সোমবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
তামাকজাত দ্রব্যের ট্যাক্স বৃদ্ধি

বাড়ছে রাজস্ব, কমছে মৃত্যুঝুঁকি

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশ্বে তামাকজাতদ্রব্য গ্রহণকারী শীর্ষ স্থানীয় দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটি। দেশের প্রায় ৪৩ শতাংশ তরুণ বিড়ি, সিগারেট এবং ধূমপানবিহীন অন্যান্য তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণ করে থাকে। তবে ব্লুমবার্গ ইনিশিয়েটিভে তামাকের ব্যবহার কমানোর জন্য তালিকায় থাকা পাঁচটি দেশের মধ্যেও বাংলাদেশ অন্যতম। তামাকজাত দ্রব্য সেবনের ফলে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। শুধু ধূমপায়ী ব্যক্তিই যে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকছেন তা নয়, একই সঙ্গে তার আশপাশের মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব স্বাস্থ্যঝুঁকিগুলোর মধ্যে আছে ফুসফুসের ক্যান্সার, মুখ ও কণ্ঠনালিতে ক্যান্সার এবং হৃদরোগ।

ঢাকা আহছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ইকবাল মাসুদের একটি প্রতিবেদনে জানা যায়, বাংলাদেশই প্রথম উন্নয়নশীল দেশ, যারা তামাক নিয়ন্ত্রণ কনভেনশন ২০০৩ অনুযায়ী বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করেছে। সে অনুযায়ী ২০০৪ থেকে এরা একটি টিম হয়ে কাজ করছে। এই কনভেনশনের ৬ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা আছে, পক্ষগুলোকে চুক্তি অনুযায়ী জাতীয় স্বাস্থ্য পলিসিতে ট্যাক্স এবং মূল্য বিষয়টি অবশ্যই রাখতে হবে। এ ছাড়া পরামর্শ থাকবে সরকার যেন তামাকজাত দ্রব্যের ওপর ট্যাক্স বাড়ায়, যাতে করে এর ভোক্তা সংখ্যা কমে। আর ধূমপানমুক্ত কাজের এলাকা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ কাজের জায়গা সৃষ্টি করে। কারণ সেখানে কর্মীরা ধূমপানের ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকে। তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডব্লিউএইচও-এর এই চুক্তির সঙ্গে পূর্ণ সম্মতির জন্য কাজ করার অঙ্গীকার করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, যে তামাকের ব্যবহার হ্রাস করার জন্য উচ্চহারে তামাকের ট্যাক্সের পরিমাণ বাড়ানো আমাদের এজেন্ডাভুক্ত হয়েছে। তিনি ঢাকায় অনুষ্ঠিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজিএস) অর্জনের প্রথম দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় স্পিকার্স সামিটে বাংলাদেশ ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন।

সম্মেলনের শেষে ঢাকা ঘোষণায় বলা হয়, সব স্বাক্ষরকারী অসংক্রামক (এনসিডি) রোগ হ্রাসের জন্য কাজ করবে। তামাকের ব্যবহারই এই রোগের মূল ঝুঁকির কারণ। তামাক ব্যবহারের পরিমাণ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য তামাকজাত পণ্যে কর বৃদ্ধি নীতিমালা ছিল সবচেয়ে ব্যয়সাশ্রয়ী নীতিমালা। পণ্যটির চাহিদা অস্থিতিস্থাপক প্রকৃতির কারণে তামাকে কর আরোপ এর ব্যবহার কমায় এবং রাজস্ব বৃদ্ধি পায়। সাধারণত বড় ধরনের ভোক্তাগোষ্ঠী, যারা ট্যাক্স প্রদান করেন তারা অভ্যাসের কারণে ধূমপান ছাড়তে পারেন না । এটা হতে পারে কম কর প্রদান করার কারণে তামাকজাত পণ্যের মূল্য কোনো ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় না তাদের কাছে। এটি তামাক গ্রহণের নেতিবাচক প্রভাব কমিয়ে দেয়। এ ছাড়া রোগের কারণেও অনেকই নিরুৎসাহিত হবে। তামাকের কর প্রদানের বিষয়টি দরিদ্র, তরুণ এবং নতুন তামাক ব্যবহারকারীদের তামাকজাত দ্রব্যে খরচের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করে অন্য কোথাও বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করবে। বিশ্বব্যাংক তামাকের খুচরা মূল্যের দুই-তৃতীয়াংশ থেকে চার-পঞ্চমাংশের মধ্যে কর ধার্যের পরামর্শ দেয়। কয়েকটি নিম্নমুখী এবং মাঝারি আয়ের দেশগুলো করের এই স্তরটি অর্জন করেছে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের আরোপিত করের মাত্রা বাড়িয়েও তুলতে পারে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিই এসডিজি-৩ অর্জনে সহযোগিতা করে না। তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের বিরুদ্ধে লড়াইও আমাদের লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। যার মধ্যে আছে দারিদ্র্য, ক্ষুধার অবসান, টেকসই কৃষিকাজে সহায়তা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রসার এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৫ সালের জুলাই মাসের প্রতিবেদনে দেখা যায়, তামাকে করের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। সেখানে ২০০৩ এর কনভেনশন অনুযায়ী দেশগুলোর তামাকজাতদ্রব্য ব্যবহার বিধি কার্যকর করার বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া তামাকজাত দ্রব্য সেবন নিয়ন্ত্রণ করে এটি দীর্ঘমেয়াদিভাবে সরকারের রাজস্ব বাড়াবে এবং জনগণের জীবন বাঁচাবে। ব্যবসার জন্য তামাকজাত পণ্য ব্যবহার বাড়াতে কোনো রকম প্রচার করা উচিত নয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর