মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

লেবাননকে ঘিরে সমুদ্রবাণিজ্য বিস্তারের সুযোগ

শিমুল মাহমুদ, বৈরুত (লেবানন) থেকে ফিরে

লেবাননকে ঘিরে সমুদ্রবাণিজ্য বিস্তারের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের। সরকারি নীতি সহায়তা পেলে লেবানন, সিরিয়া, তুরস্ক ও সাইপ্রাসে মেরিটাইম সেক্টরে কাজ করার সুযোগ পাবে বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বেসরকারি জাহাজ নির্মাণ শিল্প, পেট্রোবাংলার বাপেক্সসহ তেল গ্যাস অনুসন্ধান খাত। এ জন্য লেবাননের বৈরুত দূতাবাসে একজন নেভাল অ্যাটাচে নিয়োগের প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের কাছে লেবাননে নিয়োজিত নৌবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজ আলী হায়দারের পক্ষ থেকে এই বিপুল সম্ভাবনার কথা তুলে ধরা হয়। সম্প্রতি লেবানন সফরকালে বৈরুত পোর্টে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ আলী হায়দারে লেবাননে নৌবাহিনীর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ব্রিফিং করেন আলী হায়দারের নির্বাহী অফিসার মনিরুজ্জামান। এ সময় লেবাননকে ঘিরে পার্শ্ববর্তী আরব দেশগুলোর মেরিটাইম সেক্টরে বাংলাদেশের সমুদ্রবাণিজ্য বিস্তৃতির কথাও উঠে আসে।    

বৈরুত দূতাবাসে নেভাল অ্যাটাচে : আলোচনায়  বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসে ডিফেন্স উইং খোলার অনুমোদন দিয়েছেন। অবস্থানগত বিবেচনায় লেবাননে নেভাল অ্যাটাচে নিয়োগ দেওয়াও এখন সময়ের দাবি। লেবাননের মেরিটাইম সেক্টর বিকশিত নয়। অন্যদিকে সিরিয়াও শান্তির দিকে যাচ্ছে। সেখানে মেরিটাইম সেক্টর বিকশিত হবে। তারা সমুদ্রে তেল গ্যাস অনুসন্ধান করবে। তাদের তুলনায় বাংলাদেশ শিপিং সেক্টরে অনেক এগিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশ তৈরি জাহাজ জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়েছে। পার্শ্ববর্তী সাইপ্রাস ও তুরস্কেও কাজ করতে পারে বাংলাদেশ। সিরিয়া লেবাননের যুদ্ধাবস্থা দ্রুতই শেষ হয়ে যাবে। তখন দেশ দুটির মেরিটাইম সেক্টরে বাংলাদেশের কাজ করার বিশাল সুযোগ সৃষ্টি হবে। অভ্যন্তরীণ শান্তি ফিরলেই তারা সমুদ্র বাণিজ্যের দিকে মনোযোগ দেবে। বৈরুত দূতাবাসে বাংলাদেশের নেভাল অ্যাটাচে থাকলে বাণিজ্য বিকাশে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ২৮ জানুয়ারি লেবাননের সংসদীয় প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা সংসদীয় কমিটির সদস্যদের বৈঠককালেও তারা বাংলাদেশের সহায়তার কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। লেবাননে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবদুল মোতালেব সরকার গত বছরের জুনে সাইপ্রাসের রাষ্ট্রদূত হিসেবেও দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি বলেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যেই আমরা বাংলাদেশ ও সাইপ্রাসের মধ্যে মার্চেন্ট মেরিন চুক্তি স্বাক্ষর করতে যাচ্ছি। তাতে সাইপ্রাসের সঙ্গে আমাদের সমুদ্র বাণিজ্য বিকশিত হবে। 

জাহাজ নির্মাণ শিল্প : জাহাজ নির্মাণ শিল্পে গত এক দশকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভ করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে তৈরি সমুদ্রগামী জাহাজ রফতানি হয়েছে জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশে। সংশ্লিষ্টরা জানান, লেবাননকে কেন্দ্র করে পার্শ্ববর্তী সিরিয়া, তুরস্ক ও সাইপ্রাসের জাহাজ নির্মাণে অংশ নিতে পারে বাংলাদেশ। আলী হায়দারের মতো রাডার ও মিসাইল বহনকারী এতবড় যুদ্ধজাহাজ লেবাননের নেই। তাদের নৌবাহিনীর শক্তি সামর্থ্যও সীমিত। এদিকে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে ২০১২ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে এবং ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণে জয়ের পর থেকে সমুদ্র সম্পদ আহরণসহ সমুদ্র এলাকার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতে নৌবাহিনীকে নিয়ে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করেছে সরকার। নৌবাহিনীকে ইতিমধ্যে ত্রিমাত্রিক হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। খুলনা শিপইয়ার্ডে দুটি কন্টেনার শিপ, প্রথমবারের মতো নৌবাহিনীর জন্য পাঁচটি পেট্রোল ক্রাফট তৈরির করা হয়েছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধজাহাজ নির্মাণের সক্ষমতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। লেবাননের নেভাল কন্টিনজেন্টের কমান্ডার ও বিএনএস আলী হায়দারের কমান্ডিং অফিসার ক্যাপ্টেন মির্জা মামুন উর রশীদ বলেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনী ১৯৯৩ সাল থেকে বিশ্বশান্তি রক্ষায় অংশ নিচ্ছে। ২০০৫ সালে সুদানে রিভার মিশনে অংশ নেয় বাংলাদেশ। ২০১০ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের আওতায় যুদ্ধজাহাজ ওসমান ও মধুমতি নিয়ে লেবাননে আসে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। লেবানন হচ্ছে জাতিসংঘের একমাত্র মেরিটাইম টাস্কফোর্স। টহলকালে ইসরাইলের শিপের সঙ্গে আমাদের শিপের দূরত্ব থাকে মাত্র ১০০মিটার।

তিনি বলেন, ইউনিফিলে  এ পর্যন্ত ১৫টি দেশের নৌবাহিনী অংশ নিয়েছে। বর্তমানে ছয়টি দেশের মেরিটাইম ফোর্স কাজ করে লেবাননে। ছয় দেশের সাতটি জাহাজ লেবাননের সমুদ্র পাহারা দেয়। সব দেশের একটি করে জাহাজ থাকলেও শুরু থেকেই বাংলাদেশের দুটি জাহাজ সেখানে দায়িত্ব পালন করছে। তুরস্ক ও সাইপ্রাস বন্দরেও আমরা যাই। এই অঞ্চলে আমাদের কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। লেবাননে জাতিসংঘ মিশনে কাজ করে বছরে প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।

 

সর্বশেষ খবর