মঙ্গলবার, ১৬ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

রেমিট্যান্সে উদ্বেগ বাড়ছে সরকারে

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

রেমিট্যান্সে উদ্বেগ বাড়ছে সরকারে

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় কর্মরত বিদেশিদের দেশে অর্থ পাঠানো বা ‘এক্সচেঞ্জ’-এর ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করায় রেমিট্যান্স নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে সরকারে। জানা গেছে, গালফ কান্ট্রিগুলোয় কর্মরত কোনো প্রবাসী এখন ইকামা (জব পারমিট) অনুযায়ী যে আয় করছেন, তার বেশি অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠাতে পারছেন না। এ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দেশের কর্তৃপক্ষ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে প্রবাসীরা ওভারটাইম করে আয় করলেও সেই আয় ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে আসছে না। এটি বাংলাদেশের রেমিট্যান্স কমার একটি বড় কারণ বলে মনে করছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা।

এ অবস্থায় পুরো পরিস্থিতি সামাল দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগ, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন, মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে কূটনৈতিক চ্যানেলে আলোচনা করা এবং ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর ওপর যে মাশুল আরোপ করা আছে তা তুলে নেওয়ার বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে।

সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক আন্তমন্ত্রণালয় সভায় রেমিট্যান্স সংকট মোকাবিলায় এসব সুপারিশ উঠে আসে।

জিজ্ঞাসা করলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রেমিট্যান্স সংকট কীভাবে কাটানো যায় তা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে। তাদের সেই নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে রেমিট্যান্স প্রবাহে যে নেতিবাচক পরিস্থিতি বিরাজ করছে রমজান ও ঈদ সামনে রেখে তা কেটে যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন সরকারের এই সিনিয়র সচিব।

এদিকে রেমিট্যান্স নিয়ে ওই সভার সুপারিশগুলো প্রধানমন্ত্রীর সামনে গত শুক্রবার তুলে ধরার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরোপিত ব্যাংক মাশুল প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ)-এর সঙ্গে অনুষ্ঠিত বাজেট আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনার কথা জানান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সৌদি আরবে কোনো বাংলাদেশি চাকরির পর বেশি আয়ের আশায় ওভারটাইম করলেও ইকামা অনুযায়ী তার যে জব পারমিট আছে এর বেশি অর্থ পাঠাতে পারছেন না। এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত আয় তখন হুন্ডিতে পাঠাচ্ছেন অথবা নিজের কাছে রেখে দিচ্ছেন। এ ছাড়া তেলের দাম কমে যাওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের জিডিপি কমছে। ফলে সেখানে চাকরির বাজার ছোট হয়ে আসছে। এসব কারণে প্রবাসীদের আয় এবং বেতন কমছে। এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়া বা ব্রেক্সিটের প্রভাব, ইউরো ও পাউন্ডের দরপতন, মার্কিন রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের নীতিবিষয়ক অস্থিরতা, মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক অস্থিরতা, জ্বালানির দাম কমে যাওয়া, ব্যাংকিং  চ্যানেলের বাইরে হুন্ডিতে অর্থ পাঠানোর বিষয়গুলোও বাংলাদেশে রেমিট্যান্স কমার পেছনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে সরকারের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। সূত্রগুলো জানায়, আন্তমন্ত্রণালয় সভায় রেমিট্যান্স নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করা হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সারা বিশ্বেই রেমিট্যান্স প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এর মধ্যে খারাপ অবস্থায় আছে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলো। গত মার্চ পর্যন্ত হিসাবে আগের বছরের তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ায় রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমেছে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। এর মধ্যে ভারতে কমেছে ৯ শতাংশ। আর বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রেমিট্যান্স কমেছে প্রায় ১৬ শতাংশ। মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার কথা তুলে ধরে বিশ্বব্যাংক বলেছে, দীর্ঘ মেয়াদে জ্বালানির দাম কম থাকায় তাদের জিডিপি যেহেতু কমছে, সে কারণে গালফ কান্ট্রিগুলো তাদের দেশের অর্থ বাইরে পাঠানোর বিষয়টি সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করছে। তবে সামনের বছর থেকে রেমিট্যান্স খাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর