রবিবার, ২৫ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

রাজধানীতে কঠোর নিরাপত্তাবলয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাজধানীতে ব্যাপক নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করা হয়েছে। পুলিশ, র‍্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার বিপুল সংখ্যক সদস্যের সমন্বয়ে গড়ে তোলা হয়েছে এই নিরাপত্তাবলয়। এ সংক্রান্তে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের বিশেষ নির্দেশনা ইতিমধ্যেই পৌঁছে গেছে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে। একই অবস্থা র‍্যাবের ক্ষেত্রেও।

যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সর্তক অবস্থায় থাকবে। নেওয়া হয়েছে বাড়তি নজরদারিও। থাকবে চেকপোস্ট। সন্দেহভাজন ব্যক্তি, গাড়ি, ব্যাগ মেটাল ডিটেকটর, ভেহিক্যাল স্ক্যানার ও ম্যানুয়াল চেকিংয়ের মাধ্যমে তল্লাশি করা হবে। থাকবে কয়েকস্তরের নিরাপত্তা বলয়।

রাজধানীতে পুলিশের আটটি বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার এবং র‍্যাবের পাঁচটি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক নিজ নিজ এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি তদারকি করবেন। পোশাকধারী ছাড়াও সাদা পোশাকের পুলিশ ও র‍্যাব সদস্যরা মাঠে থাকবে। ঢাকা মহানগরীর সবকটি প্রবেশ ও বহির্গমন পথে বাড়তি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। পুলিশ-র‍্যাব সূত্র বলছে, কূটনৈতিক ও মতিঝিল ব্যাংক পাড়ায় পুলিশের বাড়তি নজরদারি থাকছে। বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে গুলশান ও বারিধারার সব দূতাবাস এবং সংলগ্ন সড়কে থাকছে বাড়তি গোয়েন্দা নজরদারি। তবে ঈদের আগের দিন ও ঈদের দিন বাড়তি পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে। জাতীয় ঈদগাহ মাঠে স্থাপন করা হবে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। ঈদগাহ ময়দানের এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নিরাপত্তা আর্চওয়ে এবং পুলিশ চৌকি থাকবে। একই সঙ্গে ডগ স্কোয়াড, বোম্বে ডিসপোজাল ইউনিট, স্ট্রাইকিং ফোর্স, পুলিশের বিশেষ টিম সোয়াত, মোটরসাইকেলে টহল, ফুট পেট্রোল, অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক চেকপোস্ট ও তল্লাশি চৌকি থাকছে গোটা রাজধানীজুড়ে। ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন মার্কেট, বিপণিবিতান, কাঁচাবাজার, আড়তের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে স্পর্শকাতর স্থান, সড়ক, স্থাপনা, মার্কেট, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, লঞ্চ টার্মিনালে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‍্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। ডাকাত, ছিনতাইকারী ও অজ্ঞান পার্টিদের ধরতে পুলিশ ও র‍্যাবের বিশেষ টিম মাঠে সক্রিয় রয়েছে।

ঈদের নিরাপত্তা নিয়ে ডিএমপিতে ইতিমধ্যে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে ডিএমপির আটটি ক্রাইম ডিভিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ডিএমপির কমিশনারের নির্দেশে প্রতিটি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। জানা গেছে, ঈদের ছুটিতে মহানগরীর প্রত্যেকটি এলাকায় সংশ্লিষ্ট থানার একজন এসআই নেতৃত্বে পুলিশ পালা করে টহল কার্যক্রম পরিচালনা করবে। তাদের সহযোগিতা করবে টহল ও সাদা পোশাকের পুলিশ। বিভিন্ন বিপণিবিতানের নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে সমন্বয় করে সেসব জায়গায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হবে।

এ ছাড়া ছিনতাই, ডাকাতি ও চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধ ঠেকাতে রাতের বেলায় বাড়ানো হবে পুলিশি টহল। নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে বিভিন্ন বাস ও রেল স্টেশনে। পুরান ঢাকা ছাড়াও মহানগরীর বিভিন্ন এলাকার জুয়েলারি মার্কেটে থাকবে পুলিশের কড়া নজরদারি। বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত ফোর্স থাকবে। সাদাপোশাকেও নজরদারি থাকবে বিনোদন কেন্দ্রে। নিরাপত্তায় নিয়োজিত কর্মকর্তারা জানান, প্রতিবছর দুটি ঈদে অসংখ্য মানুষ ঢাকা ত্যাগ করেন। এর ফলে ঈদের ছুটিতে রাজধানী অনেকটা ফাঁকা হয়ে যায়। বাসাবাড়ি ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় চুরিও বাড়ে। রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকায় ছিনতাইকারীরা তত্পর হয়। তাই ঈদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত মার্কেট কেন্দ্রিক বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। ঈদের দিন ঈদগাহ কেন্দ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানান, রাজধানীতে সার্বিকভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। চেকপোস্ট, প্যাট্রল, গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোসহ আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পিকআপ, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে টহল থাকবে। ঈদে যারা বাড়িতে যাবে তারা ফিরে না আসা পর্যন্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে। বিশেষ করে আর্থিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এবং শপিং মলের দিকে নজরদারি বেশি থাববে। বরাবরের মতো রাজধানীসহ সারা দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সদা তত্পর থাকবে র‍্যাব সদস্যরা। ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মো. মাসুদুর রহমান জানান, ঈদকে কেন্দ্র করে পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য রাজধানীতে মোতায়েন থাকবে। নাড়ির টানে ঘরে ফেরা ও ঈদের পর ঢাকায় ফেরা মানুষের নিরাপত্তা নির্বিঘ্ন করতে ডিএমপির পক্ষ থেকে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশের টহল থাকবে। থাকবে চেকপোস্ট। অন্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে নগরবাসীর নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।

সর্বশেষ খবর