শিরোনাম
বুধবার, ১ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা
প্রানেরমেলা প্রতিদিন

অনন্য রেকর্ড গড়ে শেষ বইমেলা

মোস্তফা মতিহার

অনন্য রেকর্ড গড়ে শেষ বইমেলা

ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমিতে আজ থেকে বইয়ের পসরা সাজিয়ে বসবে না দোকানিরা। লেখক, প্রকাশক ও বইপ্রেমীদের আনাগোনায় মুখরিত হবে না সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি। এক বছরের প্রতীক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শেষ হলো মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৭। লেখক, প্রকাশক ও বইপ্রেমীদের আজ থেকে দীর্ঘ এক বছরের প্রতীক্ষার পালা। বিক্রি, প্রকাশনা, নিরাপত্তা, নান্দনিক সৌন্দর্য, পরিধি, মানসম্পন্ন বইয়ের প্রকাশনা ইত্যাদি দিক বিবেচনায় সর্বকালের সর্বসেরা মেলা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে এবারের মেলা। শুধু তাই নয়, এবারের মেলা ৪৫ বছরের সফলতার সব ইতিহাস ভঙ্গ করে এক অনন্য রেকর্ড গড়েছে। নিরাপত্তা, শৈল্পিক সৌন্দর্য, প্রকাশনা ও বিক্রি ইত্যাদি নানা দিক দিয়ে এবারের মেলা বিগত সব মেলাকে ছাড়িয়ে গেছে। ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এবারের মেলায় সর্বমোট ৬৫ কোটি ৪০ লাখ টাকার বই বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে শুধু বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বইয়ের বিক্রি ১ কোটি ৫৪ লাখ ৫৪ হাজার ৩০৬ টাকা। গতবার সমগ্র মেলায় ৪২ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছিল। অন্যদিকে বাংলা একাডেমিও গতবারের চেয়ে এবার ২২ লাখ টাকার বেশি বই বিক্রি করে। প্রকাশনার দিকে এবারও এগিয়ে রয়েছে কাব্যগ্রন্থ এবং প্রকাশনার দিকে সবচেয়ে কম সংখ্যক প্রকাশনায় রয়েছে অভিধান। ৩ হাজার ৬৪৬টি বইয়ের মধ্যে কাব্যগ্রন্থ ১ হাজার ১২২টি এবং অভিধান মাত্র ২টি।

নতুন বই ও মোড়ক উন্মোচন : গতকাল শেষ দিন পর্যন্ত এবারের মেলায় নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে ৩ হাজার ৬৪৬টি। বই প্রকাশনার দিক দিয়ে এবারের মেলা এগিয়ে রয়েছে। গতবার মোট ৩ হাজার ৪৪৪টি বই প্রকাশিত হয়েছিল। এবারের মেলায় ২০২টি বই বেশি প্রকাশিত হয়েছে। এবার প্রকাশিত ৩ হাজার ৬৪৬টি বইয়ের মধ্যে মানসম্পন্ন বই ৮৫৮টি। এবার মোট ৮৬৭টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে।

নীতিমালা ভঙ্গের জন্য ১৯টি স্টল চিহ্নিত : গ্রন্থমেলার নীতিমালা ও নিয়ম লঙ্ঘন করায় টাস্কফোর্সের সুপারিশের ভিত্তিতে ১৯টি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

রেকর্ডসংখ্যক স্টল : এবার বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মিলে রেকর্ডসংখ্যক অর্থাৎ ৪১১টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৬৭ ইউনিট স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়। বাংলা একাডেমির দুটি প্যাভিলিয়ন ছিল। একটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এবং অন্যটি একাডেমি প্রাঙ্গণে। এবার এক ইউনিটের ২০৩টি, দুই ইউনিটের ১৩৯টি, তিন ইউনিটের ৩৪টি এবং চার ইউনিটের ২১টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়।

 শিশুদের জন্য ৪৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৬১টি ইউনিটের স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়।

সমাপনী অনুষ্ঠান : সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে গ্রন্থমেলার ২০১৭-এর সমাপনী অনুষ্ঠান। এতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। গ্রন্থমেলার প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৭-এর সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ। প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. ইব্রাহীম হোসেন খান। সভাপতিত্ব করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম।

আসাদুজ্জামান নূর বলেন, এবারের গ্রন্থমেলা সার্বিক দিক দিয়ে সফল ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। লেখক-পাঠক-প্রকাশক সবার সম্মিলিত ভাবনা ও প্রচেষ্টায় আগামীতে মেলায় আরও নতুনত্ব ও ইতিবাচকতা সংযোজিত হবে বলে আমরা আশা করি।

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ পুরস্কার প্রদান : অনুষ্ঠানে কবি শামীম আজাদ ও লেখক অনুবাদক নাজমুন নেসা পিয়ারিকে বাংলা একাডেমি পরিচালিত সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ পুরস্কার ২০১৬ প্রদান করা হয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকদের হাতে পুরস্কারের ৫০ হাজার টাকার চেক, পুষ্পস্তবক, সনদ এবং ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।

গুণীজন পুরস্কার প্রদান : ২০১৬ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার-২০১৭, ২০১৬ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে গুণমান ও শৈল্পিক বিচারে সেরা গ্রন্থের জন্য তিনটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০১৭, ২০১৬ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য রোকনুুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার-২০১৭ এবং ২০১৭ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে নান্দনিক স্টল/প্যাভিলিয়ন সজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে তিনটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার-২০১৭ প্রদান করা হয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত সব প্রকাশককে ২৫ হাজার টাকার চেক, সনদ ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।

উৎসর্গকরণ : ১২ জন বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও লেখকের নামে এবারের বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশকে ১২টি চত্বরে বিভক্ত করা হয়। যাদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ১২টি চত্বর উৎসর্গ করা হয় তারা হলেন : সৈয়দ শামসুল হক, শওকত ওসমান, রফিক আজাদ, শহীদ কাদরী, আবদুল্লাহ আল-মুতী শরফুদ্দীন, সরদার জয়েনউদদীন, নূরজাহান বেগম, আহসান হাবীব, আবদুল গফুর হালী, মদনমোহন তর্কালংকার, আমীর হোসেন চৌধুরী ও দীনেশচন্দ্র সেন। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ উৎসর্গ করা হয় শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নামে।

ইয়াসমীন আরার ‘ফরিদপুরের উপভাষা আন্বায়িক গঠন’ : বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন প্রকাশ করেছে ইয়াসমীন আরার ‘ফরিদপুরের উপভাষা আন্বায়িক গঠন’। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন হাশেম খান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর