বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন

সুরঞ্জিতের আসনে মতিউর না জয়া?

মাসুম হেলাল, সুনামগঞ্জ

প্রখ্যাত পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া সুনামগঞ্জ-২ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থিতা নিয়ে এলাকায় নানা আলোচনা চলছে। এখন পর্যন্ত দুজনের নাম মানুষের মুখে শোনা যাচ্ছে। একজন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মতিউর রহমান এবং অন্যজন সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী জয়া সেনগুপ্ত। কেউ কেউ সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ছেলে সৌমেন সেনগুপ্তের কথাও বলছেন। দিরাই ও শাল্লা উপজেলা নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-২ আসনে ১৯৭০ সাল থেকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত ন্যাপ, একতা পার্টি, গণতন্ত্রী পার্টি ও আওয়ামী লীগের মনোনয়নে আটবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। সত্তরের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের জোয়ারের মধ্যে ন্যাপ থেকে বিজয়ী হয়ে তখনকার তরুণ সুরঞ্জিত সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। দিরাই-শাল্লায় তার এই সুদৃঢ় অবস্থান থাকার পরও গত উপজেলা নির্বাচনে উভয় উপজেলায় বিএনপি প্রার্থীরা বিজয়ী হন। আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ আসনে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন চৌধুরী একজন শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। তাই উপনির্বাচনে এমন একজনকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া দরকার, যার নেতৃত্বে আগামীতেও আসনটি ধরে রাখা সম্ভব হয়। বর্তমানে দ্বিধাবিভক্ত জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের এক পক্ষ জেলা সভাপতি মতিউর রহমান এবং অন্য পক্ষ সুরঞ্জিতের স্ত্রী জয়াকে প্রার্থী করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এ দুই আলোচিত প্রার্থীর মধ্যে সুনামগঞ্জ সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মতিউর রহমানের গ্রামের বাড়ি দিরাইয়ের শ্যামার চরে। প্রয়াত আবদুস সামাদ আজাদের অনুসারী মতিউর রহমান সুরঞ্জিতের জীবদ্দশাতেই দিরাই-শাল্লায় আলাদা বলয়ে রাজনীতি করেছেন। সুরঞ্জিতের বিপরীতে এ আসনে তিনবার দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন তিনি। অন্য সম্ভাব্য প্রার্থী সুরঞ্জিতপত্নী জয়া সেনগুপ্ত বর্তমানে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত। দলীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মতিউর ও জয়ার নৌকার মনোনয়ন নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ স্পষ্টত দ্বিধাবিভক্ত। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুট, আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আয়ুব বখত জগলু, ছাতক পৌর মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান হাজী আবুল কালাম এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম শামীম প্রমুখের সমর্থন মতিউরের পক্ষে। অন্যদিকে জয়া সেনগুপ্তের পক্ষে রয়েছেন জেলার চার সংসদ সদস্য এম এ মান্নান, মুহিবুর রহমান মানিক, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, শাহানা রব্বানী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল কবির ইমন প্রমুখ। সুরঞ্জিত সমর্থকরা মনে করেন, জয়া সেনগুপ্ত স্থানীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত না থাকলেও সুরঞ্জিতের দীর্ঘদিনের ভক্ত-অনুরক্তদের ভোটে তাকে নিয়ে সহজে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া সম্ভব। আর মতিউর সমর্থকদের দাবি, বিএনপির নাছির চৌধুরীর মতো একজন শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়তে হলে প্রকৃত অর্থে একজন রাজনীতিককে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া প্রয়োজন। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া-না হওয়া নিয়ে জয়া সেনগুপ্ত কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। শাল্লা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান অবনী মোহন দাস বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নেত্রী (শেখ হাসিনা) যে সিদ্ধান্ত নেন, আমরা সেই সিদ্ধান্তের পক্ষে থাকব।’ তার ছেলে সৌমেন সেনগুপ্ত সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের অভিভাবক। তিনি চাইলে আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো একজনকে প্রার্থী করা হবে।’ সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সুরঞ্জিত বাবু আওয়ামী লীগে আসার আগে ও পরে সুনামগঞ্জ-২ আসনে আমি তিনবার দলীয় মনোনয়ন চেয়েছি। কিন্তু জোট ও দলের স্বার্থে মনোনয়নের আবেদন প্রত্যাহার করে তাকে সমর্থন দিয়ে তার পক্ষে কাজ করেছি।’ তিনি বলেন, ‘আমারও শেষ বয়স। তাই নেত্রীর দৃষ্টি আমার দিকে থাকবে বলে বিশ্বাস করি।’

সর্বশেষ খবর