রবিবার, ২২ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

নগর ভবনে ফেরার অপেক্ষায় বুলবুল

তিন বছরের অর্ধেকের বেশি সময় কেটেছে জেলে

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

নগর ভবনে ফেরার অপেক্ষায় বুলবুল

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়ে মাত্র ১৪ মাস দায়িত্ব পালন করতে পেরেছেন বিএনপি নেতা মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। তার নির্বাচিত হওয়ার তিন বছর পার হলেও দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়েছেন অর্ধেকেরও কম সময়। আর বাকিটা সময় কেটেছে তার কারাগারে। ২০১৩ সালের নির্বাচনের পর থেকে তার নামে মামলা হয়েছে ২৩টি। মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল সম্প্রতি কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু এখনো ফিরতে পারেননি স্বপদে। উচ্চ আদালতে তার দায়ের করা রিটের শুনানি শেষ হয়েছে, কিন্তু পূর্ণাঙ্গ রায় না পাওয়ায় অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে তাকে। তবে বুলবুলের স্বপদে ফিরতে না পারাকে সরকারের প্রতিহিংসা মনে করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. হাছানাত আলী। তিনি বলেন, উচ্চ আদালত বুলবুলকে তার পদে ফেরাতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে সেটি বন্ধ করে রেখেছে। এতে করে মনে হচ্ছে তিনি বিএনপি নেতা হওয়ায় সরকারের রোষানলে পড়েছেন।

২০১৩ সালের ১৫ জুনের নির্বাচনে নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে প্রায় ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন বুলবুল। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার তিন মাস পর ১৮ সেপ্টেম্বর মেয়র হিসেবে শপথ নেন। দায়িত্ব বুঝে পাওয়ার পর ৬ অক্টোবর প্রথম সাধারণ সভা করেন তিনি। তবে পাননি আগের মেয়রদের মতো প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা। এর প্রতিবাদে মেয়রের জন্য বরাদ্দ গাড়ি প্রত্যাখ্যান করেন তিনি। ফলে সিটি করপোরেশনের অন্য কর্মকর্তারা গাড়ি ব্যবহার করলেও বুলবুল মোটরসাইকেলেই যাতায়াত করতেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সরকারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে ২৩টি মামলার আসামি হয়েছেন বুলবুল। এরপর প্রায় এক বছর ছিলেন আত্মগোপনে। গত বছরের ১৩ মার্চ আদালতে আত্মসমর্পণ করে কারাগারে যান বুলবুল। আইনি বাধা পেরিয়ে দুই মাস ১৮ দিন কারা ভোগের পর তিনি জামিনে মুক্তি পান গত বছরের ১ জুন। মেয়র বুলবুলের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রইসুল ইসলাম জানান, এক বছরের বেশি সময় ধরে আত্মগোপনে থাকার পর গত বছর ১৩ মার্চ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল নয়টি মামলায় জামিনের আবেদন জানিয়ে রাজশাহীর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এরপর পর্যায়ক্রমে রাজশাহীর আদালত থেকে ৭টি মামলা ও উচ্চ আদালত থেকে দুটি মামলায় জামিন লাভ করেন। সর্বশেষ গত বছর ২৪ মে উচ্চ আদালতে দুটি মামলায় তিনি জামিন পান। এর আগে ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোটের অবরোধ-হরতাল চলাকালে ২৩টি মামলার আসামি করা হয় বুলবুলকে। এর মধ্যে ৪টি মামলায় তার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। মামলাগুলোর মধ্যে পুলিশ কনস্টেবল সিদ্ধার্থ রায় হত্যা মামলাও আছে। ২০১৫ সালে ৭ মে সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। অবশ্য গত বছরের ১০ মার্চ হাইকোর্ট থেকে তার বহিষ্কারাদেশ অবৈধ ঘোষণা করা হয়। তবে এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলেও আপিল বিভাগ তা নাকচ করে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখে। ফলে বুলবুলই মেয়রের দায়িত্বে বহাল থাকেন। কিন্তু আপিলের রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি এখনো বের না হওয়ায় দায়িত্ব পাচ্ছেন না বুলবুল। ফলে জামিনে মুক্ত হলেও নগর ভবনে ফিরতে পারছেন না তিনি। এখন দিন গুনছেন পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি বের হওয়ার অপেক্ষায়। এ বিষয়ে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, ‘জনগণের বিপুল ভোটে আমি মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। সরকার প্রতিহিংসার রাজনীতি করে আমাকে নগর ভবনের বাইরে রেখেছে। এই তিন বছরের মধ্যে দেড় বছরও কাজ করতে পারিনি। একের পর এক হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে নাজেহাল করেছে।’ বুলবুলকে বরখাস্ত করে দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র করা হয় ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা নিযাম উল আযিমকে। এখন পর্যন্ত তিনিই দায়িত্ব পালন করছেন। এ প্রসঙ্গে বুলবুল বলেন, ‘এখন অনির্বাচিত ব্যক্তি দিয়ে করপোরেশন চলায় ব্যাপক লুটপাট আর দুর্নীতি চলছে। এর ফলে প্রকৃতপক্ষে জনগণই নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর কোনো জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে মামলা থাকতেই পারে। কিন্তু আদালত কর্তৃক চূড়ান্তভাবে দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত তাকে বরখাস্ত করা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি।’ বুলবুলকে মেয়রের পদে ফিরতে না দেওয়ায় ক্ষোভ আছে স্থানীয় আওয়ামী লীগেও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক নেতা জানিয়েছেন, এ নিয়ে আগামী নির্বাচনে তাদের ভোগান্তিতে পড়তে হবে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, বুলবুলকে দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হয়নি— এটি সবার জানা। ফলে প্রচারণায় গিয়ে বুলবুল এ সুযোগটি নেবেন। আর সহানুভূতির ভোটও গিয়ে পড়বে বুলবুলের বাক্সে।

সর্বশেষ খবর