সড়ক দুর্ঘটনায় চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ পাঁচজনকে হত্যার দায়ে বাসচালক জমির হোসেনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হওয়ায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলায় ডাকা পরিবহন ধর্মঘট অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ধর্মঘটে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন খুলনা বিভাগীয় আঞ্চলিক কমিটির ডাকা অনির্দিষ্টকালের এ ধর্মঘট গতকাল ভোর থেকে শুরু হয়েছে। এ সম্পর্কে বিভিন্ন স্থান থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর— যশোর : সড়ক দুর্ঘটনায় সাজাপ্রাপ্ত বাসচালক (চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স) জমির হোসেনের মুক্তি দাবিতে ডাকা অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের ফলে ১০ জেলায় অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার সব রুটে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। ধর্মঘটের বিষয়টি না জানার কারণে বহু যাত্রী যশোরের পুরাতন বাস টার্মিনাল ও খাজুরা স্ট্যান্ড এলাকায় আসেন। কিন্তু গাড়ি না পেয়ে তারা ঝুঁকি নিয়ে ছোট ছোট যানবাহনে গন্তব্যের পথে রওনা হন। এখানকার কাউন্টার ইনচার্জরা জানান, সকাল থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে তাদের কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। আগে থেকে যেসব যাত্রী টিকিট কেটে রেখেছিলেন, তাদের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। খুলনা : ভোর ৬টা থেকে খুলনা বিভাগের ১৮টি রুটে দূরপাল্লার সব যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ধর্মঘটের কারণে খুলনার সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল ও রূপসা ফেরিঘাট টার্মিনাল থেকে ঢাকাসহ দূরপাল্লার কোনো গাড়ি ছেড়ে যায়নি। এ অবস্থায় অনেক যাত্রীকে বাস টার্মিনালে এসে ফিরে যেতে হয়েছে। খুলনা মহানগরীর খালিশপুরে পদ্মা মেঘনা যমুনা তেল পাম্প থেকে জ্বালানি তেল উত্তোলন ও সরবরাহও বন্ধ রয়েছে। ধর্মঘটের কারণে বেনাপোল ও মংলা বন্দর থেকে পণ্য সরবরাহ বন্ধ আছে। এদিকে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সূত্র জানায়, তাদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর ও রাজবাড়ীসহ আরও ছয়টি জেলায় পরিবহন ধর্মঘট শুরু করেছেন সেখানকার শ্রমিক নেতারা। সংগঠনের খুলনা বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক আ. রহিম বক্স দুদু বলেন, বাসচালক জমির হোসেনকে অন্যায়ভাবে সাজা দেওয়া হয়েছে। তার নিঃশর্ত মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে। চুয়াডাঙ্গা : পরিবহন ধর্মঘটে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বাস না চলার কারণে মানুষ এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যেতে পারছেন না। ট্রাক বন্ধ থাকায় জেলার ব্যবসায়ীরা অন্য জেলা থেকে মালামালও নিয়ে আসতে পারছেন না। এতে বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। চুয়াডাঙ্গার এ ধর্মঘট গত বুধবার থেকে শুরু হয়েছে। গতকাল পঞ্চম দিনে দেখা গেছে, চলাচলের জন্য অবৈধ পরিবহনগুলোই এখন মানুষের একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধর্মঘটের কারণে এসব পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে মানুষ যাতায়াত করছেন। উল্লেখ্য, সড়ক দুর্ঘটনায় চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনায় বাসচালক জমির হোসেনকে বুধবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত। ওই দিন থেকেই চুয়াডাঙ্গায় লাগাতার পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়। এরসঙ্গে যোগ হয়েছে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় নতুন করে ডাকা অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট। গোপালগঞ্জ : ১০ জেলায় পরিবহন ধর্মঘটের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে গোপালগঞ্জ জেলা বাস শ্রমিক ইউনিয়নও ধর্মঘট পালন করছে। এর অংশ হিসেবে শ্রমিকরা গতকাল সকালে শহরের কুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে ও গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করে। এ সময় জেলার অভ্যন্তরীণ সব রুট ও ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক দিয়ে ঢাকা, খুলনা, মাদারীপুর, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলায় যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। এতে সাধারণ যাত্রীরা পড়েন চরম ভোগান্তিতে। ধর্মঘটের সময় কিছু থ্রি হুইলার মাঝে মধ্যে চলতে দেখা গেলেও বাস শ্রমিকরা তাতে বাধা দিয়েছেন। তারা বেশ কিছু ইজি বাইক ভাঙচুরও করেন। ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহসহ খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় চলছে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট। বাসচালক জমির হোসেনের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ডাকা এই ধর্মঘটের কারণে সব রুটে পরিবহনসহ সব ধরনের ইঞ্জিন চালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। তারা এ ধর্মঘটের কড়া সমালোচনা করেছেন। সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরায় গতকাল সকাল থেকে পরিবহন ধর্মঘট চলছে। ফলে বিপাকে পড়েন দূর-দূরান্ত থেকে আসা যাত্রীরা। অচল হয়ে পড়েছে ভোমরা স্থল বন্দর। সরেজমিনে দেখা গেছে, ভোর থেকে সাতক্ষীরা শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে কোনো পরিবহন ছেড়ে যায়নি। সাতক্ষীরার আটটি রুটে মিনিবাস ও দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। বেনাপোল : অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটে বেনাপোল বন্দর স্থবির হয়ে পড়েছে। গতকাল সকালে বন্দর থেকে কোনো মালামাল খালাশ হয়নি।
বন্দর থেকে দূর পাল্লার কোনো পরিবহন ছেড়ে যায়নি। এদিকে ভারত থেকে আসা শত শত বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রী আটকা পড়েছেন বেনাপোলের বিভিন্ন পরিবহন কাউন্টারে। বৃদ্ধ, নারী শিশুসহ রোগীরা এ অবস্থায় চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। তারা এ ধর্মঘটকে ধিক্কার জানিয়েছেন।