বুধবার, ২৯ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

ছাত্রলীগের টোলবক্স, হুমকিতে হাজার কোটি টাকার শিল্প

চট্টগ্রামে শঙ্কায় ১০ হাজার শ্রমিক

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের শান্তিরহাট-সংলগ্ন কুসুমপুরা ব্রিজের পাশে স্থানীয় ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতৃত্বে পিলার গেড়ে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের যানবাহন থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। একটি চক্র প্রতি  গাড়ি থেকে ৪০০ থেকে এক হাজার পর্যন্ত টাকা আদায় করছে। এ কারণে ছয় দিন ধরে ওই সড়ক দিয়ে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর মালবাহী কোনো যানবাহন যাতায়াত করতে পারছে না। ফলে কোলাগাঁও এলাকায় রপ্তানিমুখী ১২টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান এখন হুমকির মুখে। শঙ্কায় আছেন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক। মালিকরাও প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে পটিয়া আসনের সংসদ সদস্য শামসুল হক চৌধুরীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

তবে পটিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মুহাম্মদ নেয়ামত উল্লাহ বলেন, ‘সড়ক নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় স্থানীয় এমপির নির্দেশে পিলার দেওয়া হয়েছে। তবে সেখানে টাকা নেওয়ার বিষয়টি আমরা অবগত নই। অভিযোগ পেলে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বলা হয়েছে, তারা যাতে নিজস্ব স্টিকার লাগানো গাড়ি এবং ছোট গাড়িতে করে যানবাহন পরিবহন করে। কিন্তু তারা বড় গাড়িতে করে ভারী মালামাল পরিবহন করছে। এতে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যুবলীগ পটিয়া উপজেলার সাধারণ সম্পাদক এম এ রহিম বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জানা নেই। তবে দলের নাম ব্যবহার করে কেউ চাঁদাবাজি করলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া বিষয়টি যেহেতু শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত তাই এ ব্যাপারে আমরা এমপির সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করব।’ কুসুমপুরা ইউনিয়নের এক ইউপি সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘কুসুমপুরা-কান্তিরহাট সড়ক দিয়েই কোলাগাঁও ইউনিয়নের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর গাড়ি যাতায়াত করে। কিন্তু ছয় দিন ধরে এসব গাড়ি থেকে টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে শুনেছি। পুলিশ এলে তারা আর থাকে না।’ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা বলেন, স্থানীয় প্রভাব দেখিয়ে বিভিন্ন সময় এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা আদায় করা হয়। শ্রমিকদের মধ্যেও নানাভাবে অসন্তোষ তৈরি করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হয়। এ কারণে আমাদের শিল্পপ্রতিষ্ঠান পার্শ্ববর্তী কর্ণফুলী অথবা আনোয়ারা উপজেলায় সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। জানা যায়, কোলাগাঁও ইউনিয়নে বর্তমানে সরকারিভাবে নির্মাণাধীন আছে ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র এবং ১১০ মেগাওয়াটের এনার্জি প্যাক-২ নামের দুটি প্রকল্প। একই সঙ্গে ওই এলাকায় আছে দুটি গার্মেন্টস, দুটি টেক্সটাইল মিল, চারটি ডায়িং মিল, দুটি স্পিনিং মিল, দুটি প্রিন্টিং মিল। শতভাগ রপ্তানিমুখী এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে রপ্তানিযোগ্য পণ্য আনা এবং আমদানিকৃত কাঁচামাল নিয়ে দৈনিক অন্তত ২০ থেকে ৩০টি গাড়ি যাতায়াত করে। এসব যানবাহন চট্টগ্রাম নগর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ভেল্লাপাড়া-কান্তিরহাট-কোলাগাঁও হয়ে যাতায়াত করত। কিন্তু সম্প্রতি এ সড়কে সংস্কার কাজ শুরু হলে বিকল্প হিসেবে মহাসড়কের শান্তিরহাট-কুসুমপুরা-কান্তিরহাট হয়ে কোলাগাঁও যাচ্ছে। এখন ওই পথে পিলার বসিয়ে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

 

সর্বশেষ খবর