রবিবার, ২৫ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

সম্মিলিত জাতীয় জোটকে চাঙ্গা করবেন এরশাদ

ঈদের পরের রাজনীতি

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

ঈদের পর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তার নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোট (ইউএনএ)-কে চাঙ্গা করবেন। জোটকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে একের পর এক কর্মসূচি হাতে নেবেন এবং পাশাপাশি জোটগতভাবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে ঈদের পর প্রার্থী তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু করবেন সাবেক এ রাষ্ট্রপতি। এদিকে ইসলামী দলগুলোও জাতীয় নির্বাচনের জন্য ঈদের পর থেকে সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করবে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের বাইরে থাকা শক্তিশালী চারটি ইসলামী দল জোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। আর বিএনপির সঙ্গে থাকা অবশিষ্ট ইসলামী দলগুলোও সে জোটে থাকবে কিনা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে ঈদের পর। জোটকে চাঙ্গা করবেন এরশাদ : জানতে চাইলে পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ইউএনএ জোটকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে ঈদের পরই চূড়ান্ত হবে কর্মসূচি। তিনি বলেন, আমরা ইউএনএ জোটের ব্যানারে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেব। আমাদের সবকিছুই আগামী জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে। তিনি বলেন, রোজার মাসে মূলত জনসংযোগ এবং ইফতার পার্টিভিত্তিক রাজনৈতিক তত্পরতা চলেছে। এ মাসে ইফতার পার্টি ছাড়া বড় ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল না। আমরা ঈদের পর চূড়ান্তভাবে মাঠে নামব।

জানা যায়, জোটগতভাবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে ঈদের পর প্রার্থী তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু করবে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোট (ইউএনএ)। সেই তালিকা যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত করে জোটের প্রধান লিয়াজোঁ কমিটি ও জোটের চেয়ারম্যান এরশাদের কাছে জমা দেবেন। হেফাজতে ইসলামকে জোটে যুক্ত করার বিষয়ে চেষ্টা চলবে। নেতারা আশা করছেন, তারা হেফাজতের সমর্থন আদায় করতে পারবেন। কারণ হেফাজতে ইসলাম যখন ঢাকার মতিঝিলে সমাবেশ করেছিল তাদের পাশে এরশাদ ছিলেন। তিনি পানি বিতরণ করেছেন। মাওলানা আহমদ শফীর সঙ্গে এইচ এম এরশাদও কয়েক দফা কথা বলেছেন।

এ ব্যাপারে সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, পবিত্র রমজান মাসে মিছিল-মিটিং করে রাজনীতি করা যায় না। তাই আমরা ইফতার পার্টির মাধ্যমে সংগঠনকে আরও গতিশীল করার চেষ্টা করেছি। এজন্য ঢাকা দক্ষিণের পক্ষ থেকে অর্ধশতাধিক ইফতার পার্টির আয়োজন হয়। এ ইফতার পার্টিতে আমরা আমাদের দলের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি সব রাজনৈতিক দল, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। ঈদের পর আমরা জাতীয় নির্বাচনের জন্য সব প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামব।

বিএনএ জোটের সমন্বয়ক সেকেন্দার আলী মনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য একটাই, জোটকে শক্তিশালী করা। আমরা  জোট গঠনের পর পরই রমজান মাস চলে আসায় সারা দেশে জোটের ব্যানারে কর্মসূচি দিতে পারিনি। ঈদের পর আমরা পুরো শক্তি নিয়ে মাঠে নামব। তিনি বলেন, রমজান মাসেও আমরা বসে থাকিনি। একের পর এক ইফতার মাহফিল করেছি।  জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য তাজ রহমান বলেন, ‘রমজানে আমরা মাঠে-ময়দানে সভা সমাবেশ করি না। ঘরোয়াভাবে ইফতার মাহফিলে একত্রিত হই। সেখানে সুযোগ করে রাজনৈতিক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা হবে।’

জোটবদ্ধ হচ্ছে সমমনা ইসলামী দলগুলো : ভোটের মাঠে নিজেদের গুরুত্ব বাড়াতে পৃথক একটি নির্বাচনী জোট গঠনেরও চেষ্টা চালাচ্ছে জোটের বাইরে থাকা নিবন্ধিত ইসলামী দলগুলো। দলগুলো হচ্ছে— চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন, মুফতি আমিনী প্রতিষ্ঠিত ইসলামী ঐক্যজোট, হাফেজ্জী হুজুর প্রতিষ্ঠিত খেলাফত আন্দোলন ও শায়খুল হাদিস আজিজুল হক প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস।

ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, আমরা ইসলামকে রাষ্ট্রক্ষমতায় প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এতে যারা রাজি হবে, তাদের সঙ্গে জোট হতে পারে। পৃথক একটি ইসলামী জোট করার চিন্তা আমাদেরও আছে। ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী বলেন, ‘আমরা ইসলামী দলগুলো নিয়ে আলাদা একটি প্লাটফরম তৈরি করতে চাই। জোট না হলেও নির্বাচনী সমঝোতা গড়ে তোলার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এতে ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলনসহ ইসলামী ও সমমনা বেশকিছু দলকে যুক্ত করার কথাবার্তা চলছে। তবে এখনো চূড়ান্ত কিছুই হয়নি। এ ছাড়া পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী এককভাবে ইসলামী ঐক্যজোটের পক্ষ থেকে সব আসনেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপি জোট থেকে বেরিয়ে এলেও এখনো ওই জোট থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। একইভাবে ক্ষমতাসীন জোট থেকেও নানাভাবে যোগাযোগ করা হয়। সমপ্রতি জাতীয় পার্টির জোট গঠনের সময়ও আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।’ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় অফিস ও বায়তুলমাল সম্পাদক মাওলানা আজিজুর রহমান হেলাল বলেন, ‘এরশাদের জোটে আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও আমরা তাতে যাইনি। মহাজোটের পক্ষ থেকেও বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করা হচ্ছে।’ তবে ইসলামী ঐক্যজোটের নেতৃত্বে তাদের দলসহ বড় দুই জোটের বাইরে থাকা নিবন্ধিত তিন ইসলামী দল নিয়ে একটি জোট গঠনের ব্যাপারে আলোচনা চলছে। এই জোটগত নির্বাচন না হলে এককভাবে তারা শতাধিক আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। খেলাফত আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী বলেন, ‘বিএনপি বা মহাজোটে যাওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের নেই। তবে সম্প্রতি ইসলামী ঐক্যজোটের উদ্যোগে একটি ইসলামী জোট গঠনের চেষ্টা চলছে। এতে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।’ তবে জোটগত না হলে এককভাবে অর্ধশতাধিক আসনে খেলাফত আন্দোলন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে মুজিবুর রহমান হামিদী উল্লেখ করেন।

এদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে থেকে সম্প্রতি ইসলামী ঐক্যজোট বের হয়ে গেছে। জানা যায়, ঈদ পরবর্তীতে খেলাফত মজলিস এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলামও ২০ দলীয় জোট থেকে বের হয়ে যেতে পারেন। জানতে চাইলে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এবং ঢাকা মহানগর সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা এখনো ২০ দলীয় জোটে আছি। ঈদের পর ২০ দলীয় নেতাদের সঙ্গে বসব। আমাদের নীতিনির্ধারণী বৈঠকেও আলোচনা হবে। তিনি বলেন, ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে আমাদের বোঝাপড়া রয়েছে।

সর্বশেষ খবর