাহক তৈরি ও গ্রাহকদের কাছে যাওয়ার জন্য সব কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫০ কোটি টাকা। বিতরণ হয়েছে ১২৬ কোটি টাকা। ঋণ সুদের হারও ছিল ১১ থেকে ১২ শতাংশ। আমরা এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই হার কমাব। ঢাকাসহ নগর এলাকায় সিঙ্গেল ডিজিট করা হবে এবং গ্রামীণ এলাকায় সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ করা হবে। একই সঙ্গে ঋণের সিলিং বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি বলেন, বাড়ি নির্মাণের নতুন প্রডাক্ট আনা হচ্ছে। এর মধ্যে লোন ফর ফার্মার্স, লোন ফর পেরি আরবান, লোন ফর এনআরবি। এসব ঋণের পাঁচ বছর মেয়াদি বিশেষ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। বোর্ড ও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই কার্যকর করা হবে। আমাদের প্রবাসী নাগরিকদের জন্য বিশেষ প্রকল্প এনআরবি ঋণ সহজ শর্তে প্রদান করা হবে। চাষযোগ্য জমি নষ্ট না করে গ্রুপ ঋণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পে বহুতলবিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করা হবে। সর্বোপরি গ্রাহকদের উন্নত সেবার জন্য যা কিছু প্রয়োজন বিএইচএফসি তা করবে। বিশিষ্ট এই ব্যাংকার বলেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে ঋণ বিতরণ বাড়ানোর লক্ষ্যে আইডিবি থেকে ৮০০ কোটি টাকার একটি ফান্ড পাওয়া যাচ্ছে। আগামী মাসে আইডিবি প্রতিনিধিদল আসছে। তাদের সঙ্গে বৈঠক করে এ বছরই এই ফান্ড পাওয়া যাবে। পাঁচ বছর মেয়াদি এই অর্থ আরবান, পেরি আরবান এলাকায় বিতরণ করা হবে। আমাদের যে আর্থিক সংকট ছিল তা থাকবে না। এ বছর ডিবেঞ্চার ঋণের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করে এই মেয়াদ বৃদ্ধি করার জন্য অনুরোধ করেছি। আশাকরি সেটাও পাওয়া যাবে। ১৫ থেকে ২০ বছর মেয়াদি হবে এর সময়কাল। ডিবেঞ্চার ঋণের সব কিস্তি বিএইচএফসি সময়মতো পরিশোধ করেছে। একটি কিস্তিও মিস হয়নি। এই প্রতিষ্ঠান সরকারকে বেশি কর দেওয়ার জন্য পুরস্কৃত হয়েছে। মুনাফা করে কর প্রদানে আমরা শীর্ষে থাকতে চাই। সরকারি ব্যাংকগুলোর কাছে অতিরিক্ত অলস তারল্য আছে। যা মাত্র দুই শতাংশ সুদ হারে বাংলাদেশ ব্যাংকে রাখা আছে। এই টাকা যদি আমাদের মাধ্যমে ঋণ দেওয়া হয় সেটা দেশের অর্থনীতিতে একটি বড় ভূমিকা রাখবে। ব্যাংকগুলোর মুনাফাও হবে বেশি। তিনি আরও বলেন, এখানে বর্তমানে আরও একটি সমস্যা রয়েছে। প্রযুক্তির ঘাটতি। বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তি ছাড়া কোনো ব্যাংকিং কার্যক্রম চলে না। আমি যোগদান করেই সব শাখা ব্যবস্থাপকের স্কাইপি খুলেছি। এখন সরাসরি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে। কোনো সমস্যা হলে প্রধান কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে। সোনালী, জনতা ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলেছি অ্যাকাউন্টে গ্রাহক টাকা জমা দিলেই তা মোবাইলে চলে যাবে। যে কোনো শাখায় টাকা জমা দিতে পারবে। গ্রাহকদের জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ সেন্টার করা হচ্ছে। এটা করা গেলে দেশের সব শাখার চিত্র জানা যাবে। এখানে লোকবল সংকট আছে। অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী ৭৫০ জন কর্মকর্তা থাকার কথা। ৩৭ শতাংশ কম আছে। ডিএমডি নেই। এখন নতুন অর্গানোগ্রাম করে লোকবল নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। আশাকরি সেটাও হবে। সারা দেশে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে অবশ্য লোকবল দরকার।

 

 

সর্বশেষ খবর