রবিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

বিনা দোষে জেলে ২৫ বছর, অবশেষে খালাস

সালমা আহমেদ, বাঞ্ছারামপুর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি

অবশেষে ২৫ বছর কারাগারে থাকার পর খালাস পেলেন মো. বাবুল মিয়া। আর যে অপরাধের অভিযোগে তিনি গ্রেফতার হয়েছিলেন, প্রমাণিত হলে সেই অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছর কারাদণ্ড হতো। অথচ তাকে কারাগারেই থাকতে হলো ২৫ বছর। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার বাখরনগর গ্রামের ছেলে বাবুল মিয়া ডাকাতি মামলায় ১৯৯২ সালে গ্রেফতার হয়ে বুধবার ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আখতারুজ্জামানের আদালত থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছেন। খালাসে মুক্ত হয়ে বাবুল জানান, ১৯৯২ সালে ডেমরা থেকে সিআইডি পুলিশ তাকে যখন গ্রেফতার করে তখন তিনি ছিলেন ১৮ বছরের কিশোর। এরপর বার বারই পুলিশ, আইনজীবী ও আদালতকে আকুতিভরে বলার চেষ্টা করেছেন তিনি নির্দোষ অথচ কেউ তার কথা শোনেনি। বাবুল আক্তার জানান, ১৯৯২ সালের ২১ আগস্ট রাত ৮টায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম মহাসড়কের সানারপাড়ে তিনি যাত্রী হয়ে একটি বাসে থাকাকালে একদল ডাকাত বাসে ডাকাতি করে। ডাকাতরা ডাকাতি করে চলে গেলেও বাসের হেলপার নজরুল ইসলাম সন্দেহবশে তাকে অভিযুক্ত করে ডেমরা থানায় একটি ডাকাতি মামলা করেন। পুলিশের ডেমরা থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) আশ্রাফ আলী সিকদার তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেন। ১৯৯৩ সালের ৪ জুলাই বিচারকাজ শুরু হয়। বিচার শুরুর ২৪ বছরে মামলার ১১ সাক্ষীর মধ্যে আদালতে মাত্র ৪ জন সাক্ষ্য দেন। অবাক করার বিষয় যে, মামলার বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তা কখনই আদালতে হাজির হননি। বাবুল জানান, ‘এখন আমার বয়স ৪৩। আদালত আমাকে খালাস দিলেও আমার ২৫টি বছর ফিরিয়ে দেবে কে?’ তিনি বলেন, ‘কারাগারে থাকা অবস্থায় আমার বাবা আনোয়ার হোসেন ও মা নিলুফা বেগম সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান ’৯৫ সালে। তার পর থেকে কারাগারে আমাকে দেখতে কেউ আসেনি। বাবা চাকরি করতেন বিমানবাহিনীতে। বাঞ্ছারামপুরের দরিয়াদৌলত ইউনিয়নের বাখরনগরে আমার ৭ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে কেউই আর এলাকায় থাকেন না।’ বাবুলের পৈতৃক ভিটার সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বাবুল জেলে যাওয়ার পর তার বাবা-মা মারা গেলে তার অন্য ভাই-বোনেরা শোকে-দুঃখে এলাকা ছেড়ে চলে যান।’

বিনা বিচারে বাবুলের ২৫ বছর কারাগারে থাকার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক ফোনে বলেন, ‘এত বছর ধরে একজন আসামি জেলে আছেন এটা কী করে সম্ভব! বিষয়টি কি কারও নজরে আসেনি? ২৫ বছর জেলে রাখায় তার প্রতি যে অবহেলা হয়েছে, তার জন্য রাষ্ট্রের উচিত বাবুলের প্রতিটি নষ্ট বছরের জন্য ২ লাখ করে মোট ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া।’ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক জানান, ‘বাবুলের প্রতি যে অন্যায় হয়েছে এজন্য বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত এবং বাবুলকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া দরকার।’

সর্বশেষ খবর