সোমবার, ১২ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

জমেছে মিরপুরের বুটিকপাড়া

জিন্নাতুন নূর

জমেছে মিরপুরের বুটিকপাড়া

মিরপুরবাসী ঈদের কেনাকাটা সারতে এখন আর দূরে কোথাও যান না। কারণ মিরপুরেই এখন নামিদামি সব বুটিক হাউস তাদের শাখা খুলে বসেছে। সব শ্রেণি-পেশার ক্রেতার চাহিদা মেটাতে বুটিক হাউসের পাশাপাশি মিরপুরে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি শপিং কমপ্লেক্সও। কমপ্লেক্সের মধ্যে আছে শাহ আলী প্লাজা, মুক্ত বাংলা শপিং কমপ্লেক্স, রেড ক্রিসেন্ট সিটি ও ক্যাপিটাল টাওয়ার। আর তরুণ প্রজন্মের ক্রেতার জন্য লাইফস্টাইল স্টোরের মধ্যে আছে ‘আড়ং’, ‘আম্বার’, ‘এক্সটাসি’, ‘লা রিভ’, ‘টেক্সমার্ট’ ও ‘স্মাটেক্স’ ইত্যাদির শোরুম। এ জন্য যানজট ও ঝামেলা এড়াতে মিরপুরের শ্যাওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, মিরপুর-১, ২, ১০, ১১, ১২, ১৩ নম্বর, রূপনগর এবং পল্লবী এলাকার বাসিন্দারা এখন মিরপুরের বুটিকপাড়াতেই ঈদের কেনাকাটা সারছেন। বিক্রেতারা জানান, ঈদের বেচাবিক্রি শুরু হলেও ২০ রোজার পর থেকে বিক্রি পুরোদমে জমে উঠবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বুটিক পাড়া এখন ক্রেতা আগমনে সরগরম। বিভিন্ন বয়সী ক্রেতার পোশাকের পাশাপাশি এখানে জুতা, ঘর সাজানোর সামগ্রী এবং অলঙ্কার পাওয়া যাচ্ছে। একসঙ্গে দেশি-বিদেশি পোশাকের সমাহার থাকায় শিশু, তরুণ-তরুণী ও মধ্যবয়সী ক্রেতারা এই বুটিক পাড়া থেকে নিজেদের পছন্দমতো পোশাক ক্রয়ের সুযোগ পাচ্ছেন। এমনকি ফুটপাথের ওপরে বসা অস্থায়ী দোকান থেকেও একটু বাছাই ও দরদাম করে ঈদের কেনাকাটা সারছেন নিম্ন আয়ের ক্রেতারা। গতকাল সরেজমিনে মিরপুরের বুটিকপাড়া ঘুরে দেখা গেছে, অরজিনাল ১০ নম্বর থেকে শুরু করে ১০ নম্বর গোল চক্কর হয়ে মিরপুর ১ নম্বর পর্যন্ত একশর বেশি বুটিক হাউস ও ফ্যাশন হাউসে ঈদ উপলক্ষে নতুন পোশাক আনা হয়েছে। দেশি পোশাকের জন্য ক্রেতাদের অনেকেই ‘নায়রী’-তে ভিড় করছেন। এখানে ব্লক, স্ক্রিন প্রিন্ট, অ্যামব্রয়ডারি কাজের শাড়ি ও সালোয়ার-কামিজ পাওয়া যাচ্ছে। আরও আছে পাঞ্জাবি ও কিডস আইটেম। এ ছাড়া দেশি ফ্যাশন হাউসের মধ্যে মিরপুর-২ নম্বর এলাকায় অবস্থিত ‘কে-ক্রাফট’, ‘নবরূপা’ ও ‘বাংলার মেলা’তেও ছিল লক্ষ্যণীয় ক্রেতার উপস্থিতি। বিশেষ করে ক্রেতারা এসব জায়গায় শাড়ি, সুতির সালোয়ার-কামিজ, পাঞ্জাবি ও ঘর সাজানোর সামগ্রী কিনতে বেশি ভিড় করছিলেন। কে-ক্রাফট’র এক বিক্রয় প্রতিনিধি জানান, আগের তুলনায় মিরপুরে জনবসতি বেড়েছে। চাহিদা থাকায় বিক্রেতাদের অনেকেই এখন মিরপুরে