মঙ্গলবার, ৩০ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

সাজা শেষ তবু ৯৮ বিদেশি জেলে

মাদক, জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে আটক, মামলা অনুপ্রবেশের

মাহবুব মমতাজী

সাজা শেষ তবু ৯৮ বিদেশি জেলে

সাজার মেয়াদ শেষ হলেও এখনো মুক্তি মেলেনি ৯৮ জন বিদেশি বন্দীর। তারা দেশের বিভিন্ন কারাগারে বন্দী রয়েছেন। এর মধ্যে ৮০ জনের সাজার মেয়াদ শেষ হয়েছে দুই বছরের বেশি সময় আগে। এরা বিভিন্ন সময় মাদকের চোরাচালান, প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে আটক হয়েছিলেন। পরে তাদের বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের মামলা দেওয়া হয়। আদালতের মাধ্যমে পরে এদের কারও কারও সাজা দেওয়া হয় ছয় মাস, কারও বা সর্বোচ্চ দুই বছর। কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংশ্লিষ্ট দূতাবাস তাদের নাগরিকদের ফেরত না নেওয়ায় এসব বন্দীকে মুক্তি দেওয়া যাচ্ছে না। এজন্য তাদের সাজার মেয়াদ শেষ হলেও কারাগারের ভিতরেই রাখতে হচ্ছে।

কারা অধিদফতর সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত মোট ৯৮ জন বিদেশি নাগরিকের সাজার মেয়াদ শেষ হলেও তারা মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভারতের ৭৬ জন। এ ছাড়া রয়েছেন আলজেরিয়ার ৮, ক্যামেরুনের ৬, তানজানিয়ার ৩, নাইজেরিয়ার ২, ঘানার ২ ও মিয়ানমারের ১ জন। আর সাজা শেষ হয়নি এমন বন্দীর সংখ্যা ৫২। এর মধ্যে ভারতের ২১, মিয়ানমারের ২০, পাকিস্তানের ৮, তানজানিয়ার ২ ও মালয়েশিয়ার ১ জন। হাজতি হিসেবে বন্দী আছেন মোট ৪১৫ জন। এর মধ্যে ভারতের ৫২, মিয়ানমারের ৩০৮, পাকিস্তানের ২৯, থাইল্যান্ডের ৭, নাইজেরিয়ার ৫, মালয়েশিয়ার ৫, পেরুর ৩ জন ছাড়াও আলজেরিয়া, তানজানিয়া, চীন, স্পেন, জার্মানি ও ঘানার ১ জন করে নাগরিক রয়েছেন। সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) আবদুল্লাহ আল মামুন এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আমরা সংশ্লিষ্ট দূতাবাসগুলোকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিই। পরে তারা যদি তাদের নাগরিকদের স্বীকৃতি দিয়ে না নিয়ে যায়, তাহলে মুক্তি দেওয়ার সুযোগ থাকে না।’ অভিযোগ রয়েছে, সাজার মেয়াদ শেষ হলেও আইনি জটিলতায় পড়ে নিজ দেশে ফিরতে পারছেন না এই বিদেশিরা। এমনকি কারাগারে আটক বিদেশি কোনো নাগরিকের মৃত্যু হলেও তার লাশটি পর্যন্ত ফেরত দেওয়া যাচ্ছে না। বেশির ভাগ দূতাবাস এসব বন্দীর নাগরিকত্ব অস্বীকার করায় দেখা দিয়েছে এই জটিলতা। সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ায় কারা কর্তৃপক্ষ বন্দীদের না পারছে রাখতে, না পারছে ছেড়ে দিতে। সব মিলিয়ে ভিনদেশি এসব বন্দীকে নিয়ে বিপাকে পড়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিদেশি বন্দীর বেশির ভাগই কক্সবাজার, কুমিল্লা, বান্দরবান, ঢাকা, কাশিমপুর, চট্টগ্রাম, বরিশাল, যশোর ও খুলনা কারাগারে আটক রয়েছেন। আইন প্রয়োগকারী সদস্যদের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। কারাগারে পাঠানোর পরই কারা কর্তৃপক্ষ এসব বিদেশি নাগরিকের ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে। সাজা হওয়ার পরও কারা কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে তা অবহিত করে। সাজা শেষে বন্দীরা যাতে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারেন সেজন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আটক বন্দীদের নিজ নিজ দেশের ঢাকার দূতাবাসের সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দেয়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায় না। এদিকে আটক বন্দীর বেশির ভাগেরই বৈধ কাগজপত্র না থাকায় বিপাকে পড়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।

সর্বশেষ খবর