শিরোনাম
শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

প্রবাসে জমজমাট মাদক ব্যবসা

জুলকার নাইন

প্রবাসে জমজমাট মাদক ব্যবসা

ঢাকা থেকে কর্মস্থলে ফেরার সময় ২২ ডিসেম্বর কুয়েত বিমানবন্দরে গ্রেফতার হন ময়মনসিংহের নাজমুল। তার কাছ থেকে পাওয়া যায় ১০ হাজার ইয়াবা ট্যাবলেট। এটাই প্রবাসে সবচেয়ে বেশি মাদকসহ বাংলাদেশি আটকের ঘটনা। তবে আকারে এত বড় না হলেও গত কয়েক বছরে প্রায়শই প্রবাসে মাদক ব্যবসার দায়ে আটক হচ্ছেন বাংলাদেশিরা। এক সৌদি আরবেই প্রায় ৬০০ বাংলাদেশি আটক হয়েছেন মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ততার দায়ে। সৌদি আরবের মতো আরব আমিরাত, জর্ডান, বাহরাইন ও কুয়েতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বাংলাদেশ থেকে মাদক পরিবহনের তথ্য পাওয়া গেছে। সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যে থাকা বাংলাদেশের তিন দূতাবাস থেকে মাদক ব্যবসায় প্রবাসীদের সম্পৃক্ততার বিষয় উল্লেখ করে ঢাকায় প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। অবশ্য শুধু মধ্যপ্রাচ্য বা মালয়েশিয়া নয়, ইউরোপের দেশ ইতালিতেও গত বছরের মাঝামাঝি ইয়াবাসহ আটক হয়েছেন বাংলাদেশি প্রবাসী। দূতাবাস সূত্র জানায়, যে কোনো ধরনের মাদক গ্রহণ, পরিবহন ও বিক্রি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে খুনের চেয়েও ভয়ঙ্কর অপরাধ বলে গণ্য করা হয়। কিন্তু একশ্রেণির বাংলাদেশি কর্মী মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন। অনেক ক্ষেত্রে পাকিস্তানিদের সঙ্গে সংঘবদ্ধ হয়ে মাদক সিন্ডিকেট পরিচালনা করা হচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাংলাদেশি প্রবাসীদের মধ্যেই মাদক বিক্রি করা হচ্ছে। তবে কেউ কেউ বাইরেও বিক্রি করছেন। ঢাকা থেকেই হাতে বা কার্গোতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে গাঁজা বা ইয়াবা। মধ্যপ্রাচ্যে এ ধরনের খুচরা ব্যবসায়ীর সংখ্যা হাজারখানেক ছাড়িয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ধরনের গুটিকয় অপরাধীর জন্য ৫০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশির কর্মস্থল মধ্যপ্রাচ্যে আরেক দফায় ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। এর আগে নরসিংদী জেলার বাখরনগর গ্রামের মৃত জহির আলীর ছেলে শহিদ মিয়াকে মধ্যপ্রাচ্যে মাদক চোরাচালানের অন্যতম হোতা হিসেবে সরকারকে অবহিত করেছিল বাংলাদেশ দূতাবাস। শহিদ এখন কারাগারে। প্রতিবেদন পাঠিয়ে বলা হয়েছিল, নতুন আসা বাংলাদেশিদের হাতে ঢাকা থেকেই ওষুধের প্যাকেটের ভিতর মাদক ঢুকিয়ে তা আবুধাবিসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে তিনি বাজারজাত করে আসছিলেন। পাকিস্তানিদের নিয়ে তিনি আবুধাবিতে একটা সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। আর তার অপকর্মে অংশ নিতে বাধ্য করা হয় নতুন আসা কর্মীদের। শফিকুল ইসলাম (পাসপোর্ট নম্বর-বিবি-০৩৮৭২৫৩) নামে এক বাংলাদেশি আবুধাবি প্রবেশের সময় সেখানকার বিমানবন্দরের শুল্ক ও গোয়েন্দা দফতর তার কাছ থেকে গাঁজা উদ্ধার করে। শফিকুলকে জিজ্ঞাসাবাদেই পাওয়া যায় শহিদ মিয়ার তথ্য। আমিরাতের শহিদের মতো সৌদি আরবে মাদক পাচারের দায়ে কারাগারে আটক আছেন ইকবাল আলী। তার পাঁচ বছরের জেল ও ৫০০ বেত্রাঘাতের রায় হয়েছে। মাদক পাচারের অভিযোগে আটক রয়েছেন শামীম মোহাম্মদ ও আবু জাফর তনু। তাদের প্রথমে ওষুধ পাচারের দায়ে আটক করা হলেও পরে অধিকতর তদন্তে বেরিয়ে আসে আসলে তারা মাদক পাচারে সম্পৃক্ত ছিলেন। দূতাবাসের প্রতিবেদনে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় এ ধরনের ঘটনা ‘খুবই অপরিচিত’ মন্তব্য করে আরও বলা হয়, বাংলাদেশিদের এ ধরনের অপরাধে জড়িত হওয়ার বিষয়টি ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে সংশ্লিষ্ট দেশে। এতে বাংলাদেশের সুনাম বহুলাংশে ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা হওয়া এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রবাসীদের সহায়তায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে মাদক ব্যবসা করা এক ব্যক্তি আটক হন। তার কাছ থেকে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া যায়। তার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সৌদি আরব, আমিরাত, কুয়েত, ওমানে ইয়াবা ব্যবহার ও চাহিদা বেড়েছে। তবে সেখানে মাদক পাওয়া এত সহজ নয়, কারণ এসব দেশ ইসলামিক নিয়মে চলে। ফলে প্রবাসীদের মধ্যে দেশ থেকে মাদক নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা শুরু হয়। আগে বেশি পরিমাণে গাঁজা পাঠানো হলেও এখন সবচেয়ে বেশি যায় ইয়াবা। কারণ পরিবহনে সুবিধা। প্রবাসী পরিচিত কেউ ছুটিতে দেশে এলে ফিরে যাওয়ার সময় তাদের কাছে না জানিয়ে বা জানিয়ে বিভিন্ন ঠিকানার ব্যক্তিদের কাছে মাদক পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়। বিশেষত পিঠা, বিভিন্ন শুকনা খাদ্য ও আচারের ভিতর মাদক ঢুকিয়ে দিয়ে দেন এসব চক্রের লোকেরা। সব থেকে আচারের ভিতর ইয়াবা ঢুকিয়ে দিলে বিমানবন্দরে চেকিংয়ের সময় ধরা পড়ে না বলেও ওই পাচারকারী জানিয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এসব বিক্রির সঙ্গে জড়িয়ে আছেন বেশ কিছু ‘ফ্রি ভিসা’র প্রবাসী। তারা কাজ না করে বেশি অর্থ উপার্জনের জন্য গোপনে প্রবাসেই ব্যবসা করছেন। প্রতি পিস ইয়াবা বাংলাদেশ থেকে সংগ্রহ করে চার থেকে পাঁচগুণ দামে এক-দেড় হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

 

সর্বশেষ খবর