বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
দুই মেয়রের সাতকাহন

কুমিল্লার সাক্কুর সুখ-দুঃখের কথা

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

কুমিল্লার সাক্কুর সুখ-দুঃখের কথা

নগরবাসীর দেওয়া দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন বলে দাবি কুমিল্লা সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর। তার পাঁচ বছরের কার্যক্রম নিয়ে সোমবার সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের এ প্রতিবেদককে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘বিএনপি করায় আমি এমনিতেই বৈষম্যের শিকার। প্রথম দিকে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে বছরে আট কোটি টাকা করে পেতাম। এখন তা চার কোটিতে নেমে এসেছে। আমার তো স্টাফের বেতনই সোয়া কোটি টাকা। মিথ্যে বলে লাভ নেই, সাপের মতো আঁকাবাঁকা হয়ে লোকাল এমপির সঙ্গে মিলে নগরীর উন্নয়ন করেছি। এত প্রতিকূলতার মধ্যেও গত পাঁচ বছরে ৩৮০ কোটি টাকার কাজ করেছি আমি।’ সাক্কু বলেন, ‘আমাকে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা দেওয়ার কথা শোনা গিয়েছিল। কিন্তু আমাকে সে সম্মান দেওয়া হয়নি। আমি বিএনপি করি বলে এমনটি করা হয়েছে। আমাকে সম্মান দিলে তাদের সম্মান কমত না, বরং বাড়ত।’ কুমিল্লা সিটির মেয়র বলেন, ‘মেয়রের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজ দলের জন্য তেমনভাবে মাঠে নামতে পারিনি। কারণ আমি চিন্তা করে দেখলাম, মেয়র পদ নির্দলীয়। সব দলের মানুষ আমাকে ভোট দিয়েছে। আমি কী করে তাদের বঞ্চিত করি! আমি আন্দোলন-সংগ্রাম করে জেলে গেলে তাদের ভোট নিলাম কেন। আমাকে সরাতে সরকারের এক ঘণ্টাও সময় লাগবে না। আন্দোলনে মাঠে না নামায় কেন্দ্রের অনেক বিএনপি নেতা আমাকে ফোন করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আমি জানি কী প্রেসারে ছিলাম। তিনবার আমার ফোন ট্র্যাক করা হয়। ঢাকায় আমার বাসা পাঁচবার পরিবর্তন করতে হয়। আমার একটিমাত্র সন্তান। তাকে সময় দিতে পারিনি। পরিবার সব সময় আমাকে নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকে।’ অপরিকল্পিত নির্মাণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের থেকে এক রকম অনুমোদন নিয়ে অন্যভাবে কাজ করা হচ্ছে। নিজেরা গিয়ে বাধা দিই। নিজেদের ম্যাজিস্ট্রেট থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া যেত।’ উন্নয়ন বিষয়ে সাক্কু বলেন, ‘নতুন সিটি করপোরেশন। সব প্রথম থেকে শুরু করতে হচ্ছে। এখন কাজের যে ধারাবাহিকতা তা ২০২০ সাল পর্যন্ত চললে কুমিল্লা সিটি হবে একটি নান্দনিক সিটি। কুমিল্লা সিটি মার্কেট, নিউমার্কেট, ঈদগাহ, সিটিপার্ক, ধর্মসাগর পাড়ের সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করেছি। রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করেছি।’ অসম্পন্নতার বিষয়ে তিনি বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে কিছু কাজ চলমান রয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে খালগুলো খননের টেন্ডার হয়েছে। এদিকে যানজট কমিয়ে আনতে গোমতী নদীর তীরে ২৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে বাইপাস সড়কের কাজ শুরু হয়েছে। আমতলীতে গোমতী নদী থেকে পানি নিয়ে শোধন করে নগরবাসীর জন্য সরবরাহ করা হবে। এ জন্য আড়াই শ’ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির ৮০ ভাগ কাজ তিনি করতে পেরেছেন বলে দাবি করেন সাক্কু। পুনরায় নির্বাচনের বিষয়ে মেয়র সাক্কু বলেন, ‘পরিবারের সদস্যদের নির্বাচনে যেতে আপত্তি রয়েছে। তবে জনগণের মতামত এবং পরিবেশ পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে সবকিছু।’ মেয়রের বিষয়ে রাজনীতিবিদ আবদুর রউফ চৌধুরী ফারুক বলেন, ‘কুমিল্লার কোনো জনপ্রতিনিধিকে মেয়র সাক্কুর মতো এমনভাবে মানুষের কাছে যেতে দেখিনি। সুইপারের সর্দারের ভূমিকা না নিলে সিটি পরিষ্কার রাখা কঠিন। তিনি দিনভর ড্রেনের পাশে, ডাস্টবিনের পাশে দাঁড়িয়ে কাজের তদারক করেন।’ ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি বিপুল ভোটে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু। একই বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি তার মেয়াদ পূর্ণ হবে।

সর্বশেষ খবর