বুধবার, ৮ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

জয় বাংলায় প্রকম্পিত সুরের সমুদ্র

আর্মি স্টেডিয়ামে তারুণ্যের ঢল

মোস্তফা মতিহার

জয় বাংলায় প্রকম্পিত সুরের সমুদ্র

বনানী নৌবাহিনীর সদর দফতর থেকে আর্মি স্টেডিয়ামের গেট পর্যন্ত দীর্ঘ লাইনের বিশাল জনস্রোত। এক সময় সেই স্রোতের ঢেউ আছড়ে পড়ে রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে। অল্প সময়ের মধ্যেই কানায় কানায় ভরে যায় স্টেডিয়াম। চোখে আনন্দের ঝিলিক, হৃদয়ে বাংলাদেশ ও কণ্ঠে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে এমন দৃশ্যে বার বার ফুটে উঠছিল যেন মুক্তির আনন্দবার্তা। ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে আর্মি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ‘জয় বাংলা’ কনসার্টের চিত্রটা গতকাল ছিল এমনই। এটি যেন শুধু কনসার্টই ছিল না, ছিল মুক্তির আনন্দে উচ্ছ্বসিত হওয়ার একটি দিন। স্বাধীনতার চেতনায় শানিত হয়ে তারুণ্যের ঢলে নতুন প্রজন্ম দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে যেন মুক্তির আনন্দে হারিয়ে যায় সুরের সমুদ্রে। তরুণ প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের তাত্পর্য তুলে ধরার পাশাপাশি মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা জাগানিয়া গানগুলো পরিবেশন করে বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় ব্যান্ড দল ওয়ারফেজ, চিরকুট, আর্বোভাইরাস, লালন, ক্রিপটিক ফেইট, নেমেসিস, শিরোনামহীন, শূন্য ও স্পন্দন-৭২। অনুষ্ঠানে নিজস্ব গানের পাশাপাশি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গানও পরিবেশন করেন ব্যান্ডের শিল্পীরা। ‘বীর ওঠো বীর বাঙালি’, ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দিবো রে’, ‘জন্মভূমির অপমান আর সইবো না’, ‘আয় আয় বন্ধুরা ফিরে আয়’ ও ‘এখনই নামবে আলো’, মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’ ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়; ইত্যাদি গানে গানে মুক্তির চেতনায় আনন্দ ও আবেগের উচ্ছ্বাস তৈরি হয় স্টেডিয়ামে আগত সবার মাঝে।

ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে বিকাল পৌনে ৫টায় শুরু হয় এই আয়োজন। এ সময় শিল্পীদের সঙ্গে শ্রোতারাও ঠোঁট মেলান এই গানের সুরে। এরপর মঞ্চে আসে বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামালের প্রতিষ্ঠিত ব্যান্ড দল ‘স্পন্দন ৭২’। ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ গান নিয়ে শুরু হয় এ দলের পরিবেশনা।

কনসার্টের এবারেরও বড় চমক ছিল বড় পর্দায় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটির রঙিন সংস্করণের প্রদর্শন। এই কনসার্টের আয়োজন করে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইয়াং বাংলা। সুরের এই আসরে স্টেডিয়ামে আগতরা শুধু সংগীতের সুধাই পান করেননি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শানিত ‘জয় বাংলা’ স্লোগানেও থেকে থেকে প্রকম্পিত করেছিল সমগ্র স্টেডিয়ামকে। দর্শকে কানায় কানায় পরিপূর্ণ স্টেডিয়ামের প্রতিটি কোনা থেকে স্লোগানটির উচ্চারণে বাঙালির মুক্তির উচ্ছ্বাস প্রকাশ পেয়েছিল ভিন্নরূপে। এ ছাড়া কনসার্টের মঞ্চের পাশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি আর তার সেই তর্জুুনী বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছিল ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের দিনটির কথা। কনসার্টটি উপভোগ করার জন্য প্রায় ৬০ হাজার সংগীতানুরাগী ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিবন্ধন করে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে এই সংগীতায়োজন উপভোগ করেছেন বঙ্গবন্ধুর নাতনি সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও নাতি  রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। এ ছাড়া দর্শকসারিতে বসে গান শুনেছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। দেশের শ্রোতাদের সঙ্গে অনেক বিদেশি অতিথিকেও দেখা গেছে জমজমাট এই কনসার্টে।

সর্বশেষ খবর