মঙ্গলবার, ৯ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

আনসারুল্লাহর শিক্ষকসহ ছয় ভয়ঙ্কর জঙ্গি গ্রেফতার

ল্যাপটপ, পাসপোর্ট, জিহাদি বই উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীতে র‍্যাব ও পুলিশের পৃথক অভিযানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকসহ ভয়ঙ্কর ছয় জঙ্গি গ্রেফতার হয়েছে। রবিবার রাতে মতিঝিল ও আশুলিয়া থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা নিষিদ্ধ ঘোষিত আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি) ও জেএমবির সক্রিয় সদস্য বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে রবিবার সন্ধ্যায় মতিঝিলের পীরজঙ্গি মাজার এলাকা থেকে এবিটির দাওয়া শাখার চার সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড  ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট। গতকাল মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুটি ল্যাপটপ, দুটি নোটবুক, দুটি মোবাইল ফোন, একটি পাসপোর্ট, কিছু জিহাদি বই উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো— এবিএম সোহেল উদ দৌলা, আহাদুল ইসলাম সাগর, জগলুল হক মিঠু ও তোয়াসিন রহমান। এদের মধ্যে সোহেল উদ দৌলা রাজধানীর আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তবে পরিবারের অভিযোগ— আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক সোহেল বৃহস্পতিবার বিকাল থেকেই নিখোঁজ ছিলেন। এ ঘটনায় তার ভাই এবিএম শহীদ উদ দৌলা শনিবার তেজগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেন। সংবাদ সম্মেলনে মনিরুল ইসলাম বলেন, গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের সিরিয়ায় যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। তারা সিরিয়ায় গিয়ে আল কায়েদার সহযোগী সংগঠন জামাত-আল-নুসরায় যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এ জন্য তারা পাসপোর্টে বিভিন্ন দেশের ভিসা লাগানোর চেষ্টা করছিলেন। ইতিমধ্যে তারা ভারত, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ার ভিসার আবেদন করেছেন। যাতে পর্যটক হিসেবে সিরিয়ায় যাওয়া যায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা জানিয়েছেন— তারা ২০১৪ সালে পলাতক জঙ্গি হাসান ওরফে রেজার মাধ্যমে জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। তারা পরস্পরের সঙ্গে টেলিগ্রাম অ্যাপস এবং টুটানোটা মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে সোহেল মূলত সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং বাকি তিনজন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সোহেল জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন— বিদেশে এবিটির পলাতক নেতাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। এ ছাড়া এ গ্রুপের আরও কয়েকজন সদস্য আছে যারা পলাতক। তাদের সঙ্গে মেজর জিয়ার যোগাযোগ আছে। সম্মেলনে সোনা চোর চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেফতারেরও তথ্য জানান মনিরুল ইসলাম। গ্রেফতারকৃতরা হলো— পারভীন, শুভ বণিক, ভানু লাল, অমিত, কৃষ্ণ চন্দ্র ও সুজন বণিক। বৃহস্পতিবার পারভীন গুলশানের একটি বাসা থেকে ৬০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার চুরি করে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। সোহেলের গ্রেফতার প্রসঙ্গে আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবদুল গফুর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ওই শিক্ষক নিখোঁজ ছিলেন তা আমরা জানতাম। এ জন্য থানায় জিডিও করা হয়েছিল। কিন্তু এবিটির সদস্য ছিলেন বলে আমরা জানতাম না। এখন যেহেতু তিনি গ্রেফতার হয়েছেন তাই বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এদিকে, জেএমবির ওঊউ তৈরির রাসায়নিক পদার্থ সরবরাহকারী দুই জঙ্গিকে আটক করেছে র‍্যাব। আটককৃতরা হলো— ইমরান এবং তার সহযোগী রফিক। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের বিস্ফোরক ও ওঊউ তৈরির সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়েছে। রবিবার রাত ১০টার দিকে ঢাকার আশুলিয়া এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। গতকাল দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে র‍্যাবের মিডিয়া ও লিগ্যাল উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান এ তথ্য জানান।

সর্বশেষ খবর