বুধবার, ১৫ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

জীবন দিয়ে হলেও মানুষের জন্য কাজ করব

লক্ষ্মীপুরের জনসভায় নৌকায় ভোট চাইলেন শেখ হাসিনা

সাইদুল ইসলাম পাবেল, লক্ষ্মীপুর

জীবন দিয়ে হলেও মানুষের জন্য কাজ করব

লক্ষ্মীপুরে লাখো মানুষের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ সব নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট চাইলেন। তিনি বলেন, মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ও উন্নত সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়তে বাবার মতো জীবন দিতে হলেও আমি প্রস্তুত। গতকাল লক্ষ্মীপুর জেলা স্টেডিয়াম মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা  এসব কথা বলেন। তিনি প্রায় ২০ বছর পর লক্ষ্মীপুর সফর করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার নিজের ব্যক্তিগত জীবনে কোনো চাওয়া পাওয়া নেই। আমি সব হারিয়েছি। আমার মা-বাবা, ভাই সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে তথা বাংলাদেশের মানুষের কাছে মা-বাবার স্নেহ ফিরে পেয়েছি। তাই আপনাদের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে দিতে চাই। তিনি বিএনপি-জামায়াত জোটের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে মানুষকে দিতে। আর বিএনপি ক্ষমতায় আসে মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে। মানুষকে হত্যা করা, খুন করা, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করা, জনগণের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন আর এতিমখানার টাকা আত্মসাৎ করাই হচ্ছে তাদের চরিত্র।

প্রধানমন্ত্রী সরকারের সফলতা তুলে ধরে আরও বলেন, কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও তথ্য প্রযুক্তিসহ সব ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়নে এগিয়ে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এখন বাংলাদেশ। দেশে কোনো গৃহহারা ও ভূমিহীন থাকবে না। প্রত্যেক মানুষকে বিনা পয়সায় ঘরবাড়ি করে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে নিয়ে যখন অর্থনৈতিক মুক্তির দিকে সফলভাবে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এভাবে বাংলাদেশে হত্যা, খুন ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু হয়। একইসঙ্গে শুরু হয় অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের রাজনীতি। ফলে দেশ ক্রমান্বয়ে পিছিয়েছে। গরিব গরিবই থেকেছে। দীর্ঘ ২১ বছর পর ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে আবার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের কাজ শুরু হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট যখন ক্ষমতায় ছিল তখন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ঘরে থাকতে দেওয়া হয়নি। তারা ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করেছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন,  বিএনপির আন্দোলনের মরা গাঙ্গে জোয়ার আসে না। ৫৯৬ জনের কমিটির কারও মিছিল-মিটিং করার সাহস নেই। তারা এখন নালিশি পার্টিতে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে শেখ হাসিনার আমলে ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ১২ কোটি মানুষ এখন মোবাইল ব্যবহার করছে। উন্নয়নের বাংলাদেশে জনগণ এখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকুর সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন, দলীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক হারুনুর রশিদ, এ কে এম শাহজান কামাল এমপি, লায়ন এম আউয়াল এমপি, আবদুল্লাহ আল মামুন এমপি, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, পৌর মেয়র আবু তাহের প্রমুখ। জেলা সাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন জনসভায় উপস্থাপনা করেন।

যেসব প্রকল্প উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী : রামগতি ও কমলনগর মেঘনা নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্প (১ম পর্যায়), চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন, যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, উপজেলা পরিষদ ভবন (লক্ষ্মীপুর সদর), উপজেলা পরিষদ ভবন কমলনগর, উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়াম (কমলনগর), লক্ষ্মীপুর পৌর আইডিয়াল কলেজ ভবন, মোহাম্মদিয়া বাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র নির্মাণ (তৃতীয় ও ৪র্থ), উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতর ও প্রাণী হাসপাতাল (কমলনগর)। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতাল, মজু চৌধুরীর হাটে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড এর প্রশাসসিক ভবন ও নাবিক নিবাস, লক্ষ্মীপুর সদর পুলিশ ফাঁড়ি, পুলিশ অফিসার্স মেস, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ভবন, লক্ষ্মীপুর সদর খাদ্য গুদাম, রামগঞ্জ উপজেলায় ১৩২/৩৩ কেবি গ্রিড উপ-কেন্দ্র নির্মাণ, পিয়ারাপুর সেতু, চেওয়াখালী সেতু, মজু চৌধুরীর হাটে নৌ-বন্দর, লক্ষ্মীপুর পৌর আধুনিক বিপণিবিতান, আনসার ও ভিডিপি ব্যাটালিয়ন সদর দফতর কমপ্লেক্স (রামগঞ্জ), লক্ষ্মীপুর পৌর আজিম শাহ (রা) হকার্স মার্কেট, লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ একাডেমিক ভবন-কাম পরীক্ষা কেন্দ্র, লক্ষ্মীপুর পুলিশ লাইন্স মহিলা ব্যারাক, লক্ষ্মীপুর শহর সংযোগ সড়কে পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন (রায়পুর), ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন (কমলনগর)।

সর্বশেষ খবর