রবিবার, ১৯ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

চট্টগ্রাম কেন জঙ্গি টার্গেট

অজানা আতঙ্ক জনমনে

রিয়াজ হায়দার, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে সাম্প্রতিক জঙ্গি বিস্তারে উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ। চট্টগ্রামে সম্প্রতি কেনইবা বেড়েছে জঙ্গি তৎপরতা? সীতাকুণ্ডেই কেন এই জঙ্গি আস্তানা?  এমন সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজবার পাশাপাশি  অজানা শঙ্কাও ভর করেছে চট্টগ্রামের নাগরিক মনে। ভৌগোলিক অবস্থানগত সুবিধা আর সহায়ক রাজনৈতিক পরিবেশের কারণেই চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ঘাঁটি করেছে জঙ্গিরা। সীতাকুণ্ড ছাড়াও মিরসরাই, পটিয়া, বাঁশখালী, হাটহাজারী ও নগর চট্টগ্রামের লালখানবাজার, হালিশহর, বায়েজীদ; প্রায় সবখানেই  জঙ্গি বিস্তারে উদ্বেগ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে চট্টগ্রামের নাগরিক মনে।   

খোদ চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা দুই দিন আগেই জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় স্বীকার করেছেন চট্টগ্রামে জঙ্গি তৎপরতা বেড়েছে। তিনি বলেন, জঙ্গিদের তৎপরতা বিষয়ে পুলিশ সতর্ক রয়েছে বলেই এসব অভিযানে জঙ্গি গ্রেফতার সম্ভব হচ্ছে। ব্যাপক বিনিয়োগের সম্ভাব্যতার কারণে বিদেশিদের উদ্বিগ্ন করতেই চট্টগ্রামে জঙ্গিরা তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে বলে মনে করেন এসপি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী মনে করেন, সমুদ্রবন্দরসহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার অবস্থান এবং চট্টগ্রামকে ঘিরে নিকট প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে উন্নয়ন সংযোগ ও অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন মহাপ্রকল্প গৃহীত হওয়ায় সামগ্রিক পরিবেশ নষ্ট করতেই জঙ্গিরা চট্টগ্রামকে বেছে নিয়েছে। এর পেছনে থাকতে পারে  দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গভীর ষড়যন্ত্র। এদিকে, রাজনৈতিক অঙ্গনকে সহিংস করতে জঙ্গিদের লালন করছে বিশেষ গোষ্ঠী’—এমনটি মনে করেন চট্টগ্রামের রাজনৈতিক বিশ্লেষক, মুক্তিযোদ্ধা, প্রফেসর ইদ্রিস আলী। তিনি বলেন, দুটি স্পেশাল ইকোনমিক জোনসহ ব্যাপক বিনিয়োগের সম্ভাব্যতা ঠেকাতেই চট্টগ্রামে  জঙ্গিরা তাদের  ঘাঁটি বাড়িয়েছে।  জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক পেশাজীবী নেতা অ্যাডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী মনে করেন, পাহাড় ও সমুদ্র লাগোয়া সীতাকুণ্ড ও মীরসরাইকেই জঙ্গিরা তাদের নির্বিঘ্ন ঘাঁটি মনে করছে। এর পেছনে আরেকটি কারণ হলো ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের সংযুক্তি। এ দুটো উপজেলার ওপর দিয়ে এ মহাসড়ক দেশের অন্য অঞ্চলের সঙ্গে চট্টগ্রামের সংযোগের পথ হওয়ায় তাদের গমনাগমন ও অভিযানের সুবিধার জন্য জঙ্গিরা নিরাপদ স্থল মনে করছে।    চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শুকলাল দাশ বলেন, সীতাকুণ্ড কেন্দ্রিক জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে ২০১৩-১৪ সালের ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে নাশকতাকারীদের যোগসূত্র থাকতে পারে। ভবিষ্যতেও রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতার লক্ষ্যে মহাসড়ক লাগোয়া এ অঞ্চলটিতে জঙ্গি ঘাঁটি করা হচ্ছে। জঙ্গিদের দমাতে প্রশাসনিক শক্তির পাশাপাশি সামাজিক প্রতিরোধেরও তাগিদ দিয়েছেন বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের চৌধুরী। তার মতে, তৃণমূল পর্যায় থেকে দেশপ্রেম ও মানবতার শিক্ষা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রামের মতো বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পন্ন অঞ্চলগুলো জঙ্গিদের টার্গেট থেকে মুক্ত হবে না।

সর্বশেষ খবর