মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

এফবিসিসিআই নির্বাচনে সভাপতি পদে জমজমাট লড়াই

রুহুল আমিন রাসেল

এফবিসিসিআই নির্বাচনে সভাপতি পদে জমজমাট লড়াই

মো. জসিম উদ্দিন---সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন

ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের মিনি পার্লামেন্ট খ্যাত শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন এফবিসিসিআইর আসন্ন নির্বাচনে সভাপতি পদে দুই প্রার্থীর লড়াই জমে উঠেছে। এই লড়াইয়ে এখন মুখোমুখি এফবিসিসিআইর সাবেক প্রথম সহসভাপতি ও বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন ও সংগঠনটির বর্তমান প্রথম সহসভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। দুই প্রার্থীই সরকারের শীর্ষ মহলের অনুকম্পা পাওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে কেউ গ্রিন সিগন্যাল পাননি বলে নিশ্চিত করেছে সরকার ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র। বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন-এফবিসিসিআইর আসন্ন নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী জসিম উদ্দিন নিজের প্রার্থিতা নিশ্চিত করে গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের গুরুত্ব বাড়ছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ভিশন-২০২১ ও ২০৪১-এর আলোকে বাংলাদেশের দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। বাড়ছে বাণিজ্য। বাড়ছে বেসরকারি খাতের অবদান। এই অবদান বাড়ানোর সহায়ক শক্তি হিসেবে এফবিসিসিআইসহ সব বাণিজ্য সংগঠনকে নিয়ে ভূমিকা রাখতে সভাপতি পদে নির্বাচন করছি। আরেক সভাপতি প্রার্থী সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন শনিবার সাংবাদিকদের বলেন, এবারের নির্বাচনে আমি সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে এফবিসিসিআইর পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন হবে। নির্বাচন বোর্ড খুব শিগগিরই নির্বাচনের তারিখসহ তফসিল ঘোষণা করবে। মে মাসের শেষের দিকে রমজান মাস শুরু হবে। আশা করছি তার আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জানা গেছে, এফবিসিসিআই নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি তফসিল ঘোষণা করবে। এবারের নির্বাচনে সভাপতি, সহসভাপতি ও পরিচালক পদের সম্ভাব্য একাধিক প্রার্থী প্রতিদিন রাজধানীর অভিজাত হোটেল, ক্লাব, রেস্টুরেন্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও নিজেদের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে সভা করছেন। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক-টুইটারে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে অনেক প্রার্থী নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর নিজেদের শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ জন্য অভিজাত ক্লাব ও হোটেলে আগাম বুকিং দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। আলাপকালে একাধিক প্রার্থী জানিয়েছেন, তারা এবার একটি ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন দেখতে চান। সব প্রকার ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে সবাই নির্বাচন করতে চান। সবার ভোটাধিকার প্রয়োগের নিশ্চয়তা চান। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচন অধিকতর সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক করতে সভাপতিসহ সব পদে সরাসরি ভোটে নির্বাচন আয়োজনে এফবিসিসিআই সংস্কারের নির্দেশনা দিয়েছেন। ফলশ্রুতিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত বছর ৫ এপ্রিল এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি ব্যবসায়ী নেতা সালমান এফ রহমানকে আহ্বায়ক করে সংস্কার কমিটি গঠন করে। সংস্কার কমিটি গত বছর ৩০ আগস্ট সভা করে মনোনীত পরিচালক প্রথা বাতিলসহ অনেকগুলো সিদ্ধান্ত নেয়। এই প্রস্তাবনা নিয়ে এফবিসিসিআই বোর্ড সভায় পক্ষ-বিপক্ষ মত এসেছে। মনোনীত পরিচালক প্রথা বাতিল করে সভাপতি, সহসভাপতি ও সব পরিচালক পদে সরাসরি ভোট চেয়ে সর্বশেষ বার্ষিক সাধারণ সভা-এজিএমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন ব্যবসায়ী নেতারা। এই নির্বাচন সামনে রেখে এফবিসিসিআইর প্রস্তাবিত সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। রাজধানীতে গত ২৪ জানুয়ারি এফবিসিসিআই রিফমর্স বাস্তবায়ন কমিটি আয়োজিত আলোচনা সভায় সংস্কার নিয়ে ব্যবসায়ীদের বিভক্তি প্রকাশ্যে রূপ নেয়। এতে এক পক্ষের মতামত সভাপতিসহ সব পদে এফবিসিসিআইতে সরাসরি নির্বাচন। এখানে সঠিক নেতৃত্ব দরকার। এ জন্য সংস্কার করতেই হবে। আরেক পক্ষ বলেন, সবাই সস্তা দাবি তুলে সংস্কার চান। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। আরও একটি পক্ষের মত হলো—মনোনীত পরিচালক প্রথা বাতিল করে সরাসরি নির্বাচন করতে ২০০২ সালে জারি করা এসআরওটি সরকার বাতিল করলেই যথেষ্ট। অতীতে বিভিন্ন সময়ে সংস্কার প্রক্রিয়া অনেক দূর এগোলেও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত না হওয়ার কারণে তা বাস্তবায়ন হয় না। ব্যবসায়ীদের ওই সভায় কয়েকশ যুবলীগ নেতা-কর্মীর উপস্থিতি অনেকের মনে ভীতির সঞ্চার করে।  এমন প্রেক্ষাপটে গত ২৯ জানুয়ারি ‘এফবিসিসিআই নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড’ গঠন করা হয়। তিন সদস্যের নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান হলেন সরকারদলীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক আলী আশরাফ। তার সঙ্গে সদস্য হিসেবে আছেন শামসুল ইসলাম ও কে এম এন মনজুরুল হক। নির্বাচন আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয়েছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন-বিটিএমএ সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর আলামিনকে। তার সঙ্গে সদস্য হিসেবে আছেন খায়রুল মজিদ মাহমুদ ও মির্জা আবু মনসুর।

 

সর্বশেষ খবর