শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৯ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

মাদকে দাদন ব্যবসা তুঙ্গে

সাঈদুর রহমান রিমন

মাদকে দাদন ব্যবসা তুঙ্গে

মাদকে দাদন ব্যবসা এখন তুঙ্গে। প্রতি এক লাখ টাকা দাদনে মাসে দেড় লাখ টাকা লাভ! অলীক এই লাভের খবরে মানুষ ছুটছে মাদক ব্যবসায়ীদের দ্বারে। নিজেদের কষ্টার্জিত টাকা অবলীলায় তুলে দিচ্ছে তাদের হাতে। বিনিময়ে প্রতিদিনই লাভের টাকা হাতে পাচ্ছে বিনিয়োগকারীরা।

দেড় শ গুণ নিশ্চিত লাভের আশায় ধনাঢ্য ব্যক্তিদের পাশাপাশি খুদে ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, গৃহবধূ এমনকি এনজিওগুলোর ঋণগ্রহীতা সদস্যরা পর্যন্ত মাদকের ব্যবসায় দাদনের পুঁজি বিনিয়োগ করছেন। আর নগদ টাকার জোগান পেয়ে খুদে মাদক ব্যবসায়ীরা এখন ‘মাদকের ডিলারে’ পরিণত হচ্ছে। মাদক বাজারের বিস্তারও ঘটছে বেপরোয়া গতিতে।

মাদকে ‘পুঁজি বিনিয়োগের’ দাদন বাণিজ্য দেশে প্রচলিত এনজিওগুলোর চক্রবৃদ্ধি সুদ, এমএলএম কোম্পানিগুলোর স্বপ্ন দেখানো ধাপ্পাবাজি, এমনকি হুন্ডি কাজলের শতভাগ লাভের ব্যবসাকেও হার মানিয়েছে। সেখানে দেনা-পাওনার হিসাব হয় দিন চুক্তিতে। প্রতিদিনই পরিশোধ করা হয় লাভের টাকা। দাদনের পুঁজিও রয়ে যায় পাওনা হিসেবেই। বিনিয়োগের দেড় শ গুণ লাভের নজিরবিহীন এই বাণিজ্যে বহু মানুষ রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছে। আবার দেড় শ গুণ লাভের লোভে অনেকের পুঁজিসহ সর্বস্ব হারানোরও নজির রয়েছে।

বিশেষ একটি গোয়েন্দা সংস্থার একটি টিম দেশে ইয়াবাসহ মাদকের বেপরোয়া বাণিজ্যের কারণ অনুসন্ধানে নেমে ‘দাদন ব্যবসা’র চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকাসমূহে মাদক চোরাচালানে কমবেশি পুঁজি বিনিয়োগের দৃষ্টান্ত থাকলেও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ‘মাদকে দাদন ব্যবসা’র দৌরাত্ম্য লক্ষ্য করা গেছে। গোয়েন্দা বিভাগ এরই মধ্যে পেশাদার মাদক ব্যবসায়ীসহ দাদন ব্যবসায়ীদেরও তালিকা তৈরি করেছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশসহ গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনটি এ সপ্তাহেই সরকারের উচ্চপর্যায়ে জমা হবে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নিজের শেষ সম্বল বাড়ির ভিটে ও চার চালা টিনের ঘর বিক্রির ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা দুজন ইয়াবা ব্যবসায়ীকে পুঁজি হিসেবে দেন জনৈক শওকত হোছাইন। তার বাড়ি কক্সবাজারের রামু উপজেলার পল্লীতে। মাত্র দেড় বছরেই শওকত কোটিপতি বনে গেছেন। গোয়েন্দা বিভাগের তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, মাদকে পুঁজি বিনিয়োগকারী শওকত হোছাইনসহ অন্যদের বিরুদ্ধে কোনোরকম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রমাণ মেলেনি। স্থানীয় থানায় তাদের নামে কোনো মামলা বা জিডি নেই। অথচ তারাই পুঁজি দিয়ে মাদক বাণিজ্যের মতো সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অপরাধ করে যাচ্ছেন। রাজধানীর পল্লবী-কালশী বুড়ির টেকের এক ব্যক্তি পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীদের পুঁজির জোগান দিচ্ছেন। বর্তমানে তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক। দাদনের লাভ হিসেবে প্রতিদিন দেড় লাখ টাকা পকেটে তোলেন। পল্লবী-রূপনগর এলাকায় এক ব্যক্তির দাদনের লাখ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে দুই ডজনেরও বেশি মাদক ব্যবসায়ী মাদকের আলাদা স্পট খুলে বসেছেন।

রাজধানীর খিলগাঁও তালতলা সিটি মার্কেট এলাকায় এক ব্যক্তির দাদনের টাকায় গড়ে উঠেছে ১২টি মাদক স্পট। এসব স্পট পরিচালনা করছেন সোহেল, সুন্দর জনি, মাসুদ, জংসিন, রাসেল ওরফে কানা রাসেল, রনি, মিরু, সাগর ওরফে ইয়াবা সাগর, কথিত পুলিশের সদস্য ইয়াবা মামুন, বাবা সুজন, জোবায়ের, তুষার, ফাতেমা, কুলসুম, পাখি প্রমুখ। তালতলা মার্কেটের মাছ বাজারের দোতলায় ও নিচতলায় দাদনের টাকায় বড় আকারের মাদক বাজার চালু রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের বার বার আটক করে জেল হাজতে পাঠানোর পরও শুধু দাদন-পুঁজির কারণেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাদকের দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বংশাল এলাকার এক ওয়ার্ড কাউন্সিলর অস্ত্র বাণিজ্য বাদ দিয়ে এখন মাদক বাণিজ্যে পুঁজি বিনিয়োগ করছেন। টিকাটুলীর ফকিরবানু মার্কেটের প্রভাবশালী এক ব্যবসায়ীর পুঁজিতে চলছে কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী আমির হোসেনের চারটি মাদক স্পট। এ প্রসঙ্গে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ঢাকা মেট্রো উপ-অঞ্চলের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, মাদক বিক্রেতাদের চেয়েও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে পুঁজির জোগানদাতা দাদন ব্যবসায়ীরা। মূলত তাদের কাছ থেকে চাহিদামাফিক টাকা পুঁজি পাওয়ায় বিপুল পরিমাণ মাদক আমদানি ও তা বাজারজাতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বিক্রেতারা। মাদক বিক্রেতাদের পাশাপাশি তাদের কাছে পুঁজি খাটানো দাদন ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারেও শিগগির অভিযান চালানোর কথা জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর