সোমবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
ব্যাংকিং ভাবনা

রেমিট্যান্স বাড়াতে বিদেশে এজেন্ট ব্যাংক করা উচিত

——— প্রাইম ব্যাংক এমডি

আলী রিয়াজ

রেমিট্যান্স বাড়াতে বিদেশে এজেন্ট ব্যাংক করা উচিত

আহমেদ কামাল খান চৌধুরী

সাম্প্রতিক সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে। এটা শঙ্কার বিষয়। কারণ বিদেশে শ্রমিক যাওয়ার হার কমেনি, বরং বেড়েছে। হুন্ডির কারণেই মূলত রেমিট্যান্স কমছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে ব্যাংকিং পদ্ধতিকে বিদেশে সম্প্রসারিত করতে হবে। প্রাইম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আহমেদ কামাল খান চৌধুরী সম্প্রতি মতিঝিলের কার্যালয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকারে তিনি দেশের অর্থনীতি, প্রবৃদ্ধি, ব্যাংকিং ও রেমিট্যান্সসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। আহমেদ কামাল খান চৌধুরী ২০১৬ সালে প্রাইম ব্যাংকের এমডি হিসেবে দায়িত্ব নেন। ৩০ বছরের ব্যাংকিং পেশায় তিনি স্থানীয় ও বিদেশি বিভিন্ন ব্যাংকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। প্রাইম ব্যাংকের এমডি বলেন, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্য থেকে বেশি আসে। লন্ডনে বাংলাদেশের কয়েকটি ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং রয়েছে। সেখানে আমাদের ব্যাংকের এজেন্ট আছে। এই শাখাগুলো অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছে। আমরা একটি এজেন্ট শাখা দিয়ে শুরু করেছিলাম। এখন তিনটি শাখা। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এই এজেন্ট ব্যাংকিং শাখা ছড়িয়ে দেওয়া উচিত। এতে যেমন রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে, তেমনি প্রবাসীদের জন্যও দেশে টাকা পাঠানো সহজ হবে। এখন প্রবাসীরা হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠাচ্ছেন। এতে তাদের শ্রমের ফলে যে ডলার বা বিদেশি মুদ্রা দেশে আসার কথা ছিল তা আসছে না। ফলে আমাদের কোনো লাভ হচ্ছে না। তিনি বলেন, একটি মোবাইল ব্যাংকিং সেবাকে এর জন্য দায়ী করা হচ্ছে। কিন্তু এতে ওই মোবাইল সার্ভিসের কোনো দায় নেই। গ্রাহকদের কাছে বা প্রবাসীদের কাছে ব্যাংকগুলো পৌঁছাতে পারছে না। মোবাইল সার্ভিস দ্রুত পৌঁছাচ্ছে এবং হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ওপর চাপ তৈরি করে বা বিধিনিষেধ আরোপ করে এগুলো বন্ধ করা যাবে না। যেসব দেশ থেকে আমরা বেশি রেমিট্যান্স পাই, সেসব দেশে এজেন্ট ব্যাংকিং ছড়িয়ে দিতে হবে। আহমেদ কামাল খান চৌধুরী বলেন, বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে বিশাল অঙ্কের অলস অর্থ বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। গত কয়েক বছরে খেলাপির পরিমাণ বাড়ার কারণে অলস অর্থের পরিমাণ বেড়েছে। এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলাপির পরিমাণ কমিয়ে আনা। এ জন্য ব্যাংকগুলোকে সঠিক ভূমিকা রাখতে হবে। এক্ষেত্রে বেশি সংকটে আছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। তিনি বলেন, দেশে বিনিয়োগের এখন সুবর্ণ সময়। কারণ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার সঙ্গে ব্যাংক সুদের হার এখন সর্বনিম্ন। ব্যাংকগুলোয় প্রচুর অর্থ আছে। উদ্যোক্তারা চাইলেই ঋণ পাচ্ছেন। ফলে এই সময় বিনিয়োগ করার সর্বোচ্চ পরিবেশ বিরাজ করছে। প্রাইম ব্যাংক এমডি বলেন, ১৯৯৫ সালে প্রাইম ব্যাংক মাত্র ১০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন নিয়ে যাত্রা শুরু করে। এখন এর পরিমাণ প্রায় এক হাজার ৩০ কোটি টাকা। এতেই বোঝা যায় আমাদের সাফল্য। আমাদের লক্ষ্য, ছোট-বড় সব ধরনের গ্রাহককে উন্নত সেবা দেওয়া। তিনি বলেন, প্রাইম ব্যাংক রিলেশনশিপ ব্যাংকিংয়ের দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং বিজনেস সেন্ট্রালাইজেশন করেছে। আহমেদ কামাল বলেন, আমরা এখন প্রোফিটেবল গ্রোথের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি। ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ, যা আগের বছরের চেয়ে একটু বেশি। বিগত সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতায় খেলাপি ঋণ বেড়েছে। এটিএম কার্ড জালিয়াতিতে প্রাইম ব্যাংক আক্রান্ত না হলেও ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের সমস্যা না হয়, তার জন্য আমরা আগাম প্রস্তুতি নিয়েছি।

সর্বশেষ খবর