মঙ্গলবার, ১৬ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা
কেমন বাজেট চাই

ভ্যাট ১০ শতাংশ হওয়া উচিত

রুহুল আমিন রাসেল

ভ্যাট ১০ শতাংশ হওয়া উচিত

শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এফবিসিসিআই সভাপতি

নতুন মূল্য সংযোজন কর—মূসক বা ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ককর আইন নিয়ে ব্যবসায়ীদের মতো সাধারণ মানুষের মনেও শঙ্কা আছে বলে মনে করেন ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র সদ্য নির্বাচিত সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। আসন্ন বাজেটে ভ্যাটের হার ১০ শতাংশ নির্ধারণের দাবি জানিয়ে তিনি বলেছেন, এমন কিছু করা উচিত হবে না, যাতে ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ হয়। ৯৯ শতাংশ ভালো ব্যবসায়ীর মনে আস্থায় ফাটল ধরলে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট সামনে রেখে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। তার মতে, নতুন আইন নিয়ে মানুষের মনে শঙ্কা আছে। অনেকেই মনে করছেন, নতুন ভ্যাট আইনের কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। এর উত্তর এনবিআরের কাছে থাকতে হবে। ভ্যাট নিয়ে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, ভ্যাটের হার ১০ শতাংশের মধ্যে থাকা উচিত। এতে ভ্যাটের আদায় কমবে না, যদি আওতা বা পরিধি বাড়ানো যায়। তবে অত্যন্ত দুঃখজনক হলো— দেশের ৮ লাখ ৪০ হাজার প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন থাকলেও, ভ্যাট দেয় মাত্র ৩২ হাজার প্রতিষ্ঠান। এনবিআরের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। তার মতে, ইসিআর ও পিএসও মেশিনগুলো যাতে সবার কাছে পৌঁছায়। ঠিকমতো প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়টিও এনবিআরকে নিশ্চিত করতে হবে। এনবিআরের এমন কিছু করা উচিত হবে না, যাতে ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ হয়। উদ্দীপনার জন্য এনবিআরকে কাজ করতে হবে। যাতে ব্যবসায়ীদের মাঝে ভয়ভীতি কাজ না করে। অর্থনীতি এগিয়ে নেওয়ার জন্য সবাইকে আত্মবিশ্বাসী করে আমাদের কাজ করা উচিত। প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়গুলোতে একটি সুন্দর সিদ্ধান্তের মাধ্যমে শঙ্কাগুলো দূর করবেন, এটা আমার বিশ্বাস।

নতুন ভ্যাট আইন চাপিয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, আমলাতন্ত্রের কাজ হলো— রাজনৈতিক নির্দেশনা কার্যকর করা। সে কারণে আমাদের মনে হয়, রাজনীতিবিদরা ভোটের কারণে সাধারণ মানুষের কাছে যান। তাই তাদের স্বচ্ছতাও পরিষ্কার হওয়া চাই। প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়গুলো বিবেচনা করবেন। নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের আগে এর প্রভাব নিয়েও একটা জরিপ হওয়া দরকার। কারণ আমরা ব্যবসায়ীরা ভ্যাট সংগ্রহ করি, আর ভ্যাট দেন ভোক্তা সাধারণ। এফবিসিসিআই সভাপতি আরও বলেন, নতুন অর্থবছরের বাজেটের জন্য সব খাত থেকেই সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা সরকারকে দেওয়া হয়েছে। এফবিসিসিআইও সব প্রস্তাব একত্রিত করে এনবিআরকে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু প্রস্তাবনা আছে। মূল প্রস্তাব হলো— কর ও ভ্যাটের আওতা বাড়ুক। কিন্তু হার বাড়ানো যাবে না। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি—এডিপি ও রাজস্ব আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করব, তা যেন বাস্তব সম্মত হয়। লক্ষ্যমাত্রা যেন অর্জন করা যায়। সংশোধন যাতে না করতে হয়। এবারের বাজেটে মূল চ্যালেঞ্জ অবকাঠামো সমস্যা সমাধান উল্লেখ করে তিনি বলেন, শ্রমবাজারে রেমিট্যান্স কমে গেছে। আগের চেয়ে বেশি লোক পাঠানোর পরও রেমিট্যান্স কমেছে। এটা অবৈধভাবে রেমিট্যান্স আসার কারণে নাকি মধ্যপ্রাচ্যে তেলের দাম কমে যাওয়ার কারণে। এ জন্য গবেষণা জরুরি।

রপ্তানি ও প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার একটা চ্যালেঞ্জ চলমান আছে উল্লেখ করে শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, আট বছরে আমরা কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখিনি। কিন্তু হঠাৎ করে হাওরে একটা বিপর্যয় হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে জ্বালানি সংকট সমাধানে সরকার কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার এলএনজি ও এলপিজির ব্যবস্থা করছেন। যাতে নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্যাসের সরবরাহ দেওয়া যায়। সরকার ১৫ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সমর্থ হলেও, বিতরণ ব্যবস্থা দ্রুত করা দরকার। এটা সম্ভব হলে প্রত্যাশিত উন্নয়নের ধারা ধরে রাখতে পারি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর