মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

৩৪ কোম্পানির ওষুধ উৎপাদনে নিষেধাজ্ঞা

নিজস্ব প্রতিবেদক

জীবন রক্ষায় মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদনে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ ৩৪টি কোম্পানির উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাই কোর্ট। এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে গতকাল বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেয়। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির উল্লাহ। ৩১ জানুয়ারি শুনানি শেষে বিষয়টি ৯ ফেব্রুয়ারি রায়ের জন্য দিন ধার্য ছিল। ওই দিন ১৩ ফেব্রুয়ারি রায়ের দিন পুনর্নির্ধারণ করা হয়। হাই কোর্টের আদেশে ২০টি কোম্পানির ওষুধ ও ১৪টি কোম্পানির সব ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এসব কোম্পানির লাইসেন্সও বাতিল করা হয়েছে। সেই প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—এক্সিম ফার্মাসিউটিক্যাল, এভার্ট ফার্মা লিমিটেড, বিকল্প ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ডলফিন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ড্রাগল্যান্ড লিমিটেড, গ্লোব ল্যাবরেটরিজ (প্রাইভেট) লিমিটেড, জলপা ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড, কাফমা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, মেডিকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ন্যাশনাল ড্রাগ ফার্মা লিমিটেড, নর্থ বেঙ্গল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, রিমো কেমিক্যালস লিমিটেড (ফার্মা ডিভিশন), রিড ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, স্কাইল্যাব ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, স্পার্ক ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, স্টার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, সুনিপুণ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, টুডে ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ট্রপিক্যাল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ও ইউনিভার্সেল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। অ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—আদ্-দ্বীন ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড, আলকাদ ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড, বেলসেন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, বেঙ্গল ড্রাগস অ্যান্ড কেমিক্যালস (ফার্মা) লিমিটেড, ব্রিস্টল ফার্মা লিমিটেড, ক্রিস্ট্যাল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, মিল্লাত ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, এমএসটি ফার্মা অ্যান্ড হেলকেয়ার লিমিটেড, অরবিট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ফার্মিক ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড, পনিক্স কেমিক্যাল ল্যাবরেটরি লিমিটেড, রাসা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ও সেভ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। তবে এর মধ্যে আদ-দ্বীন, এভার্ট, এমএসটি কোম্পানি আদালতকে অবহিত করেছিল যে তারা জিএমপি (গুডস ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিস) পেয়েছে। এ কারণে ওষুধ প্রশাসনের কাছে জিএমপির বিষয়ে তাদের করা আবেদন যাচাইয়ের জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছেন আদালত। কমিটির সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একজন প্রতিনিধি, বিশেষজ্ঞ কমিটির একজন প্রতিনিধি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের একজন শিক্ষক প্রতিনিধি ও ওষুধ প্রশাসনের একজন প্রতিনিধি। এসব কোম্পানি ইচ্ছা করলে কমিটির কাছে তাদের জিএমপি (গুডস ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিস) মান পর্যবেক্ষণের জন্য আবেদন করতে পারবে। এই কমিটির জিএমপি নীতিমালা অনুসরণ সম্পর্কিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন তাদের লাইসেন্স ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারবে। কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে গৃহীত পদক্ষেপ বছরে চারবার ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের মহাপরিচালককে আদালতে জমা দিতে বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাওয়া কোম্পানির বিষয়ে মনজিল মোরসেদ বলেন, আদালতের নির্দেশ মোতাবেক সাত-আটটি কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল করেছে ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। আদালত এসব কোম্পানির বিষয়ে কিছু বলেননি। তাই তাদের লাইসেন্স বাতিলই থাকবে। এর আগে গত বছরের ৭ জুন ২০টি কোম্পানির ওষুধ উৎপাদন এক সপ্তাহের মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দেন হাই কোর্ট। একই সঙ্গে অন্য ১৪টি প্রতিষ্ঠানের অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ উৎপাদনও বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া মানসম্মত ওষুধ উৎপাদনে ব্যর্থ ২০টি কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল ও ১৪টি কোম্পানির অ্যান্টিবায়োটিক লাইসেন্স বাতিলে সরকারের নিষ্ক্রিয়তাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং তাদের লাইসেন্স কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে হাই কোর্ট। চার সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, পুলিশের মহাপরিদর্শক, র‌্যাবের মহাপরিচালক ও পরিচালক, জাতীয় ভোক্তা অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়। মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদনে ব্যর্থ এসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিলের নির্দেশনা চেয়ে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে ২০১৬ সালের ৫ জুন হাই কোর্টে রিট করা হয়। ২০১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করতে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুককে প্রধান করে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন—জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মো. শাহাবুদ্দিন কবীর চৌধুরী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি অ্যান্ড ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শওকত আলী। বিশেষজ্ঞ কমিটি দেশের ৮৪টি ওষুধ কোম্পানি পরিদর্শন করে সেগুলোর সক্ষমতা মূল্যায়নের পর ২০১৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সংসদীয় কমিটিতে প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনে মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদনে ব্যর্থ ২০টি কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল এবং ১৪ কোম্পানির সব ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক (নন-পেনিসিলিন, পেনিসিলিন ও সেফালোস্পোরিন গ্রুপ) ওষুধ উৎপাদনের অনুমতি বাতিলের সুপারিশ করা হয়। এ বিষয়ে ‘জীবন রক্ষাকারী ওষুধে ভেজাল’ শিরোনামে ২০১৬ সালের ১৯ ও ২০ এপ্রিল দুটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নে নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হয়।

সর্বশেষ খবর