মঙ্গলবার, ৯ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

নরসিংদীতে টেঁটাযুদ্ধ গুলি প্রাণ গেল আরও দুজনের

নরসিংদী প্রতিনিধি

আধিপত্য বিস্তার নিয়ে নরসিংদীর চরাঞ্চল বাঁশগাড়ীতে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে গতকাল দুপুরে ফের টেঁটা ও বন্দুকযুদ্ধ হয়েছে। এতে দুজন নিহত ও কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া এ সময় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। জানা গেছে, স্থানীয় আওয়ামী লীগ সভাপতি হাফিজুর রহমান সাহেদ সরকার এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল হকের সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়। আহতদের নরসিংদী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়। এর মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তিনজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। নিহতরা হলেন বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের সোবহানপুর গ্রামের শুক্কুর আলীর ছেলে আরশ আলী (২৫) ও রাজনগর গ্রামের জহর মিয়ার ছেলে জয়নাল মিয়া (২২)। স্থানীয় রাজনীতিতে তারা সাহেদ সরকারের সমর্থক হিসেবে পরিচিত। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময় বাঁশগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন বাঁশগাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাফিজুর রহমান সাহেদ সরকার। কিন্তু নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্য রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর পছন্দের প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সিরাজুল হক চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এর পর থেকে দুই পক্ষের মধ্যে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই সময় সাহেদ সরকারের কয়েক শ সমর্থক এলাকাছাড়া হতে বাধ্য হন। গত মাসে সাহেদ সরকার পাশের ইউনিয়নগুলোর লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে নদীপথে এসে টেঁটা ও দেশি অস্ত্র নিয়ে হামলা চালান।

 তখন দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে দুজন নিহত ও অর্ধশতাধিক লোক আহত হন। এর জেরে বর্তমান চেয়ারম্যান সিরাজুল হক সরকার গ্রুপ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় এবং এলাকা সাহেদ সরকার গ্রুপের দখলে আসে। এ অবস্থায় গতকাল দুপুর ১২টার দিকে সিরাজুল হকের লোকজন আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে এলাকা দখলের জন্য এলে সাহেদ সরকার সমর্থকদের সঙ্গে টেঁটা ও বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয়। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে জয়নাল ও আরশ আলী নিহত হন। আহত হন কমপক্ষে ২০ জন। সংঘর্ষের সময় অর্ধশতাধিক বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। খবর পেয়ে বিপুলসংখ্যক পুলিশ বিকাল ৫টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

সন্ধ্যায় জেলা হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, নিহত আরশ আলীর মৃতদেহ লাশঘরে পড়ে আছে। তার সামনে স্বজনরা আহাজারি করছিলেন। ওই সময় নিহতের ছোট ভাই মান্নান মিয়া জানান, দীর্ঘদিন মালয়েশিয়ায় থেকে চার মাস আগে আরশ আলী দেশে আসেন। তিন মাস আগে পাশের আমিরাবাদ গ্রামে তিনি বিয়ে করেন। এরই মধ্যে টেঁটাযুদ্ধে প্রাণ হারাতে হলো।

নিহতের খালা জায়েদা খাতুন বলেন, দুপুরে সিরাজুল হকের লোকজন বাঁশগাড়ী, সোবাহানপুর ও রাজনগর গ্রামে একের পর এক বাড়িতে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। ওই সময় সিরাজুল হকের লোকজনের গুলিতে আরশ আলী নিহত হন।

নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শফিউর রহমান জানান, আধিপত্য বিস্তারের জেরেই এ ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে পুলিশ। এ পর্যন্ত দুজন নিহত হয়েছেন। বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

সর্বশেষ খবর