সোমবার, ১৫ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

দালালে জিম্মি জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল

রোগী ভাগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে প্রাইভেট ক্লিনিকে

জয়শ্রী ভাদুড়ী

দালালে জিম্মি জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল

জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালের সামনে এসে দাঁড়াল একটি অ্যাম্বুলেন্স। সেখান থেকে রোগীকে না নামিয়ে তিন-চারজন মিলে রোগীর স্বজনকে নিয়ে গেল একপাশে। সেখানে রোগীর স্বজনকে কিছু একটা বোঝানোর চেষ্টা চলছে। কাছে গিয়ে জানা গেল, হাসপাতালে ভর্তি না করিয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকে রোগী নিয়ে যাওয়ার পাঁয়তারা করছে দালালরা। কিন্তু রোগীর স্বজনরা রাজি না হলে হুমকি-ধমকি দিতে শুরু করে তারা। তাদের ছাড়া এ হাসপাতালে কীভাবে সবকিছুর ব্যবস্থা হয় তা দেখা যাবে বলে ব্যঙ্গ করতে করতে গেটের দিকে ফিরে যায় দালালরা। গতকাল বেলা ১২টায় জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালের সামনের চিত্র এটি। হাসপাতালের কর্মচারীদের সামনে এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও তাদের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা ফকরুল ইসলাম বলেন, ‘এক বছর ধরে আমি চেক-আপ করাতে নিয়মিত হাসপাতালে আসি। দালালদের এই টানাটানির দৃশ্য নিত্যনৈমিত্তিক। কিন্তু কর্তৃপক্ষ শুধু দেয়ালে একটা পোস্টার টানিয়ে তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে। প্রতিদিন হাসপাতাল থেকে অনেক রোগী ভাগিয়ে প্রাইভেট ক্লিনিক ও প্যাথলজিতে নিয়ে যায় দালালরা।’ সরেজমিন হাসপাতালের ভিতরে গিয়ে দেখা যায়, ৫২ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত হাসপাতাল যেন ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়। এর ফলে কুকুর-বেড়ালের অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে এই হাসপাতাল। আর এই নোংরার মধ্যেই রোগীর ব্যবহার্য কাপড় ধুয়ে ছোট ছোট আগাছার ওপর শুকাতে দিচ্ছেন স্বজনরা। হাসপাতালের ভিতরও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে রোগীর ব্যবহার্য ওষুধ, স্যালাইন, ইনজেকশনের সিরিঞ্জসহ অন্যান্য জিনিসপত্র। এর মধ্যেই দুপুরে খাবার এনে দেওয়া হচ্ছে রোগীদের। হাসপাতালের রান্নার কক্ষে নিরাপদে ঘুরে বেড়াচ্ছে বেড়াল আর মাছি। নোংরা মেঝেতে ঢাকনা খোলা অবস্থায় রাখা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের খাবার। ৬৭০ শয্যার এ হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা কর্যক্রম নেই বললেই চলে। থোরাসিক সার্জারি বিভাগের ৫ ও ৬ নম্বর মহিলা ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, রোগীর থাকার কক্ষে ধুলামাখা জুতা নিয়ে যাতায়াত করছেন বহিরাগতরা। এ ওয়ার্ডের বেশির ভাগ জানালাই ভাঙা। পাশের টয়লেট থেকে আসছে দুর্গন্ধ।

আর ময়লা ফেলতে ডাস্টবিনের তোয়াক্কা না করে যেখানে-সেখানে ফলমূল খেয়ে স্তূপ করে রাখছেন রোগীর স্বজনরা। এ ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে কিছুদিন হলো ভর্তি হয়েছেন আনোয়ারা বেগম। তিনি বলেন, এখন প্রায় দিনই ঝড়-বৃষ্টি হয়। আর জানালার গ্লাস না থাকায় ধুলা আসে, বৃষ্টির পানিতে ঘর ভেসে যায়। ঝড়ের সময় ভাঙা জানালায় পলিথিন ধরে বসে থাকতে হয়। হাসপাতালের নার্সদের বলেও এ সমস্যার সমাধান হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একজন কর্মচারী বলেন, এই নোংরা পরিবেশে রোগীদের চিকিৎসা ব্যাহত হয়। কয়েকবার কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নিয়ে পরিষ্কার করেছে। কিন্তু নিয়মিত না করানোয় এ অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের মন্তব্য জানতে হাসপাতালের পরিচালকের কক্ষে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

সর্বশেষ খবর