শনিবার, ১৩ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা
কেমন বাজেট চাই

স্থানীয় শিল্পে বিশেষ বরাদ্দ প্রয়োজন

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

স্থানীয় শিল্পে বিশেষ বরাদ্দ প্রয়োজন

সালাহ উদ্দিন আলী আহমদ

সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি সালাহ উদ্দিন আলী আহমদ বলেছেন, দেশে সুসম উন্নয়ন ও ব্যাপক কর্মসংস্থানের জন্য অঞ্চলভিত্তিক শিল্প সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো উচিত। এ জন্য আগামী বাজেটে অঞ্চলভিত্তিক শিল্পায়নের জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন।

আগামী বাজেট কেমন হওয়া উচিত- এমন প্রশ্নের জবাবে সালাহ উদ্দিন আরও বলেন, শিল্প-কারখানার প্রসার ঘটানোর মাধ্যমেই শিল্পবিপ্লব ঘটাতে হবে। দেশের যে এলাকায় যে শিল্পের কাঁচামাল প্রাপ্তি সহজ সেখানে সেরকম শিল্প-কারখানা গড়ে তোলা প্রয়োজন। এতে কাঁচামালের সঠিক ব্যবহারের পাশাপাশি উৎপাদন ও পরিবহন ব্যয় কম হবে। ফলে লাভবান হবেন শিল্পোদ্যোক্তারা। এ জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। তিনি বলেন, দেশের শিল্পায়ন অনেকটা ঢাকা ও চট্টগ্রামকেন্দ্রিক। এটি সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন। এ জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘ট্যাক্স হলিডে’ সুযোগ দেওয়া উচিত। এতে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ওপর থেকে জনসংখ্যার ঘনত্বের চাপও কমবে।

সিলেটে স্পেশাল ইকোনমিক জোন দ্রুত বাস্তবায়নে আগামী বাজেটে বিশেষ বরাদ্দের দাবি জানিয়ে সালাহ উদ্দিন বলেন, ২০১০ সালের আগস্টে দেশে ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ স্থাপন বিল পাস হয়েছে। কিন্তু এরও প্রায় ১৪ বছর আগে ১৯৯৬ সাল থেকে সিলেট চেম্বার সিলেটে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাই নিয়ে কাজ শুরু করে। ২০০৬ সালে সেটি প্রস্তাবনা আকারেও উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু দেশের বিভিন্ন স্থানে স্পেশাল ইকোনমিক জোনের কাজ যে গতিতে এগোচ্ছে- সিলেটে সেরকম হচ্ছে না। সিলেটের শেরপুরে নির্মিতব্য স্পেশাল ইকোনমিক জোনটি বাস্তবায়ন হলে প্রবাসীরা বিনিয়োগের সুযোগ পাবেন। এতে সিলেটে শিল্পায়নেরও সুযোগ বৃদ্ধি পাবে।

শিল্পায়নে সিলেট দিন দিন পিছিয়ে পড়েছে দাবি করে চেম্বার সভাপতি বলেন, সিলেটের শিল্পায়নের ইতিহাস অনেক পুরনো। দেশের পুরনো ভারী শিল্প-কারখানা এক সময় সিলেটে ছিল। দেশের প্রথম শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠেছিল সিলেটের ছাতকে। এখানে সিমেন্ট, পাল্প অ্যান্ড পেপার মিল, চুন-কারখানা ও রেললাইনের স্লিপার তৈরির কারখানাগুলো দেশের প্রাচীনতম শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম। দেশের মধ্যে প্রথম সিলেটে গ্যাস পাওয়া যাওয়ায় এখানে গ্যাসভিত্তিক শিল্প-কারখানাগুলো গড়ে উঠেছিল। কিন্তু এরপর সিলেটে শিল্পায়নে বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তাই স্পেশাল ইকোনমিক জোন স্থাপন করা হলে শিল্পায়নে সিলেটকে কিছুটা হলেও এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। তিনি উল্লেখ করেন, আশির দশকে সিলেটে কিছু ক্ষুদ্র শিল্প-কারখানা গড়ে উঠলেও যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে না পারায় সেগুলো বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সিলেটের বিসিক শিল্পনগরীগুলো অনেকটা অকার্যকর হয়ে পড়ে। আগামী বাজেটে বিসিকের উন্নয়নসহ সিলেটের ক্ষুদ্র শিল্পের বিকাশে বিশেষ বরাদ্দ রাখা হলে এখানকার মৃতপ্রায় প্রতিষ্ঠানগুলোতে আবারও প্রাণের সঞ্চার হতে পারে।

সিলেটের পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে সালাহ উদ্দিন আলী আহমদ বলেন, দেশের গার্মেন্ট খাত থেকে যে আয় হয়, তার চেয়ে বেশি আয় করা সম্ভব সিলেটের পর্যটন শিল্প দিয়ে। এ জন্য প্রয়োজন পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন। সিলেটের সঙ্গে ঢাকার সড়ক, রেল ও আকাশপথের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা সম্ভব হলে সিলেটে প্রচুর দেশি-বিদেশি পর্যটকের সমাগম ঘটবে। এমনকি সিলেটের পার্শ্ববর্তী ভারতের মেঘালয় রাজ্যে যেসব বিদেশি পর্যটক আসেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা গেলে সেসব পর্যটকদেরও সিলেটে টানা সম্ভব হবে।

এ জন্য আগামী বাজেটে সিলেটের সড়ক উন্নয়নে বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন। সালাহ উদ্দিনের মতে, সিলেটের অর্থনৈতিক অবস্থার অগ্রগতি ঘটাতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ। সেটি করা গেলে এখানে শিল্পায়নের পাশাপাশি সিলেট সীমান্ত-লাগোয়া ভারতের সাতটি রাজ্যে বাংলাদেশি পণ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটবে। ‘সেভেন সিস্টার’ খ্যাত ওই সাতটি রাজ্যে খুব সহজে ও কম সময়ে বাংলাদেশি পণ্য পৌঁছে দেওয়া যাবে। এ জন্য আগামী বাজেটে এই মহাসড়কটি চারলেনে উন্নীত করতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন।

সিলেটে প্রযুক্তি ব্যবসার সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে সালাহ উদ্দিন বলেন, সিলেটে একটি হাইটেক পার্ক নির্মাণাধীন রয়েছে। কিন্তু খুবই মন্থর গতিতে এই প্রকল্পের কাজ চলছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে প্রবাসীরা বিনিয়োগের সুযোগ পাবেন। প্রবাসে অনেক প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সিলেটী রয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই হাইটেক পার্ক নির্মিত হলে এসব বিশেষজ্ঞকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। এতে একদিকে যেমন প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধিত হবে, অন্যদিকে এসব বিশেষজ্ঞের সংস্পর্শে দক্ষ জনবল তৈরি হবে। এ জন্য বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে হাইটেক পার্কটি দ্রুত বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।

ভ্যাট বাড়িয়ে ব্যবসায়ীদের ওপর বোঝা চাপানো উচিত নয় মন্তব্য করে চেম্বার সভাপতি বলেন, দেশের মুষ্টিমেয় ব্যবসায়ী ভ্যাট দেন। আর বেশির ভাগ ব্যবসায়ী ভ্যাট পরিশোধ করেন না। তাই যারা ভ্যাট দিচ্ছেন তাদের ওপর বাড়তি ভ্যাটের বোঝা চাপিয়ে না দিয়ে এর পরিধি বাড়ানো উচিত। সবাইকে ভ্যাটের আওতায় আনা সম্ভব হলে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ যেমন বাড়বে, তেমন ব্যবসায়ীরাও ভ্যাট প্রদানে উৎসাহী হবেন।

সর্বশেষ খবর