বুটিকের দোকান দিচ্ছেন। আর ঘরের কাছে ভালোমানের পোশাক পেয়ে মিরপুরের বাসিন্দারা এখন দূরে না গিয়ে ঘরের কাছেই ঈদের কেনাকাটা সারছেন। এতে পরিশ্রম যেমন কম হচ্ছে, তেমনই ক্রেতাদের সময়ও বেচে যাচ্ছে। সনি সিনেমা হলের বিপরীতে অবস্থিত রেড ক্রিসেন্ট সিটিতে আছে বেশ কয়েকটি ফ্যাশন হাউস। এর মধ্যে অন্যতম ফ্যাশন হাউস ‘আড়ং’। রুচিশীল ক্রেতার কাছে বরাবরই ঈদের কেনাকাটার জন্য আড়ং-এর পোশাক পছন্দের তালিকার শীর্ষে। আড়ং-এ গিয়ে গতকাল ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। আড়ংয়ের কর্মীরা জানান, ঈদের জন্য আনা আড়ংয়ের পোশাকগুলো দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। তারা ক্রেতা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। চাহিদা এতই বেশি যে— অনেক ক্রেতাই পছন্দের পোশাকটির সাইজ না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করছেন। পল্লবী থেকে আড়ং-এ আসা এক ক্রেতা নাজনীন হক জানান, আগে আড়ং-এর পোশাক কিনতে স্বামীকে নিয়ে আসাদ গেটে যেতে হতো। এখন মিরপুর থেকে তিনি একাই নিজের পরিবারের জন্য কেনাকাটা করেন। ঈদ উপলক্ষে তরুণীদের জন্য আড়ংয়ের টাগা সেকশনে হাতের কাজ করা কোটি, লম্বা কোট, ফতুয়া, রঙিন প্ল্যান্ট ও স্কার্ট আনা হয়েছে। নারীদের জন্য নকশি কাঁথা শাড়ি, মসলিন ও সুতির শাড়ি আনা হয়েছে। এ ছাড়া মেয়েদের জন্য লম্বা ভারী কাজের লম্বা ছাটের সালোয়ার কামিজ আনা হয়েছে। তরুণ-তরুণীদের কাছে ফ্যাশন হাউস ‘লা রিভ’-এর পোশাক বেশ পছন্দের। পাশ্চাত্য ঘরানার পোশাকের খোঁজে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদেরকে লা রিভে ভিড় করতে দেখা যায়। এ সময় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মাইসা ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ঈদের ২য় দিনে বন্ধুরা মিলে ঢাকার বাইরে যাব।

এ জন্য জিন্স ও টপস কিনতে লা-রিভে এসেছি।’ এর বাইরে মিরপুর বুটিক পাড়ায় অন্যান্য দোকানের মধ্যে ‘আবর্তন’, ‘জেন্টেল পার্ক,’ ‘চন্দ্রবিন্দু’, ‘স্মার্টেক্স’, ‘গ্রামীণ চেক’, ‘অঞ্জনস’, ‘সিলভার রেইন’, ‘স্টাইল ওয়ার্ল্ড’ এবং ‘গাঁও-গেরাম’-এ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। ঈদের কেনাকাটার জন্য মিরপুর ফায়ার সার্ভিসের বিপরীতে বেশ কয়েকটি জুতার দোকানেও ভালো ভিড় দেখা গেছে। ছেলেদের বিভিন্ন জুতার দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার ঈদে লোফার, স্নিকার ও সু স্যান্ডেলের চাহিদা বেশি। আর মেয়েদের জুতার মধ্যে হিল, ব্যালেরিনো, পাম্প সু ও স্লিপার ইত্যাদি বেশি চলছে।

সর্বশেষ খবর