মঙ্গলবার, ৯ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা
কেমন বাজেট চাই

ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পে অর্থ বরাদ্দ জরুরি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পে অর্থ বরাদ্দ জরুরি

আবুল কাশেম, সভাপতি, রংপুর চেম্বার

আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে বিনিয়োগ, ব্যবসাবান্ধব, কর্মসংস্থানমুখী এবং সুষম উন্নয়নে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো জরুরি বলে মনে করেন রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবুল কাশেম। এ ছাড়াও তিনি মনে করেন, অঞ্চলভিত্তিক বাজেট প্রদানের বিষয়ে পদক্ষেপ প্রয়োজন। কারণ দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি নির্ভর করে সে দেশের প্রতিটি অঞ্চলের সুষম উন্নয়নের ওপর। আগামী অর্থ বছরের বাজেট কেমন চাই- এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে চেম্বার সভাপতি আরও বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে শিল্প-বাণিজ্য। সে কারণে বাজেট শিল্প ও ব্যবসাবান্ধব করতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ রাখতে হবে। এর ফলে প্রত্যাশিত শিল্প উন্নয়নের মধ্য দিয়ে কর্মসংস্থান বাড়বে। তিনি উল্লেখ করেন, শিল্পের মূল চালিকা শক্তি হিসেবে গ্যাসের গুরুত্ব অপরিসীম। আর প্রাকৃতিক গ্যাস না থাকাই রংপুর অঞ্চলে শিল্পায়নের ক্ষেত্রে অন্যতম সমস্যা। গ্যাস প্রাপ্যতার কারণে দেশের পূর্বাঞ্চলে গ্যাসভিত্তিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিকশিত হয়েছে। এ অঞ্চলের শিল্প-কারখানাগুলো বিদ্যুৎ নির্ভর হওয়ায় গ্যাস ছাড়া শিল্প বিকাশের সম্ভাবনা খুবই দুরূহ। রংপুর বিভাগে গ্যাস সরবরাহের জন্য একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতীয় বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ রাখতে হবে। দেশের প্রতিটি অঞ্চলে বিশেষ করে শিল্পে অনগ্রসর রংপুর বিভাগে শিল্পায়নের জন্য অর্থনৈতিক ও শিল্প অঞ্চল গঠনের মাধ্যমে সমর্থক পলিসি সহায়তার বিষয়টি বাজেটে সন্নিবেশিত করতে হবে। তিনি বলেন, এসব প্রয়োজন মেটাতে প্রথম উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রণালয় (নর্থ বেঙ্গল ডেভেলপমেন্ট মিনিস্ট্রি) গঠনের জোর প্রস্তাব করছি। চেম্বার সভাপতি কাশেম বলেন, রংপুর অঞ্চলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বন্ধ কল-কারখানা চালু এবং নতুন কল-কারখানা স্থাপনে স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানের সুযোগ রাখতে হবে। বাজেটে শিল্পখাতে সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ দেওয়ার পাশাপাশি স্বল্প সুদে সহজশর্তে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। এ অঞ্চলের শিল্পায়নের গতি ত্বরান্বিত করতে হলে শিল্পের কর অবকাশের (ট্যাক্স হলিডে) মেয়াদ ১০ বছর করতে হবে। অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া রংপুরের শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা কর, ভ্যাট ও ঋণনীতি প্রণয়নের প্রস্তাব করা হয়েছে রংপুর চেম্বারের পক্ষ থেকে।  তিনি বলেন, কৃষিই এ অঞ্চলের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হলে কৃষি উপকরণে ভর্তুকি অব্যাহত রাখতে হবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি পরিস্থিতি মোকাবিলায় থোক বরাদ্দ প্রদানের পাশাপাশি এ খাতকে অধিকতর গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ বিদ্যুৎ ও জ্বালানির কারণে সব ক্ষেত্রে উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। ভৌত অবকাঠামো খাততে অগ্রধিকার প্রদানসহ স্থানীয় শিল্পের সংরক্ষণ এবং রপ্তানি খাতকে প্রণোদনা দেওয়ারও ব্যবস্থা রাখতে হবে বাজেটে। তিনি বলেন, রংপুরের আলু স্থানীয় ও দেশের বিভিন্ন এলাকার চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি হয়। তাই আলু রপ্তানিতে নগদ সহায়তা ১০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে প্রতিবেশী দেশ ভারতের ন্যায় ৪০ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি। এর ফলে রপ্তানিকারকরা আলু রপ্তানিতে উৎসাহিত হওয়ার পাশাপাশি কৃষকরা লাভবান হবেন। বাজেটে গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা, পল্লী উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধির ব্যবস্থা রাখার প্রস্তাব করে চেম্বার সভাপতি কাশেম বলেন, রেমিটেন্স বৃদ্ধির স্বার্থে শ্রমবাজার সম্প্রসারণের ব্যাপারে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে।

বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতায় এনে দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচির আওতা বৃদ্ধি করে বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা, দুস্থ মহিলা, অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী, মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে আরও বেশি আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। এছাড়া পুঁজিবাজার শক্তিশালীকরণ, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, শিক্ষা ব্যবস্থা কর্মমুখী করতে অর্থ বরাদ্দসহ প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা থাকতে হবে বাজেটে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর