শনিবার, ১৩ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভ্যাটের সঙ্গে করপোরেট কর ২ শতাংশ কমছে

রুহুল আমিন রাসেল

ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে আসছে নতুন অর্থবছরের বাজেটে ভ্যাটের হার ৩ শতাংশ কমিয়ে ১২ শতাংশ নির্ধারণে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ব্যবসায়ীরা চান ১০ শতাংশ নির্ধারণ হোক। এবারের বাজেটে দেশি-বিদেশি বাস্তবতা মেনে নিয়ে করপোরেট কর কয়েকটি স্তরে ২ শতাংশ হারে কমানো হচ্ছে বলে জানা গেছে।

বর্তমানে ২৫ থেকে সাড়ে ৪২ শতাংশ পর্যন্ত করপোরেট কর নেয় সরকার। তবে ব্যাপক আকারে বিনিয়োগ বাড়াতে করপোরেট করহার কমিয়ে কমপক্ষে ২০ শতাংশের ঘরে আনার পক্ষে ব্যবসায়ীরা। এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সাবেক উপদেষ্টা মনজুর আহমেদ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ১ থেকে ২ শতাংশ কমিয়ে বিনিয়োগ আনা যাবে না। ধাপে ধাপে করপোরেট কর কমিয়ে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। নইলে বিনিয়োগ আসবে না। টাকা পাচার বাড়বে। কারণ কোনো ব্যবসায়ী ১০০ টাকা আয় করে ৩৫ টাকা কর দিতে চান না। এত উচ্চহারে করপোরেট কর আদায় অযৌক্তিক বলেও মনে করেন এই ব্যবসায়ী নেতা। প্রসঙ্গত, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবার বাজেট তৈরির সময় করপোরেট করহার কমানোর চিন্তাভাবনা করছেন বলে জানিয়েছিলেন। তখন বিশ্বের নাম্বার ওয়ান অর্থনীতির দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করপোরেট কর ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করেছেন। এই প্রস্তাবকে ‘ঐতিহাসিক ছাড়’ আখ্যায়িত করে বিশ্বের বিশ্লেষকরা বলছেন, এর প্রভাব দুনিয়াজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে। অনেক দেশের সরকারের ওপর একই পদক্ষেপ নেওয়ার চাপ বাড়বে।জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংক, বীমা ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান, টেলিকম অপারেটর, মার্চেন্ট ব্যাংক, সিগারেট প্রস্তুতকারক কোম্পানি ছাড়া অন্যসব কোম্পানির জন্য বর্তমানে যে হারে করপোরেট কর নির্ধারিত আছে, তা থেকে ২ শতাংশ কমাতে চায় সরকার। তবে ২ শতাংশ কমানোর প্রভাব আগামী অর্থবছরের রাজস্ব আয়ে কেমন হতে পারে, তারও হিসাব কষতে এনবিআরকে নির্দেশনা দিয়েছেন সরকারের কর্তাব্যক্তিরা। যদি প্রথম স্তরে ২ শতাংশ হারে করপোরেট কর কমানো হয়, পাবলিক ট্রেডেট কোম্পানির করপোরেট কর কমে দাঁড়াবে ২৩ শতাংশ, নন-পাবলিক ট্রেডেট (ম্যানুফ্যাকচারিং ও নন-ম্যানুফ্যাকচারিং/ট্রেডেট) কোম্পানির জন্য ৩৩ শতাংশ। দ্বিতীয় স্তরে ব্যাংক, বীমা ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে (মার্চেন্ট ব্যাংক ছাড়া) পাবলিক ট্রেডেট কোম্পানির করপোরেট কর ২ শতাংশ কমে হবে ৩৮ শতাংশ এবং নন-পাবলিক ট্রেডেট কোম্পানির ৪০ দশমিক ৫০ শতাংশ। তৃতীয় স্তরে মার্চেন্ট ব্যাংকের করপোরেট কর হবে সাড়ে ৩৫ শতাংশ। চতুর্থ স্তরে বাংলাদেশে রেজিস্ট্রিকৃত কোম্পানি থেকে লভ্যাংশ আয়ের ওপর করপোরেট কর হবে ১৮ শতাংশ এবং পঞ্চম স্তরে রপ্তানি আয়ের উেস কর কত শতাংশ নির্ধারণ হবে, সেই আলোচনা চলছে।

এদিকে নতুন অর্থবছরে পুঁজিবাজারের স্বার্থে, দেশি-বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ বা এফডিআই বাড়াতে করপোরেট করহার প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে বিভিন্ন প্রকার কোম্পানির করপোরেট করহার ২ দশমিক ৫০ শতাংশ কমিয়ে পুনর্নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে এফবিসিসিআই। সংগঠনটির যুক্তি হলো, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যক্তি পর্যায়ের করহারের তুলনায় করপোরেট করহার কম হয়ে থাকে।

কিন্তু বাংলাদেশে করপোরেট করহার ব্যক্তি পর্যায়ের করহারের তুলনায় বেশি, যা অনেক কোম্পানি করদাতার সঠিক আয় প্রদর্শনে নিরুৎসাহিত করে। প্রতিবেশী ভারতে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে করপোরেট কর ৩০ শতাংশ থেকে ক্রমে কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক হয়েছে। শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানে করপোরেট করহার বাংলাদেশ থেকে অনেক কম। এমন প্রেক্ষাপটে নন-পাবলিকলি ট্রেডেট কোম্পানির জন্য বর্তমান করপোরেট হার ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করেছে এফবিসিসিআই। বর্তমানে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত করহার ৩০ শতাংশ। অন্যদিকে নন-পাবলিক ট্রেডেট কোম্পানির ক্ষেত্রে করপোরেট করহার ৩৫ শতাংশ।

এফবিসিসিআই প্রস্তাবে আরও বলেছে, ন্যূনতম কর লোকসানি কোম্পানির জন্যও প্রযোজ্য। আয়কর আয়ের ওপর আরোপণ করা উচিত। ন্যূনতম কর আয়করের এই মেক্সলিক নীতি থেকে বড় বিচ্যুতি। লোকসানি প্রতিষ্ঠান বা যেসব ক্ষেত্রে ন্যূনতম আয়কর প্রকৃত আয়কর থেকে বেশি হচ্ছে, ওইসব প্রতিষ্ঠান মূলত মূলধন থেকে আয়কর পরিশোধ করছে। এই বিবেচনায় ন্যূনতম কর বিলোপ করা উচিত। রাজস্বের স্বার্থে ন্যূনতম কর শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ করা হোক।

সর্বশেষ খবর