বুধবার, ১ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

সারা দেশে দ্রুত বিচারের দৃষ্টান্ত তৈরি হচ্ছে

———— আনিসুল হক

নিজস্ব প্রতিবেদক

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, জাপানি নাগরিক হোশি কোনিও হত্যা মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির মাধ্যমে সারা দেশে দ্রুত বিচারের দৃষ্টান্ত তৈরি হচ্ছে। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্রুততম সময়ে কোনো খুনের মামলা শেষ করার উজ্জ্বল উদাহরণ। যে গতি বিচারিক আদালতে এসেছে, তা ধরে রাখলে নতুন করে মামলাজট হবে না। এর আগে রাজন-রাকিব হত্যা মামলার বিচারও দ্রুততম সময়ে হয়েছিল। রংপুরে জাপানি নাগরিক হোশি কোনিও হত্যা মামলার রায়ের পর এ রায় এবং সাম্প্রতিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আইনমন্ত্রী গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। এ সময় আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মোহাম্মদ জহিরুল হক উপস্থিত ছিলেন। হোশি কোনিওর মামলা দ্রুততম সময়ে শেষ করায় রংপুরের আদালত, সময় না চাওয়ায় প্রসিকিউশন এবং যথাসময়ে সাক্ষী হাজির করায় পুলিশকে এজন্য ধন্যবাদ জানান আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, এ মামলায় যে উদাহরণ সৃষ্টি হলো, তার ধারাবাহিকতায় বিচারের বিলম্বের যে সংস্কৃতি ছিল তা দূর হবে।’ সংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সাধারণ মানুষের মামলা যাতে তাড়াতাড়ি শেষ হয়, আমরা তা নিশ্চিত করার জন্য এগুলোকে টেস্ট কেস হিসেবে ব্যবহার করছি।’ তিনি বলেন, ‘নজরদারিতে থাকলে দ্রুত মামলা শেষ করা যায়— এ বার্তা আমরা প্রসিকিউশন ও নিম্ন আদালতের কাছে পৌঁছে দিতে চাই।’ মন্ত্রী বলেন, “বিলম্বে বিচার হওয়ার কারণে যে একটা চিন্তাধারা ছিল ‘জাস্টিস ডিলেইড, জাস্টিস ডিনাইড’, সেই যে একটা সংস্কৃতির মধ্যে আমরা পড়ে যাচ্ছিলাম, তা থেকে বেরিয়ে আসার পদক্ষেপগুলো নিতে শুরু করেছি।” গত নির্বাচনের আগে-পরে সহিংসতার মামলা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, ‘আমি তদন্তের বিষয়ে একটি কথা বলি, আমরা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো হস্তক্ষেপ করি না। আমরা চাই তদন্তটা নিরপেক্ষ হোক। যারা দোষী তারাই আদালতের কাঠগড়ায় বিচারের জন্য দাঁড়াক। না হলে আপনারাই বলবেন, হস্তক্ষেপ করে আমরা বিএনপি-জামায়াতের লোকজন ভরে দিচ্ছি। এজন্য তদন্ত সংস্থাকে যতটা সম্ভব সময় দেওয়ার চেষ্টা করি।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন প্রতিটি মামলায় তার অনুপস্থিতি দেখিয়ে অন্তত ২০ বার করে সময় নিয়েছেন। এভাবে সময় নিলে মামলা এমনিতেই দেরি হয়ে যায়। তবু প্রসিকিউশন থেকে আমরা এসব মামলা অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’ শাস্তি হলেও খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন— বিএনপি নেতা ও সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদের এই বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘জানি না তিনি কোন প্রেক্ষাপটে এটা বলেছেন। মামলা আছে আদালতে। রায় দেবেন জজ সাহেব। আমি এখন বলতে পারব না যে রায় কী হবে, কী হবে না। তাই এ কথাটা কোন রাজনৈতিক অ্যাঙ্গেল থেকে বলা হয়েছে আমি জানি না। এটা বলা অবান্তর।’ প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ৩ অক্টোবর রংপুরের কাউনিয়ার আলুটারি গ্রামে জাপানি নাগরিক হোশি কোনিওকে হত্যা করা হয়। গতকাল রংপুরের বিশেষ জজ আদালত এ হত্যার রায় ঘোষণা করে পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে।

ধর্মঘট না করে আদালতে যান : পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘট সম্পর্কে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘আমি মনে করি, রায়ের প্রেক্ষাপটে পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘট দুঃখজনক। যারা ধর্মঘট করছেন তাদের উদ্দেশে আমি কেবল এটুকু বলতে চাই, আপনাদের যদি কোনো বক্তব্য থাকে, আপনারা যদি সংক্ষুব্ধ হয়ে থাকেন, তাহলে আদালতের সামনে আপনাদের বক্তব্য উপস্থাপন করতে পারেন। আইনে সেই বিধান আছে।’ তিনি বলেন, ‘জনগণকে কষ্ট না দিয়ে বক্তব্য থাকলে তা স্পষ্ট করুন, যদি যুক্তিসংগত হয়, তাহলে আমি বলতে পারি, এটা দেখা হবে। কিন্তু যদি অযৌক্তিক হয়, তাহলে দেখা হবে না।’ রায়ের বিরুদ্ধে ধর্মঘট করা আদালত অবমাননা কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এটা আদালত অবমাননা কিনা তা নির্ভর করে আদালত এটাকে কীভাবে গ্রহণ করবে তার ওপর। অবমাননার ব্যাপারটা আদালতের বিবেচ্য। আদালত যদি মনে করে, আমি এটা ধর্তব্যের মধ্যে নেব না, তাহলে এটা অবমাননা মনে করবে না। এটাই আইন। আর যদি অবমাননা মনে করে, তাহলে এটা অবমাননা হবে।’ প্রসঙ্গত, মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ, সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনায় বাসচালক জমির হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। এজন্য ঢাকাসহ সারা দেশে ধর্মঘট পালন করছেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর