সোমবার, ১২ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা
আগুনে জ্বলছে সুন্দরবন

বন রক্ষায় এক বছরেও হয়নি কাঁটাতারের বেড়া

শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট

বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জের জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা, অরণ্যে আগুন ও দস্যুতা ঠেকাতে কাঁটাতারের বেড়া ও ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ এক বছরেও শুরু হয়নি। একই সঙ্গে  সুন্দরবনের এই দুটি রেঞ্জের ভরাট হয়ে যাওয়া খালসহ মিঠাপানির মাছের খনিখ্যাত ছোট-বড় ৩৫টি বিলে একাধিক পুকুর খননের নেই কোনো উদ্যোগ। গত বছর মাত্র এক মাসের মধ্যে চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের গহিন অরণ্য নাশকতার আগুনে পুড়ে ছাই হয়। এরপর পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এবং তৎকালীন প্রধান বন সংরক্ষক মো. ইউনুস আলী সুন্দরবনে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এসব কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন। কিন্তু আজও ওইসব প্রকল্প অনুমোদন পায়নি। সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় জরুরি এসব প্রকল্প এখনো ফাইলবন্দী হয়ে পড়ে রয়েছে। এ অবস্থায় বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের নাংলীর মাদ্রাসার ছিলা এলাকায় ২৬ মে সকালে আবারও নাশকতার আগুনে পুড়ে ছাই হয় সুন্দরবন। এবার তিন দিন ধরে আগুনে পুড়ে যায় বনের সাড়ে চার একর এলাকা। পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, বাগেরহাটের শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ ও মংলা উপজেলার বন সন্নিহিত এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া, ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ ও ৩৫ বিলে একাধিক পুকুর খনন প্রকল্প গত এক বছরেও অনুমোদন পায়নি। খোদ পরিবেশ ও বনমন্ত্রী এবং তৎকালীন প্রধান বন সংরক্ষকের নির্দেশিত এসব প্রকল্পের মধ্যে ছিল চাঁদপাই রেঞ্জের বৈদ্যমারীর লোকালয় থেকে শুরু করে কাটাখালী, বরুইতলা, জিউধরা, আমুরবুনিয়া, গুলিশাখালী, কলমতেজী ও ধানসাগর স্টেশন থেকে নাংলী টহল ফাঁড়ি পর্যন্ত ওয়াচ টাওয়ারসহ কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ। একই সঙ্গে চাঁদপাই রেঞ্জে পরিকল্পিতভাবে আগুন ধরিয়ে দিয়ে অবৈধ উপায়ে মিঠাপানির মাছ চাষ ও আহরণ চিরতরে বন্ধে ছোট-বড় ২৩টি বিলের প্রতিটিতে এক বা একাধিক পুকুর খনন। খনন করা পুকুরের মাটি দিয়ে অবশিষ্ট বিল ভরাট করে সেখানে ম্যানগ্রোভ প্রজাতির বনায়ন করা। সর্বশেষ চলতি বছর ২৬ মে চাঁদপাই রেঞ্জের নাংলীর মাদ্রাসার ছিলা এলাকায় নাশকতার আগুনে পুড়ে ছাই হয় সুন্দরবন। এবার তিন দিন ধরে আগুনে পুড়ে যায় সাড়ে চার একর বন। এ নিয়ে ১৫ বছরে ২৩টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বন সন্নিহিত লোকালয়জুড়ে কাঁটাতারের বেড়া ও ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। তবে এখনো তা আলোর মুখ দেখেনি। বাগেরহাটের শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলায় বন সন্নিহিত চার ইউপি চেয়ারম্যানসহ বাঘ জাকির, বাঘ মিলন, জাল মাসুম, জিয়ল সগির, ডিলার মিলন, সুমন মেম্বার, কবির তালুকদার ও শাহজাহান হাওলাদার ওরফে শাহজাহান শিকারির মতো শাসকদলের প্রভাবশালীরা অসাধু বন কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে কথিত ইজারার নামে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জের ৩৫টি বিলের কৈ, শিং, মাগুর, কানমাগুর, ফলিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মিঠাপানির মাছ চাষ ও আহরণ করে থাকেন। এ জন্য শুষ্ক মৌসুমে বিল ও জাল পাতার স্থান পরিষ্কার করতে তারা পরিকল্পিতভাবে সুন্দরবনে আগুন ধরিয়ে দেয়।

সর্বশেষ খবর