রবিবার, ২২ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

রোগী জিম্মি করে দলাদলি

বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে হচ্ছেটা কী

নিজস্ব প্রতিবেদক

রোগী জিম্মি করে দলাদলি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় দেশের একমাত্র সরকারি বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং এটি চিকিৎসা শাস্ত্রের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় এবং চিকিৎসা সেবায় রয়েছেন দেশ-বিদেশে ডিগ্রিপ্রাপ্ত দেশের সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসকরা। এখানে নার্স নিয়োগে দুর্নীতিকে কেন্দ্র করে উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল হাসান খান ও প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম জাকারিয়া স্বপনের দ্বন্দ্বে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। রোগী সাধারণকে জিম্মি করে সেখানে চলছে চিকিৎসকদের দুই গ্রুপের দলাদলি।

গতকাল সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উপাচার্য ও প্রো-উপাচার্য গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। নার্স নিয়োগে অনিয়মের প্রতিবাদ করা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার উপাচার্যের কার্যালয়ে উপাচার্য কর্তৃক প্রো-উপাচার্যের লাঞ্ছিত হওয়ার জের ধরে গতকাল উভয় গ্রুপ ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয়। এক সময় তাদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয় এবং ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। দুপক্ষই ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ-মিছিল করে। এ ঘটনায় হাসপাতালে কয়েক ঘণ্টা চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হয়। রোগী ও তাদের আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়ে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, প্রায় দুই শতাধিক চিকিৎসকের বিক্ষোভকালে দুপক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল হারুন ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। ক্যাম্পাসে তাত্ক্ষণিক অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ডিনস কমিটির জরুরি বৈঠক আহ্বান করে। এ বিষয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, সেখানে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য পক্ষের লোকজন অবস্থান নিলে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরে আমি দু-গ্রুপকে দুদিকে সরিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করি।

ডিনস সভা শুরুর আগে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান সাংবাদিকদের জানান, তিনি উপ-উপাচার্যকে মারধর কিংবা লাঞ্ছিত করেননি। তিনি প্রমাণ দেখাতে পারবেন। আর  এই প্রমাণ দেখানোর কথা বলে আড়াই ঘণ্টা পর ডিনস কমিটির বৈঠক শেষে উপাচার্য সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নার্স নিয়োগে কোনো দুর্নীতি এবং উপ-উপাচার্যকে পেটানোর ঘটনা ঘটেনি। যদি কেউ এই অভিযোগের প্রমাণ দিতে পারেন, তাহলে যে শাস্তি দেওয়া হবে তিনি তা মেনে নেবেন।

উপাচার্যের এই বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. এ এস এম জাকারিয়া স্বপন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, উপাচার্য একশ কথার মধ্যে একশটাই মিথ্যা বলেন। উনি এবং প্রক্টর দুজন মিলেই আমাকে পিটিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে আমি কাল (রবিবার) মহামান্য রাষ্ট্রপতি বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেব। অভিযোগ পাওয়া যায়, বৃহস্পতিবার উপাচার্য তার কার্যালয়ে তিন প্রো-উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারসহ পাঁচজনের বৈঠক ডাকেন। এ সময় নিধারিত পাঁচজনের অতিরিক্ত অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকলে তার প্রতিবাদ করেন অধ্যাপক জাকারিয়া স্বপন। এ নিয়ে তার সঙ্গে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে তিনি সভা থেকে বেরিয়ে যেতে চাইলে উপাচার্য এবং প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল তাকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করেন।  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০ নার্স নিয়োগের জন্য লিখিত পরীক্ষায় কেবল টাঙ্গাইল জেলার ৭৬ জন প্রার্থী অস্বাভাবিক বেশি নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তাদের গড় নম্বর শতকরা ৮০ থেকে ৯৩ ভাগ পর্যন্ত। এই ৭৬ জনের মধ্যে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলারই ২৩ জন। উপাচার্য টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইলের বাসিন্দা। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা দ্বিধাবিভক্ত হওয়ায় তাদের পক্ষের চিকিৎসকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়।

সর্বশেষ খবর