শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

অপহৃত শিশু খুঁজতে গিয়ে ১৭ শিশুর সন্ধান পেল র‌্যাব

নিজস্ব প্রতিবেদক

অপহৃত একটি শিশুকে খুঁজতে গিয়ে সংঘবদ্ধ এক অপহরণকারী চক্রের সন্ধান পেয়েছে র‌্যাব। এ চক্রটি এরই মধ্যে ১৭ জন শিশু অপহরণ করেছে। এদের মধ্যে আটজনকে মুক্তিপণের বিনিময়ে তারা ছেড়ে দিয়েছে এবং ছয়জনকে বিদেশে পাচার করেছে। এ ছাড়া দুটি শিশুকে হত্যা করেছে তারা। র‌্যাব উদ্ধার করেছে একজনকে। সেই উদ্ধারকৃত শিশুর তথ্যসূত্র ধরে অপহরণকারী চক্রের ছয়জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় র‌্যাব। গত মঙ্গল ও বুধবার ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে টানা অভিযান চালিয়ে এদের গ্রেপ্তার করা হয়। রাজধানীতে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে গতকাল আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পরিচালক (মিডিয়া) মুফতি মাহমুদ খান সাংবাদিকদের সামনে এসব তথ্য তুলে ধরেন। তিনি জানান, নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকা থেকে গত বছর ২৭ ডিসেম্বর বায়জিদ নামে অপহৃত আট বছর বয়সী একটি শিশুকে উদ্ধার তত্পরতায় নেমে এ চক্রের সন্ধান পাওয়া যায়। অপহরণের পর ওই শিশুর পরিবারের কাছে মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছিল। ওই অভিযোগ পেয়ে র‌্যাব-১১ বিভিন্ন এলাকায় অভিযানে নামে। তখন অপহরণকারীরা নিরুপায় হয়ে ১৮ জানুয়ারি বায়জিদকে চিটাগাং রোড এলাকায় ফেলে পালিয়ে যায়। র‌্যাব ওই শিশুর দেওয়া বেশ কিছু তথ্য নিয়ে অনুসন্ধানে নামে এবং ওই চক্রের দলনেতা মো. জাকির হোসেনসহ (৫৫) ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে। র‌্যাব মুখপাত্র বলেন, গ্রেপ্তারের পর তাত্ক্ষণিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা গত দুই বছরে বায়জিদ ছাড়াও আরও ১৭টি শিশুকে অপহরণের কথা স্বীকার করেছে। কোনো শিশু অপহরণের পর তারা তাদের অচেতন করতে ওষুধ প্রয়োগ করত। মুফতি মাহমুদ বলেন, ‘বায়জিদকে অপহরণের পর চেতনানাশক অতিরিক্ত ডোজের কারণে আকাশ ও নাজমুল নামে দুই শিশু মারা যায়। তাদের কাচপুর সেতুর ওপর থেকে নদীতে ফেলে দিয়েছিল। আমরা লাশ দুটি এবং তাদের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।’ তিনি জানান, শিশু অপহরণ করে তারা মুক্তিপণ আদায় কিংবা পাচার করত। মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পাওয়া শিশুগুলোর মধ্যে ছিল বরিশালের একজন, ঝালকাঠির একজন, ভোলার একজন, ফরিদপুরের একজন, ঢাকার একজন এবং গাজীপুরের একজন। এ ছাড়া বরিশালের আলামিন (৮), শুভ (৭) ও ইমন (১৪) নামে তিন শিশুকে বিদেশে পাচার করা হয়েছে বলে র‌্যাব জানায়। পাচার হওয়া অন্য তিন শিশু হৃদয় (৮), সুমন (৬) ও আনন্দের (৭) ঠিকানা পাওয়া যায়নি বলে তিনি উল্লেখ করেন। র‌্যাবের এই মুখপাত্র আরও জানান, এই অপহরণকারী চক্র রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, নারায়ণগঞ্জ, চিটাগাং রোডে বাসস্ট্যান্ড, কমলাপুর রেলস্টেশন এবং ঢাকার সদরঘাট এলাকায় মাইক্রোবাস নিয়ে ঘুরে বেড়াত এবং পরিবার থেকে কোনো শিশুকে সামান্য বিচ্ছিন্ন হতে দেখলেই চেতনানাশক ওষুধ প্রয়োগ করে মাইক্রোবাসে তুলে ফেলত। এ চক্রের গ্রেপ্তার সদস্যদের মধ্যে রয়েছে দলনেতার স্ত্রী মর্জিনা বেগম ওরফে বানেছা (৪০), মো. টিটু (২৯), মোহাম্মদ হোসেন সাগর ওরফে বেলু ওরফে দেলু (২২), জেসমিন বেগম (৩৭) ও আসলাম ওরফে আলামিন (২৮)।

তাদের কাছে তিন রাউন্ড গুলিসহ একটি পিস্তল, দুটি চাকু, একটি চাপাতি, এক হাজার ২০টি ইয়াবা, অপহৃত শিশুদের অজ্ঞান করার জন্য ব্যবহৃত ২৩টি চেতনানাশক ইনজেকশন, দুটি ব্যবহৃত ইনজেকশন, ১৪টি সিরিঞ্জ ও ১৭টি মোবাইল সেট উদ্ধার করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর