সোমবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

ঘুম ভাঙে পাখির কলকাকলিতে

নওগাঁ প্রতিনিধি

ঘুম ভাঙে পাখির কলকাকলিতে

গ্রামে প্রবেশ করলেই অনেক দূর থেকে ভেসে আসে পাখির কিচিরমিচির শব্দ। পাখির এ কলকাকলিতে মুখরিত গ্রামটি। প্রতিদিন পাখির কিচিরমিচির শব্দ আর কলকাকলিতে ঘুম ভাঙে গ্রামবাসীর। পাখিগুলো অভয়াশ্রম হিসেবে বেছে নিয়েছে এ গ্রামকে। নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার মগলিশপুর গ্রামে দেখা মিলছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির। নওগাঁ জেলা শহর থেকে প্রায় ২৪ কিলোমিটার দূরে মহাদেবপুর উপজেলা। এ উপজেলা থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার উত্তর-পূর্বদিকে মগলিশপুর গ্রামটি অবস্থিত। জানা গেছে, গ্রামের পুকুরপাড়ে আশরাফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির বাঁশঝাড়ে অভয়াশ্রম হিসেবে বসবাস করছে পাখিগুলো। পাখির কিচিরমিচির শব্দ আর কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে আছে গ্রামটি। এসব পাখি স্বাচ্ছন্দ্যে গাছে বিচরণ এবং ঝাঁকে ঝাঁকে ডানা মেলে উড়ে চলছে ইচ্ছা মতো। গত তিন মাস থেকে উপযুক্ত পরিবেশ ও নিরাপদ আশ্রয়ে যেন পাখিগুলো নির্ভাবনায় আবাস গড়ে তুলেছে। থাকার জন্য খড়কুটো দিয়ে বাসা বেঁধেছে। অনেক পাখি ডিম দেওয়া শুরু করেছে এবং অনেকে বাচ্চাও ফুটিয়েছে। বিশেষ করে বিকালে ও ভোরে কিচিরমিচির শব্দে জানিয়ে দেয় তাদের সরব উপস্থিতি। পাখিদের কিচিরমিচিরে মুখরিত হয়ে উঠে চারদিক।

 এখানে দেখা মিলছে বিভিন্ন ধরনের শামুকখোল, জ্যাঠা বক, কানি বক, পানকৌড়ি, রাতচোরা, ডাহুক, দোয়েল, ঘুঘু, শালিক, বাবুইসহ নানান জাতের দেশীয় পাখির। এই গ্রামের মানুষও প্রকৃতিপ্রেমী। পাখির প্রতি ভালোবাসা থেকে পাখি রক্ষায় নানা উদ্যোগও নিয়েছেন। গ্রামের ভিতরে কোনো গাছ কাটা ও উচ্চ শব্দে আওয়াজ করাও নিষিদ্ধ। তবে এক সপ্তাহ আগে প্রচণ্ড ঝড়, বৃষ্টি ও শিলায় প্রায় কয়েক হাজার পাখির ডিম নষ্ট হয়ে যায় এবং অনেক পাখির বাচ্চাও মারা যায়।

বাঁশঝাড়ের মালিক আশরাফুল ইসলাম বলেন, কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ হলেও বাঁশঝাড় থেকে বাঁশ বিক্রি করে বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় পার হতো। গত তিন মাস থেকে বাঁশঝাড়ে হঠাৎ করে পাখিরা এসে বসবাস শুরু করায় এখন আর বাঁশ কাটতেও পারছেন না। গত শনিবার সন্ধ্যায় প্রচণ্ড ঝড়, বৃষ্টি ও শিলা হয়। বাড়িতে টিন বাঁধার জন্য ঝাঁড় থেকে বাঁশ না কেটে ১৪ কিলোমিটার দূর শ্বশুরবাড়ি থেকে নিয়ে এসে কাজ করতে হয়েছে। গৃহবধূ সুলতানা বানু বলেন, প্রথমে এসব পাখির শব্দ ও বিষ্ঠা নিয়ে কিছুটা সমস্যা হলেও এখন সব সয়ে গেছে। গ্রামের সবাই পাখির প্রতি মমতাশীল। বাঁশঝাড়ের নিচে পুকুর থাকলেও পাখিরা কোনো মাছ খায় না। সারা দিন বাইরে চরা করে বিকালে পাখিরা বাসায় ফেরে। তখন বেশি দেখা মেলে। যখন আকাশে উড়ে মনে হয় আকাশ মেঘ করছে। পাখি দেখা এবং ফটোসেশনের জন্য নওগাঁ থেকে এ পাখি গ্রামে এসেছিলেন ব্যবসায়ী নাজমুল ইসলাম। তিনি বলেন, পাখির কলকাকলিতে মুগ্ধ। একসঙ্গে এত বেশি পাখি দেখার কখনো সৌভাগ্য হয়নি। অনেক স্মৃতি ধরে রাখতে নিজ ক্যামেরায় ছবি তুলেছেন। পাখিদের নিরাপদ আশ্রয় ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর